আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেগা শপিং মলের মেগা গাধা ও অন্যান্য

অলস সময় কাটানোর সবচেয়ে ভাল উপায় এখন অনেকের কাছেই ব্লগিং। অনেকটা সখের বসেই আজ হটাত করে লিখতে বসলাম। অবশ্য বাসায় থাকলে হয়তো লিখা হতনা। একটি বিশেষ ক্যাডারের সরকারি কর্মকর্তা হবার কারনে মাঝে মাঝেই ছকে বাধা অফিস টাইমের বাইরে দায়িত্ব পালন করতে হয় বিধায় এখনও কর্মখেত্রে বসে আছি। আমাদের দেশে একমাত্র পুলিশ ও ডাক্তার ছাড়া প্রশাসনের র কোন কর্মকর্তা অফিস টাইম এর বাইরে প্রায় ই অফিস করেন কিনা আমার জানা নেই।

(তবে পুলিশ এর প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এ-এস-পি রা রাতে কোন জরুরি অবস্থা ছাড়া স্টেশন এ অফিস রুম এ বসে থাকেন কিনা আমি জানিনা, কেও যদি জানেন- আমাকে জানালে উপকার হয়) । কারেন্ট টা এইমাত্ল এইমাত্র কারেন্ট চলে গেল। যাক এবার জমবে ভাল। একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা তার অফিস এ বসে মোমের আলোয় ব্লগ লিখছে-এর চেয়ে ভাবের আর কি হতে পারে। এইমাত্র খেয়াল করলাম একটা ভুল ইনফরমেসন দিয়ে দিয়েছি।

পুলিশ এর ওসি রা ত এখন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়ে গাছেন। কি ব্যাপার আমি পুলিশ প্রশাসনের পেছনে হটাত লাগলাম কেন- তাদের প্রতি ত আমার কোন ক্ষোভ নাই। বরং নিজে ডাক্তার হয়েও ডাক্তার দের প্রতি আমার অনেক ক্ষোভ। এ নিয়ে আর একদিন লিখব। তবে ক্ষোভ যে একদম নেই তা না, কখন হয় জানেন? উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ই এম ও হিসাবে দায়িত্ব পালন করার সময় সব ডাক্তার কে একটি সরকারি মোবাইল হাতে রাখতে হয় ।

এ মোবাইল নাম্বার টা দেয়া হয়েছে উপজেলার মানুষ এর যে কোন প্রয়জনে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার জন্য। যেমন ধরেন আপনার ছোটো বাচ্ছার জর- সিরাপ কতখানি খাবে জেনে নিলেন, জর ১০৩ কিছুতেই কমছে না-হাস্পাতালে আস্তে হবে কিনা জেনে নিলেন। তবে দুঃখের ব্যাপার আমি গত এক বছরে এ ধরনের ফোন পাইনি, যে ফোন পাই তার জন্নে এ মোবাইল কিনা তার বিচার আপনাদের হাতেই ছেরে দিলাম -একটা উদাহরন দেই। এ মোবাইল এ ফোন করে রাত ১২/১ টায় কোন পলিটিকাল নেতা জানতে চান “ আমার মা এর তো খুবি গ্যাসের প্রবলেম, হাস্পাতালে কি কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার আছেন??” - তখন আমার খুব ক্ষোভ হয়। অবশ্য আমি তখন খুবি সুন্দর করে বলি এখন হাস্পাতালে ই এম ও আছেন, তার চাকরির বয়স মাত্র এক বছর, অভিজ্ঞ কেও এখন নাই।

আমার খুব ইচ্ছা হয় তখন তার মুখ টা যদি দেক্তে পারতাম কেমন হল হয়ত খুব মজা পেতাম। কিন্তু আফসোস , ধীর গতির ইন্টারনেট কানেকশন এর কারনে আমাদের দেশে ভিডিও কল এখনও সহজলভ্য নয় তাই মুখ দেখাটা সম্ভব নয়। ( নেতা গোছের মানুষ- যাদের রাতে সরকারি হাসপাতালে ফোন করে অভিজ্ঞ ডাক্তার খোজার অভ্যাস আছে তাদের উদ্দেশে বলছি- ঢাকার স্বনামধন্য বেসরকারি হাসপাতাল গুলার নাম্বার রাখুন- অখানে ফোন করলে হয়ত আপনাদের কাজ হবে) । আমার আরও ক্ষোভ আমার আরও ক্ষোভ হয় যখন উপজেলা চেয়ারম্যান তার সেক্রেটারি কে কোন পেসেন্ট এর সাথে পাঠায় এবং সেক্রেটারি বলে “ স্যার এ রোগী টাকে পাঠিয়েছেন র বলে দিসে ওর নখের ভিতর মাটি ঢুকসে, পরিস্কার করে দিতে কিন্তু সে জাতে ব্যাথা না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে”। আমার কখনই রেকমেন্ডসন নিয়ে সাধারনত রেকমেন্দেসন নিয়ে যে রোগীরা আসে তাদের দেখতে ভাল লাগেনা।

তবে আমার কেন জানি মনে হয় এই দেশ যতটা না নেতা দের হাতে জিম্মি তার চেয়ে বেশি তাদের চামচা দের হাতে জিম্মি। (আমার ধারনা চামচা রা অনেক কথাই বলেন যা তার নেতা আসলেই কখনই বলেননি)। ডাক্তার এর কাছে রোগি পাঠানো ডাক্তার এর কাছে রোগী পাঠানো পর্যন্ত ঠিক আছে কিন্তু ছিকিন্সা ব্যাথা ছাড়া হবে না ব্যাথা যুক্ত এটাও যদি নেতারা ঠিক করে দেন তাহলে আমার মনে হএ কিছুদিন পর চিকিৎসা টাও তারা দিতে পারবেন। সেই তখন থেকে বকবক করে যাচ্ছি অথচ আমার লেখার শিরোনাম থেকে কত দূরে চলে আসছি। হায়রে কপাল- ভাল ব্লগ লিখাটাও কত কঠিন হারে হারে টের পাচ্ছি।

এবার আসল কথায় আসি । ঢাকা সহরে যারা থাকি – মিনা বাজার, এগোরা, সপ্ন, প্রিন্স বাজার এধরনের মেগা শপিং মলের সাথে কম বেশি সবাই পরিচিত। আমি এ ধরনের শপিং মলের একজন ১০০ ভাগ ভক্ত। এযুগে কে চায় বলেন বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে রোদে পুড়ে বৃষ্টি তে ভিজে শপিং করতে। আমি অন্তত কখনই চাইনা।

প্রতি মাসের মত এবারো বাজার করতে যাই এমনি এক মলে, যেহেতু প্রতি মাসে একি জিনিস মাত্র ২০/২৫ মিনিট ঘুরেই আমার প্রয়োজনীয় সব নেয়া শেষ। ক্যাশ কাউন্টার এ আসলাম বিল দিতে। আজকাল এধরনের মলের ক্যাশ এ যারা থাকে এরা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কাস্টমার এর চেয়েও স্মার্ট। কথা বার্তায় একটা বাংলিস ভাব- ফিটিংস ড্রেস। ওদের সাথে কথাও বলতে হয় খুবি গুছেয়ে –নাহলে কিন্তু প্রেস্টিজ একদম যাবে।

তবে এদের আসল কাজ যে হিসাব করা –আর সেটায় তারা কত দক্ষ তা কিন্তু অন্তত ঐ দিনের পর আমার কাছে প্রস্নবিদ্ধ। ওদের যারা নিয়োগ দেন তারা শুধু বাংলিস স্মার্টনেস টাই দেখেন নাকি হিসাবের দক্ষতাও দেখেন তা আমার জানা নেই, অবশ্য এটা জানা আমার কাজ ও নয়। যাই হক অন্যান্য আইটেম এর সাথে আমি একটি পরিচিত ব্র্যান্ড এর ৬ টা বাথ সোপ কিনি যার ২ টা বড় র ৪ টা মাঝারি। ২ রকমের সাবানের মাঝে দামের পার্থক্য ৯ টাকা। কাউন্টার এ ওরা যখন প্রডাক্ট স্কান করে, অভ্যাস বসত আমি স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে থাকি।

যারা রেগুলার জান তারা হয়ত জানেন একি আইটেম অনেক থাকলে ওরা একটা স্কান করে সংখ্যা দিয়ে গুন করে-যেটা খুবি সাভাবিক। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কি হল- ঠিক ধরেছেন, ছেলেটা একটা বড় সাবান স্কান করে বাকি গুলা কাউন্ট করে গুন ৬ দিয়ে হিসাব করল। আমি স্ক্রিন এ খেয়াল করলেও ওর হিসাবের একাগ্রতা নষ্ট হবে বিধায় কিছু বললাম না। মনে মনে ভাবলাম আমার ও দেখার ভুল হতে পারে, রিসিট হাতে পেলে একবার চেক করে নিব। টাকা দিয়ে হাত এ রিসিট নিয়ে দেখি আমার অনুমান এ ঠিক- সবগুলো বড় সাবান ধরে টাকার হিসাব করা।

আমি বিনয় এর সাথে তাকে বললাম “ এক্স কিউস মি আপনি একটি ভুল করেছেন, আমি ২ সাইজ এর সাবান নিয়েছি আর আপনি ৬ টাই বড় সাবানের দাম ধরেছেন । যেহেতু দামের পার্থক্য ৯ টাকা- সে ৪ টা মাঝারি সাবান কে বড় ভেবেছে তাই ৪ গুন ৯ = ৩৬ টাকা বেশি নিয়েছে এটাও বলে দিলাম”। আমি লক্ষ করলাম আমি যতটা বিনয় আমি যতটা বিনয় এর সাথে বললাম সে তততাই কর্কস ভাবে আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকাল। রিসিট টা নিয়ে দেখল, ততক্ষনে সব প্যাক করা শেষ। আবার প্যাক খুলে সাবান চেক করল।

আস্তে আস্তে তার মুখের কর্কস ভাব বদলে একটু নরমাল হল। এরপর সে আমাকে বলল একবার ইনপুট হয়ে গেলে তা চেঞ্জ করা যায়না- আমি জাতে ৩৬ টাকার এক্সট্রা কিছু নেই অথবা সব সাবান ফেরত দেই। এখন আমার কর্কস হবার পালা। অলরেডি ভেতর এ ভেতর এ যুদ্ধের জন্য তৈরি। আবার বললাম “ ভুল টা আমার না আপনার, আমি এক্সট্রা কিছু নেবনা কারন আমার যা দরকার সব নেয়া শেষ, আর সব সাবান ফেরত দেয়ার প্রস্নই আসেনা।

এই ভুল টা অস্বাভাবিক না, আপনি আমাকে ৩৬ টাকা ব্যাক করেন- আমি বের হব। এখন শুরু হল নাটক এর লাস্ট সিন। সে তার ইমিডিয়েট বস কে ডাকল। সে এসে যখন দেখল এটা ওরই ভুল –বিশাল এক ঝারি দিয়ে বলল আমাকে টাকা ব্যাক করতে- কিন্তু ওদের সিস্টেম এ যা এন্ট্রি হয়েছে তা চেঞ্জ হবে না- তার মানে টাকা টা ঐ ছেলের পকেট থেকে দিয়ে রাতে হিসাব মেলাতে হবে। আমি বুঝলাম না, কি এমন জটিল সফটওয়্যার এ এই হিসাব হয় যে একবার এন্ট্রি হলে ভুল ঠিক করা জাবেনা।

যাই হোক আমার দরকার ৩৬ টাকা। আতকিছু বোঝার দরকার নাই। এরপর সেই ছেলেটা যা করল এর চেয়ে অদ্ভুত র কিছু হতে পারেনা, তার পাসের কাউন্টার এর কলিগ এর সাথে ২/৩ মিনিট পরামর্শ করল কিভাবে টাকা টা ওর পকেট থেকে না দিয়ে ঠিক করা যায় , মনে মনে কিছুক্ষন ভাবল। এদিকে আমি ধৈর্জ্য হারা হয়ে আবার বললাম “ আপনি আমার সময় নষ্ট করছেন, এত সহজ হিসাব করতে এতক্ষন লাগছে কেন আমাকে ৩৬ টাকা ব্যাক দিলেই ত হিসাব হয়ে যায় কারন সাবানের দামের পার্থক্ক ৯ টাকা তাই আপনি বেশি নিয়ছেন ৩৬ টাকা। সে কিবোর্ড এ আবার টাইপ করে ৪ টা ছোটো সাবানের জন্য আলাদা রিসিট বের করল, আমার মেজাজ চরম খারাপের দিকে- এবার সে ক্যাশ থেকে ৬০ টাকা বের করে সেই রিসিট আর টাকা দিয়ে বলল আপনার হিসাব কমপ্লিট।

এবার আমি হাসব না কাদব বুঝতে পারলাম না- আমি আবার সেই ৬০ টাকা হাতে ধরে ( ১ টা ৫০ টাকা আর ১ টা ১০ টাকা) তাকে বললাম আপনি কিন্তু আবার ভুল করছেন, আমাকে আপনি দিবেন ৩৬ টাকা ,আপনি এখন আমাকে ২৪ টাকা বেশি দিলেন। সে আর তার সহকর্মী একসাথে বলল স্যার আমাদের হিসাব ঠিক আছে- আপনি এখন আসুন। এর পর র কি করব বুঝতে পারছিলাম না, লাস্ট তাকে বললাম আপনি আমাকে ২৪ টাকা বেশি দিলেন, আমার পাওনা ছিল ৩৬ টাকা, এই বলে ট্রলি নিয়ে হাটা দিলাম। ঘটনাটা গতকালের। তখনি বাসায় আসতে আসতে ঠিক করলাম টাকা টা মসজিদে বা কোন ভিক্ষুক কে দিয়ে দিব।

কারন রাতে ক্যাশ মেলানর সময় এই গাধা টা কে হয়ত ৩৬+২৪= ৬০ টাকা নিজের পকেত থেকেই দিতে হবে। ৩৬ টাকার জন্য আমার মায়া নাই-কারন এটা আমার পাওনা, ২৪ টাকার জন্য যত মায়া, টাকা টা দান করলে যদি ওর বুদ্ধি কিছুটা বারে তাতেই লাভ!!!!!!! এত বোরিং আর বড় ব্লগ লেখার পেছনে উদ্দেশ্য অতি সামান্য এধরনের শপিং মলে এই টাইপ এর গাধা দের কিভাবে চাকরি হয় আমি বুঝিনা। এই দেশ টা যদি একটু অন্নরকম হত আমিও ত অখানে পার্টটাইম জব করতে পারতাম। কারন আমি জানি ৪ গুন ৯ = ৩৬ খুব ভাব নিয়ে দারিয়ে না থেকে আমাদের সবারি মনে হয় কাউন্টার এর স্ক্রিন এ তাকিয়ে থাকা উচিত- এভাবে আমাদের কত ৩৬ টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে কে জানে। অবশ্য অনেক জায়গায় স্ক্রিন ওদের দিকে মুখ করা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা রিসিট টা দারিয়ে চেক করতে পারি - কি বলেন? যে সফটওয়্যার এত জটিল যে একবার এন্ট্রি করলে টাকা ব্যাক করা যাজায়না তা জোগ ঠিকমত করে ত ??? তাহলে কি এখন থেকে বাসায় এসে রিসিট নিয়ে আমার ক্যালকুলেটর এ বসব?? এই সিদ্ধান্ত আপনাদের হাত এ ছেরে দিলাম।

দেখি আপনারা কি বলেন? ভাল থাকবেন................................................ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.