আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদায় হজ্বের মর্মবাণী

শুক্রু বার ০৯ই জিলহজ্ব ১০ হিজরী সনে হজ্বের সময় আরাফা ময়দানে দুপুরের পর হযরত মোহাম্মদ (সঃ) লক্ষাধীক সাহাবায়ের সমাবেশে এই ঐতিহাসিক ভাষন দেন। তিনি বলেন –-- হে মানুষ; তোমরা আমার কথা শোন। এর পর এই স্থানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারব কিনা যানিনা। হে মানুষ, আল্লাহ বলেন- “হে মানব জাতি, তোমাদেরকে আমি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পার”। আতএব- শোনেরাখ, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই।

আরবের উপর কোন অনারবের, অনারবের উপর কোন আরবের শ্রেষ্টত্ব নেই। তেমনি সাদার উপর কালোর, কালোর উপর সাদার কোন শ্রেষ্টত্ব নেই। তোমাধের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সবছেয়ে বাশি স্মমান ও মর্যদার অধিকারী যে আল্লাহকে ভালবাসে। হে মানুষ; শোনেরাখ, অন্ধকার যোগের সকল বিষয় ও প্রতা আজ থেকে বিলুপ্ত হলো। যাহিলী যোগের রক্তের দাবি ও রহিত করা হলো।

হে মানুষ; শোনেরাখ, অপরাধের দ্বায়িত্ব কেবল অপরাধীর উপর বর্তায়। পিতা তার পুত্রের আর পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়। তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্মান, তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য চিরস্থায়ী ভাবে হালাল অর্থাতৎ পবিত্র ও নিরাপদ করা হলো। যেমন আজকের এই দিন, আজকের এই মাস, এই শহর সকলের জন্য পবিত্র ও নিরাপদ। হে মানুষ, তোমরা ঈর্শা ও হিংসা বিদ্বেশ থাকে দূরে থাকবে।

ঈর্শা ও হিংসা মানুষের সকল গুনকে ধংস করে ফেলে। হে মানুষ, নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি। তাদের সাথে নিষ্টুর আচরণ করোনা। তাদের উপর যেমন তোমাদের অধীকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের উপর তাদেরও অধীকার রয়েছে। সুতারাং তাদের কল্যাণের দিকে সবসময় খেয়াল রাখবে।

হে মানুষ, অধীনস্তদের সম্পর্কে সতর্ক হও; তোমরা নিজেরা যা খাবে তাদের ও তা খাওয়াবে; নিজেরা যা পরবে তাদের ও তা পরাবে। শ্রমিকের ঘাম শুকানুর আগে তাদের মুজুরী পরিশোধ করবে। হে মানুষ; বিশ্বাসি সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্যের সম্মান ধন ও প্রান নিরাপদ। সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও তাই পছন্ধ করে। হে মানুষ, বিশ্বাসীরা পরস্পরের ভাই।

সাবধান! তোমরা একজন আরেক জনকে হত্যা করার মতো কুফরী কাজে লিপ্ত হইও না। হে মানুষ, আজ হতে বংশগত শ্রেষ্টত্ব ও কৌলিন্য প্রতা বিলুপ্ত করা হলো। কুলিন বা শ্রেষ্ট সেই, যে বিশ্বাসী ও মানুষের উপকার করে। হে মানুষ, ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। বিশ্বস্থতার সাথে প্রথ্যেকের আমানত রক্ষা করতে হবে।

কারো সম্পদ সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয়। তোমরা কেউ দূর্বলের উপর অবিচার করো না। হে মানুষ, জ্ঞানির কলমের কালি শহিদের রক্তের চেয়ে মূল্যবান। জ্ঞান অর্যন প্রত্যেক নর নারীর জন্য ফরজ। কারন জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথ দেখায়।

জ্ঞান অর্যনের জন্য প্রয়োজনে তোমরা চীনে যাও। হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে। নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে। রোজা রাখবে, হজ্ব করবে। তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।

হে মানুষ, এক জন কুশ্রী কদাকার ব্যক্তিও যদি তোমাদের নেতা মনোণীত হয়, যতদিন পর্যন্ত সে আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে ততো দিন পর্যন্ত তার আনুগত্য করা তোমাদের কর্তব্য। হে মানুষ; শোনে রাখ, আমার পর আর কোন নবী নেই। হে মানুষ, আমি তোমাদের কাছে দুটি আলোক বর্তিকা রেখে যাচ্ছি। যত দিন তোমরা এই দুটি অনুসরণ করবে ততো দিন সত্য পথে থাকবে। একটি হলো আল্লাহর কিতাব, দ্বিতীয়টি হলো আমার জীবন দৃষ্টান্ত।

হে মানুষ, তোমরা কখনো ধর্ম নিয়ে বারাবারী করো না। কারন অতীতে বহু জাতী ধর্ম নিয়ে বারাবারী করার কারনে ধংস হয়ে গেছে। হে মানুষ। , প্রথ্যেককেই শেষ বিচারের দিন সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। অতএব সাবধান হও! হে মানুষ, তোমরা যারা এই খানে হাজির আছ, আমার এই বানীকে সবার কাছে পৌঁছে দিও।

এর পর নবীজি জনতার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাস করলো। হে মানুষ, আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছি ? সকলে সমস্বরে জবাব দিল হাঁ। এর পর নবীজি বল্লেন, হে আল্লাহ তুমি স্বাক্ষি থেকো। আমি আমার সকল দ্বায়িত্ব পালন করেছি। --(আল হাদিস) প্রীয় বন্ধুরা, পবিত্র ধর্মের বাণী আমরা শুনলাম।

আসুন নিজ নিজ ধর্ম পালন করি। অন্যের ধর্ম পালনের অধীকার নিশ্চিত করি। ধার্মিক হই। স্বদাচারী হই। এক স্রষ্টার উপাশনা করি, সৃষ্টির সেবা করি।

ইহকাল ও পরকালে আমরা সফল হবো, সম্মানী হবো। পরম করুণাময়ের করুনাধারাই পরীপূর্ণ হোক আমাদের জীবন। প্রীয় পাঠক আপনি নিজে যদি একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী হন, তবে সকল রাজনীতির উর্ধ্বে থেকে শুধু ইসলাম ধর্মের মুখপাত্র হয়ে চিন্তা করে দখুনতো আপনার, আমার সকলের প্রীয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর এই বানী গুলো আমরা কতটুকু পালন করতেছি ? ইসলাম কি তিনি এই বানী গুলার মধ্যে খুব সহজ করে সবার কাছে উপস্থাপন করে গেছেন। আমরা কি অমুসলিম দের সামনে ইসলাম কে সহজ ভাবে উপস্থাপন করতে পারছি ? আমরা কি শ্রমিকের নেয্য পাওনা যথা সময়ে পরিশোধ করছি ? যদি নাই করে থাকি তাহলে আমরা কোন ধরনের মুসলমান ?? আসুন আমরা নবীজির বিদায় হজ্বের এই ভষনকে মনে প্রানে ধারন ও পালন করে একজন গর্ভীত মুসলমান হিসাবে গড়ে উঠি। (মোঃ মিনহাজ উদ্দীন।

) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.