আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

...।। … বাবা আর আমি ঃ মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ ! … ।।...

''' কারাগারে দ্বারি গেলে তখনই কি মুক্তি মেলে আপনি তুমি ভিতর থেকে চেপে আছো যার দারখান ! '' . নজরুলের মতো এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী । রবীন্দ্রনাথের মত আমিও এই বিষয়ে সচেতন যে , '' বোঝা যায় আধো প্রেম , আধখানি প্রেম সম্পুর্ন তার কে বুঝেছে কখন ! '' -- তাই সব সেই ছোট্ট বেলা থেকে , আমি যখন চাইতাম দুপুরের রোদ্রে লাফিয়ে বেড়াতে আর বাবা চাইতো ভালো ছেলেটি হয়ে আমি ঘুমিয়ে থাকি বিছানায় ! দুরন্ত শৈশবকে কি কখনো নিষেধের বাধনে বাঁধা যায় ! বাবা বুঝতনা সে সব । কি তীব্র অভিমান জমতো তখন আমার মনে ; সেই তখন থেকে বাবার সাথে আমার মতের অমিল । আমি ঠিকই দরজার ছিটকি খুলে ঘুড়ি-নাটাই, বল কিংবা লাটিম হাতে বেরিয়ে পড়তাম দুরন্তপনায় । সন্ধ্যায় দুরুদুরু বুকে ঘরে ঢুকতাম ।

মা একটু বকা দিয়ে আবার চুপিচুপি হাত পা ধুইয়ে পড়তে বসিয়ে দিতো । রাতে বাবা আমার পড়া নিতো । আমি পড়তে বসে কখনো বইয়ের পেজ ধরে টানাটানি করতাম , কখনো স্কেল নিয়ে দুষ্টুমি করতাম । তুমি চিতকার দিয়ে উঠতে; আমি ভয় পেতাম । শাসন করতে কেন আমাকে ! … ভালোবেসে বললেই তো পারতে বাবা ! , দেখতে আমি তোমার জন্যে কি না করতে পারি ।

তুমি কখনো গায়ে হাত তুলতে না শুধু চিতকার করে ভয় দেখাতে কিন্তু আমি তোমার মতো চিতকার দেই না বাবা প্রয়োজন হলে গায়ে হাত তুলি । চিতকার দিতে আমি ঘৃনা করি ! তোমার হাসিটা আমার খুব প্রিয় বাবা । দুর্লভ বলেই হয়ত ! অফিসের কলিগরা কাজ সব জমিয়ে রাখতো তোমার জন্যে আর তোমাকে হাসি মুখে বললেই সেটা তুমি করে দিতে , এখনো দাও । বাড়তি কাজ করতে গিয়ে বাসায় ফেরো কখনো বিকেলে আবার কখনোবা অনেক রাতে । সারাদিনের কাজের চাপে তোমার মন থাকে বিষিয়ে ।

বিশ্বাস করো বাবা, … আমি কারো হাসিমুখে বা অনুরোধে কিছু করিনা । সে যেই হোক না কেন ! নিজে যা ঠিক বুঝি তাই করি । আমি তখন ক্লাস নাইনে ; তুমি বলতে – ‘’ সারাদিন গল্পের বই না পড়ে ক্লাসের বই পড় কাজে লাগবে, এস,এস,সি টা যাক তারপর ঐসব পড়িস । ‘’ … তোমার সুরে আমি ভালোবাসা খুজে পেতাম না বাবা ! তুমি আমাকে আদেশ করতে; যা আমার নিতান্তই অপছন্দ । তবে আমি আমার ভাইবোনকে আদেশ করিনা বাবা ! আমি তাদের পরামর্শ দেই, ভালোবাসার সুরে ! আমি তোমার চেয়ে ভালো অথবা খারাপ হতে যাই , তবে ঠিক তোমার মতো হতে চাই না ! তুমি কখনো ইন্সপায়ার করোনি ।

যখন ফার্স্ট হয়েছি তখনো দেখেছি, যে ছেলেটা দ্বিতীয় হয়েছে তার চেয়ে কত মার্কসের ব্যাবধান হলো সেটাকেই বড় করে দেখেছো । আমার পুরস্কারটা তোমার যেন চোখেই পড়ত না । তবে তুমি যে তোমার কলিগদের কাছে এ ব্যাপারে খুব গর্ব করতে সেটা জানতাম । শুধু তুমি কখনো জানতে না বাবা যে তোমার ভালোবাসার কত ক্ষমতা ! … তোমার মত বেশির ভাগ বাবাই হয়ত তা জানে না । জানার প্রয়োজনও বোধ করে না ।

তারা শুধু আদেশ করতে জানে আর সব কিছুতে বাঁধা দিতে জানে । সন্তানের সবকিছুকেই তারা সমাজের অন্য দশজনের সাথে তুলনা করতে ভালোবাসে। কিন্তু তাদের জানা উচিত যে- ভালোবাসা আর বন্ধুত্বে যেখানে সন্তানের মানসিক পরিপুষ্টি, সামান্য অবহেলায় সেখানে অসীম সম্ভাবনার অকাল মৃত্যু । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।