আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপাল ভ্রমন একবিংশ পর্ব (শেষ পর্ব): দার্জিলিং থেকে ঢাকা

সবার আগে দেশপ্রেম পূর্ব প্রকাশের পর ... নেপাল ভ্রমন শেষ পর্ব ... সকালে ঘুম থেকে উঠে দেশের জন্য মনটা কেঁদে উঠলো। আজই আমরা দেশে যাব তাই মনটা খুবই উতলা। দেশে যাওয়ার জন্য নিজের কিছু প্রস্তুতির কথা চিন্তা করলাম। সেভ করা দরকার। গত দুইমাস হয় সেভ করিনি।

দাড়ি মোছ অসম্ভব রকমের বড় হয়ে উঠেছে। আমাদের একজনের কাছে সেলুনের খোজ নিলাম। ও বলল, সেলুনে যাওয়ার আগে কেচি দিয়ে কিছুট ছোট করে নাও নইলে জঙ্গি মনে করে ভারতের পুলিশের হাতে ধরাইয়া দিবে। আমার কাছেও বিষয়টা অমূলক মনে হয়নি। আর দুদিন বাদে ভারতের স্বাধীনত দিবস, সরকার এমনিতেই কঠোর অবস্থানে আছে।

একটা কেচি দিয়ে হোটেলের রুমে বসেই দাড়ি মোছ কেটে ছোট ছোট করে নিলাম। তার পর রিয়াজকে সাথে নিয়ে চলে গেলাম সেলুনে। সেলুন থেকে রওয়ানা হয়ে কয়েকটা ভারতীয় পত্রিকা কিনে নিলাম। আসার পথে দেখলাম একটা স্কুলে প্যারেড করাচ্ছে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে তা দেখলাম। পাশেই মাউন্টারিয়ান ট্রাকিং ইনস্টিটিউট চোখে চোখে পড়লো।

এক দৌড়ে তাদের রিশিপশনে গিয়ে হাপাতে হাপাতে বললাম, আমি পাহাড় ট্রাকিং করার ট্রেনিং করতে চাই কি করতে হবে বলুন। রিসিপশনিস্ট মেয়েটা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমিও হাবার মতো তাকিয়ে রইলাম মেয়েটির মুখের দিকে। বুঝলাম মেয়েটি বাংলা বুঝেনা। হর হর করে ইংরেজীতে কতক্ষণ কথা বলে প্রোসপেক্টাস নিয়ে বেড়িয়ে এলাম।

এসেই তারাহুরা করে গুছানোর পালা। সবার সব কিছূ গুছানো হয়ে গেছে। আমিও আমার সব কিছু গুছিয়ে প্যান্ট স্যুট টাই পড়ে ওদের সাথে বেড়িয়ে পড়লাম। রাস্তায় বেড়িয়ে শিলিগুড়ি’র একটা মাইক্রোতে শিলিগুড়ি চলে এলাম। শিলিগুড়ি এসে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে গতকাল চলে আসা আমাদের অন্য সবার সাথে দেখা হয়ে গেল।

আমাকে দাড়ি মোছ ফালানো স্যুট টাই পড়া দেখে সবাই অবাক। আরে মিজান ভাই, এই মিজান ভাইকি আমাদের সেই মিজান ভাই? আমি অত্যাধিক গরমের কারণে স্যুট খুলে হাতে নিলাম। শ্যামলী পরিবহনে নাইটের গাড়ি ছাড়া যাবার সুযোগ নেই। তাছাড়া আমাদের কারোই অগ্রীম টিকেট করা নেই। এখান থেকে ভাড়া চাইছে ৮০০/= রুপি (২০০৫সালে)।

অথচ বাংলা দেশ থেকেআপডাউন ভাড়া ছিল ১৬০০/= বাংলাদেশী টাকা। আমরা সবাই সিদ্ধা›ত নিলাম লোকাল বাসে চলে যাবো। শ্যামলী’র কাউন্টার থেকে বের হয়েই রাজু বাঁকা চোখে একটা ছেলেকে দেখালো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে? ও বলল, কাকর ভিটার হোটেলে যে ছেলেটার কথা বলছিলাম একটা মেয়েকে নিয়ে আসছিল সেই ছেলেটা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েটার খবর কি? ও বলল, মেয়েটা ওরে রাইখা যেই ছেলেটার সাথে রাত কাটাইছিল তার সাথে ভাইগা গেছে।

আমরা সবাই মেইন রোডে গিয়ে জলপাইগুরির বাসে উঠলাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই জলপাইগুরি চলে এলাম। আমার দুপুরের ভাত খেলাম জলপাইগুড়িতে। সেখান থেকে যার যার মতো রিক্সা নিয়ে বর্ডার বাংলাবান্দা বুড়িমারি চলে এলাম। দরদাম করার যতটুকু সুযোগ পেলাম ততটুকু দরদাম করে এবং প্রায় প্রতিদিনই ইন্ডিয়া আসি এইসব বলে ডলার ও ইন্ডিয়ান রুপি ভাঙ্গিয়ে বাংলাদেশী টাকা নিয়ে নিলাম।

এরপর ইমিগ্রেশন কাস্টম এ ব্যাগ পাসপোর্ট দেখাতে গিয়ে আমার ব্যাগের ইন্ডিয়ান পত্রিকা, নেপালী পত্রিকা সব রেখে দিল। বলল, এইসব বাংলাদেশে নেওয়া নিষেধ। অনেক অনুরোদ করলাম যে আমাদের একটা পাঠাগারে দেখানোর জন্য এই পত্রিকা গুলো খুবই প্রয়োজন। কিছুতেই কিছু হলো না। পাসপোর্টের ছবি নিয়ে পড়লাম আরেক ঝামেলায়।

পাসপোর্টের ছবিতে মোছ আছে কিন্তু আমার সব দাড়ি মোছ সেই দার্জিলিং এ রেখে এসেছি। রাজু ওর ব্যাগ প্রায় চেকই করতে দেয়নি। ওর ব্যাগ চেক করলে নির্ঘাত ও ফেসে যেত কারণ ওর ব্যাগে কয়েকটা ছুড়ি ছিল। ও ঝটপট নিজের হাতে ব্যাগ গুলো দেখালো তার পর যে টাকা চায়না তাকেও ১০০/= টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে চলে আসে। আমি তো কোন টাকা পয়সা দেবনা নাছোর বান্দা তারা সবাই আমাকে চিনে ফেললো।

কিন্তু রাজুদের সাথে একসাথে আসার জন্য ইমিগ্রেশনে ৫০/= টাকা দিতেই হলো। বাংলাদেশ অংশে আমি কোন টাকা পয়সা দিলামনা সেই পুরানো ক্যাচাল স্টুডেন্ট কাগজ পত্র ছাড়া ১টাকাও দেবনা। সবাই মেনে নিল। বাংলাদেশে ঢুকতেই মনে হলো অনাবিল শান্তি। একহাতে কবজিতে কোটটি ধরে অন্য হাতে লাগেজটা টানতে টানতে বাস কাউন্টারে চলে এলাম।

এখানে অনেকগুলো বাস সার্ভিস রয়েছে যে গুলো গাবতলী যাবে ভাড়া মাত্র ২৫০/=টাকা তৎকালিন। আমরা সিট বাছাই করে করে ১০টা সিট নিয়ে নিলাম। এর পর অপেক্ষার পালা। বাস কাউন্টারের পাশেই একটা পুকুরের মতো ডোবা যেখানে অল্প কিছু লোকজন গোছল করছিল। আমাদের লোভ মানাতে পারছিলামনা।

তার উপরে অনেক গরম। রাজুকে বললাম, চলো গোছল করি। ব্যাগ থেকে তোয়ালে বের করতে করতেই দেখলাম আমাদের সবাই একই কাজ করছে। প্রায় একযোগে সবাই সেই পুকুরটিতে ঝাপিয়ে পরলাম। অনেকক্ষণ মনের সুখে পানিতে ডোবালাম।

পুকুরের মাঝে দাড়িয়ে গায়ে সাবান মাখালাম। সাবান মাখতে মাখতে হাত থেকে পোখারা থেকে কেনা আংটিটা পানিতে পরে গেল। সবাই মিলে কিছুক্ষণ ডোবাতে ডোবাতে আংটিটা খোজার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তা আর পাওয়া গেলনা। বললাম, কেন যে আংটিটা পোখারায় স্বরসতিকে দিয়ে আসলাম না।

পুকুর থেকে উঠে গা মাথা মুছতে মুছতে গান শুরু করে দিলাম, আমি কেমন করে পত্র লিখিরে বন্ধু ................. তোমায় আমি হলাম অচেনা। গাড়ির কাউন্টারে সকলের ব্যাগ গুছিয়ে রেখে সবাই মিলে নাস্তা করে নিলাম। সন্ধ্যার পর এদিক সেদিক ঘুরছিলাম। রিয়াজকে বললাম, চলনা পাট গ্রাম থেকে ঘুরে আসি। আমার কয়েকজন বন্ধু আছে দেখা করে আসি।

রাজু বলল, সময় হবেনা। দেখতে দেখতে গাড়ী লাইনে দাড়িয়ে গেল। আমরা যার মালপত্র গাড়ীতে উঠালাম। রাত আটটায় গাড়ী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। রাত ১১টার দিকে গাড়ী একটা হাইওয়ে হোটেলের সামনে নিয়ে গেল।

আমরা সবাই মিলে শেষ ফুর্তিটা ওই হোটেলটাতেই করলাম। মজা করে খেলাম। যে যা বিল মিটিয়ে গাড়ীতে উঠলাম। গাড়ীতে আমার ছিটে বসতেই ছিদ্দিক এসে পাশে দাড়ালো বলল, আবার কখনো দেখা হয়কিনা জানিনা। তোমার একটা ছবি ওয়াশ করাইছি এই নাও।

আর এই নাও আরেকটা এইখানে আমাদের কয়েকজনের ছবি আছে। মনে পড়লেই তো এইটাই সম্বল। গাড়ি ছেড়ে দিল। মনের মধ্যে বিদায়ের সুর মেখে ঘুমিয়ে পড়লাম বা ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। গাড়ী ভোর রাতে গাবতলি এসে পৌছলো।

আমরা গাড়ীতেই আরও কিছুক্ষণ ঘুমাতে চাইলাম। কিন্তু কারো কারো মন মানছিল না। কতো দ্রুত যাওয়া যায় প্রিয়জনের কাছে। সেই প্রতিযোগীতায় আমিই শুধু হেড়ে গেলাম। একা একা গাড়ীতে ঘুমালাম সকাল সাতটা পর্যন্ত।

তার পর গাড়ীর কাউন্টারে ফ্রেস হয়ে কোন একাটা হোটেলের সন্ধান করছি .... হয়তো সেখানে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আবার কোন ঘোরাঘুরির পথে নেমে পড়বো। কারণ আমার তো কোন প্রিয় জন নেই। \ সমাপ্ত \ প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব ষষ্ট পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব একাদশ পর্ব দ্বাদশ পর্ব ত্রয়োদশ পর্ব চতুর্দশ পর্ব পঞ্চদশ পর্ব ষষ্ঠদশ পর্ব সপ্তদশ পর্ব অষ্টদশ পর্ব উনবিংশ পর্ব বিংশ পর্ব ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।