আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝাড়-ফুঁক-টোটকা

আমি যা বিশ্বাস করি না... তা বলতেও পারি না! আজ দুপুরে আম্মুর সাথে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলাম। আম্মুর আজ ২৫/২৬ বছর ধরে কোমরে ব্যাথা! অমাবস্যা পূর্ণিমা এলেই বাড়ে। ডাক্তার বলেছে কোমরের হাঁড় ক্ষয় গেছে... এই ব্যাথা কোন দিনই সারবে না; শুধু ঔষধ খেয়ে আর ব্যায়াম করে যতটুকু সুস্থ থাকা যায় আরকি! তবে এই পঁচিশ বছরে আম্মু চিকিৎসা একেবারে কম করায়নি। ডাক্তার-কবিরাজ-ঝাড়-ফুঁক-টোটকা-পড়া পানি-তাবিজ-কবজ কোন কিছুই বাদ দেননি! আজকে বাসে যাবার সময় একজন ভিন্নধর্মী হকার বাসে উঠে জানালো- তার নাম হানিফ মোল্লা, বাবা “...” মোল্লা, দাদা “...” মোল্লা (আমি মনে মনে বললাম: মোল্লা সল্ট কি উনাদেরই নাকি!), বাড়ি খুলনা, থানা- তের খাদা, গ্রাম- “...” (“...”গুলো ভুলে গেছি!)। তিনি একজন রিক্সাচালক।

কিন্তু তার কাছে একটা গাছন্ত ঔষধ আছে। এই ঔষধ তাবিজে ভরে কোমর, গলা কিংবা হাতে বাঁধলে সকল প্রকার ব্যাথা সেরে যায়! কারো শরীরে ব্যাথা থাকলে সে এই মুহূর্তে প্রমান করে দিতে পারে এই গাছের ঔষধি গুণ আছে কিনা! তবে মজার ব্যাপার হল- ঔষধের কোন দাম দেয়া লাগবে না। কারও ইচ্ছে হলে যা খুশি দিতে পারে। ইচ্ছে না হলে এমনিতেই নিতে পারে। উপকার পেলে যদি মনে হয় দাম দেয়া দরকার তাহলে আবার যদি কোনদিন কোথাও দেখা হয় তখন দিয়ে দিলেও চলবে।

অথবা, কোন মসজিদ-মাদ্রাসা বা ফকির-মিসকিনকে দিলেও সমস্যা নাই। এমনকি কাউকে কোন দাম না দিলেও কোন দাবি-দাওয়া নাই। কাজ হলেই উনি খুশি! (ক্যানভাসিং এর নতুন এবং অভিনব কৌশল কোন সন্দেহ নাই!) বলাই বাহুল্য আমার মা লোকটার সাথে দু’একটা কথা বলে ১০ টাকা দিয়ে এক পুরিয়া (কাগজে মোড়ানো ছোট একটা শেঁকড়!) কিনে ফেলল! আমার দিকে সম্মতির জন্য তাকালে আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। লোকটা নেমে গেলে আম্মু আমাকে বলল: তোর কি মনে হয়, কাজ হবে? আমি খুব স্বাভাবিক গলায় বললাম: তুমি যদি মন থেকে বিশ্বাস করতে পার তাহলে কাজ হবেই! আর যদি বিন্দু মাত্র দ্বিধা থাকে তাহলে কিচ্ছু হবে না... সুপ্রিয় পাঠক, আসলে রোগ ভাল হবার প্রথম শর্তই হচ্ছে সুস্থ হবার বিশ্বাস। হ্যাঁ, অবশ্যই রোগ-শোক মৃত্যু দেবার বা সুস্থ করার মালিক আল্লাহ।

কিন্তু তবুও আমরা কম বেশি সবাই জীবনে বহুবার এরকম শুনেছি- ওমুকের পড়া পানি খেয়ে অমুক রোগ ভাল হয়েছে। তেমনি এই তাবিজ, ঐ টোটকা, তাঁর ফুঁতে এই-সেই-ঐ রোগ বা সমস্যা সেরে গেছে। এর ব্যাখ্যা কী? এর সবই কি ভুয়া? সবই কি বুজরুকি? সবই কি কাকতালিয়? আবার তা বলে কি সবই সত্য? আসল ব্যাপারটা হচ্ছে বিশ্বাস। আমি জানি অনেকেই বলবেন- তাবিজ-কবজে বিশ্বাস করা কুফরির শামীল। আমি সে বিতর্কে যেতে চাচ্ছি না।

তবে শুনেছি বিশ্বাস করে জমজম কুপের পানি খেলে নাকি যে কোন রোগ-শোক আল্লাহ চাহেন তো ভাল হয়ে যায়। আবার অনেক নাস্তিক বা অতি মাত্রায় বিজ্ঞান বিশ্বাসী ব্যক্তিদের এখানেও দ্বিমত আছে! যাই হোক, আমি আমার এই লেখায় কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করব যে কিভাবে বিশ্বাস আমাদের রোগ তৈরী বা আরোগ্য লাভে সহায়তা করে। একথা আমরা এখন সবাই জানি আল্লাহ-তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সর্বোত্তম আকৃতিতে। শুধু উত্তম আকৃতিই নয় জৈবিক ভাবে সকল প্রকার এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অটো হিলিং সিস্টেম দিয়েই আমাদের তৈরি করেছেন। আমাদের শরীরে এমন কিছু হরমোন ও এনজাইম আছে যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করে।

আমি যদিও ডাক্তার নই তবুও আমার জানা মতে আমাদের সমস্ত শরীরের ¯œায়ুগুলো সংযুক্ত হয়েছে স্পাইরাল কর্ড বা মেরুদন্ডের সাথে। এই মেরুদন্ডের মাধ্যমেই সকল অনুভুতি ব্রেইনে গিয়ে পৌছায়। আর আমাদের কোমরের কাছে এই সকল অনুভুতি প্রবেশের একটা দরজা আছে। এবং সেই দরজা আবার খোলা বা বন্ধ করে দিতে পারে ব্রেইন! কাজেই যখন আমাদের তিব্র ব্যাথা অনুভূত হয় তখন যদি কোন ভাবে আমরা ব্রেইনের মাধ্যমে ঐ নার্ভের দরজাটা বন্ধ করে দিতে পারি তাহলেই আমরা আর কোন ব্যাথাই অনুভব করব না! এখন কিভাবে তা করা যায়? একটা পদ্ধতি হচ্ছে মেডিটেশন। আপনি যদি গভির ধ্যানে চিন্তা করেন ”আমার কোন ব্যাথা নাই” এবং তা ব্রেইনকে বিশ্বাস করাতে পারেন তাহলে তাৎক্ষণাত আপনার ব্যাথা দ্রবিভুত হয়ে যাবে! সিলভা মেথড (মেডিটেশনের একটি পদ্ধতি) শেখার সময় আমাদের এই কোর্সটা করানো হয়েছিল।

আমার জানা মতে কোয়ান্টাম মেথডেও এধরনের কোর্স আছে। এবং এক্ষেত্রে শুধু ব্যাথা নয়, হাজারও রকম রোগ সেরে যাবার অবিশ্বাস্য রেকর্ডও তাদের রয়েছে! আরেকটা পদ্ধতি হতে পারে কোন ধরনের তাবিজ-তবজ! কারণ, এক্ষেত্রেও আসল ব্যাপারটা হচ্ছে বিশ্বাস! একই ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে এখানেও ঘটে। বলা যেতে পারে এটাও পক্ষন্তরে এক প্রকার মেডিটেশন!!! আর সবচেয়ে সহজ হচ্ছে ব্যাথার ঔষধ বা অবশ করার ইনজেকশন! এক্ষেত্রে বিশ্বাস করার দরকার হয় না। ঔষধের প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি ব্রেইনের নার্ভ সিস্টেম দুর্বল করে দেয়। ফলে কোন ব্যাথা অনুভুত হয় না! তারমানে হল, সকল ক্ষেত্রেই আসল কাজটা ব্রেইনই করে! শুধু ব্রেইনকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নেবার কৌশলটা ভিন্ন- এই যা।

আমি জানি শেষেরটা সবার বিশ্বাস হলেও প্রথম দুইটায় অনেকের আপত্তি আছে। আমি তাবিজ-কবজের প্রতি আপনাদের উৎসাহিত করার জন্য একথা বলছি না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি অসুস্থতা যতটা না শারীরিক তারচেয়ে অনেক বেশি মানুষিক কারণে হয়। দু’-একটা উদহারন দেই- ছোট বেলা এমন অনেক বার আমাদের সবারই হয়েছে, ক্রিকেট-ফুটবল বা অন্য কিছু খেলতে গিয়ে খুব ব্যাথা পেয়েছি। কিন্তু খেলার সময় তা উত্তেজনায় টেরই পাইনি! খেলা শেষে ব্যাথায় নড়তেই পারি না এমন অবস্থা! আবার বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লেই জ্বর-মাথা ব্যথা।

অথচ, ৩ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে খেলেছি- একটা হাঁচি পর্যন্ত আসে নি! না জেনে কচু বা কচুর লতি দিয়ে ভাত খেয়েছেন, কোন সমস্যা হয় নি। যেই মাত্র কানলেন ওটা কচু ছিল- সাথে সাথে গলা চুলকাতে শুরু করলো! এরকম আরো হাজার উদাহরণ দেয়া যাবে। কি ব্যাখ্যা দিবেন এগুলোর? ঠিক একই কারণে অনেক ডাক্তার আছে যার চেহারা দেখলেই রোগির রোগ সেরে যায়! কি ঘটে আসলে? আসল ব্যাপার হচ্ছে ডাক্তারের কথা, ব্যবহার, সুখ্যাতি প্রভৃতি দেখে-শুনেই রোগির মনে বিশ্বাস তৈরী হয়- এই ডাক্তারই পারবে আমাকে সুস্থ করতে! আর ঘটেও তাই। ঐ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে ২টা প্যারাসিটামল খেয়েই রোগি সুস্থ! অথচ আরেক ডাক্তার ঐ একই রোগিকে দেড়-দুই হাজার টাকার ঔষধ খাইয়েও কিছু করতে পারে না! এজন্যই টোটকা-ঝাড়-ফুঁক বা তাবিজ-তবজেও অনেকের অনেক উপকার হয়। আর বিশ্বাস যদি না থাকে তাহলে জমজম-এর পানিই হোক আর পি.এইচ.ডি করা ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশনই হোক, কোন কিছুই আপনাকে সুস্থ করতে পারবে না।

সুতরাং সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন। বিশ্বাস রাখুন নিজের ওপরও। সর্বাবস্থায় হৃদয় থেকে বলুন এবং অনুভব করুন- আলহামদুলিল্লাহ! বেশ ভাল আছি... ইনশাল্লাহ, আপনি সুস্থ হতে এবং সুস্থ থাকতে বাধ্য! - সফিক এহসান (৬ সেপ্টেম্বর ’১২ইং) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।