আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী আঁকন কেন মিথ্যে সাক্ষী দিচ্ছে?

আমার এই ব্লগের কোনো লেখা বা লেখার কোনো অংশ আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া যে কোনো প্রকার মিডিয়াতেই প্রকাশ করা যাবেনা। যদি তা করা হয়, তাহলে আমি আইনগত এবং অবস্থাভেদে ব্লগের আইন/প্রসিজিওর অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হব সাঈদীর পক্ষের ২য় সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক আঁকনের জবানবন্দী ও এডভোকেট হায়দার আলীর করা জেরা পড়লাম। পুরো ব্যাপারটি পড়ে খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই জেরা ও জবানবন্দীর প্রতিটি লাইন সুক্ষ্ণভাবে বুঝবার চেষ্টা করলাম। আইনের একজন ছাত্র হিসেবে এই জবানবন্দী ও জেরাতে পাওয়া উত্তর গুলো নিয়ে ব্যাক্তিগতভাবে আমার সন্দেহ নেই যে সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক আঁকন মিথ্যে বলছেন। আসুন সেই ব্যাপারগুলোই আপনাদের দেখাই- ( শুরুতেই আপনারাএখান থেকে আব্দুর রাজ্জাক আঁকনের জবানবন্দী ও তাকে করা জেরাটুকু দয়া করে মন দিয়ে পড়ে নিন) জেরা ও জবানবন্দী থেকে জানা গেলো যে আব্দুর রাজ্জাক আঁকনের বয়স বর্তমানে হচ্ছে ৬৫ বছর।

অতএব মুক্তিযুদ্ধের সময় আকন সাহেবের বয়স ছিলো ২৩-২৪ বছর। আবদুর রাজ্জাক মুলত সাক্ষী দিচ্ছে এই বলে যে, তার ভাগ্নে আবদুল হালিম বাবুল সাঈদীর বিরুদ্ধে যে সাক্ষী এর আগে দিয়েছিলো তা মিথ্যা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবুলের বাসায় কোনো পাক বাহিনী যায়নি, রাজাকার যায়নি এবং আগুন দেয় নাই। জবানবন্দীতে আব্দুর রাজ্জাক বাবুলের বয়স আট কিংবা নয়, এটি বলতে পারলেও জেরার সময় বলতে পারেন নি যে বাবুলের জন্ম কবে। বাবুলের জন্মের আগে তার আরো চার ভাই মারা যায় জন্মের পরপরই।

সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই বাবুলের বেঁচে থাকাটা ওই পরিবারের জন্য একটা মস্ত বড় স্বরণীয় ব্যাপার হবার কথা ছিলো। কিন্তু কোনো এক কারনে মামা আব্দর রাজ্জাক আকন মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবুলের বয়স কত ছিলো এটি বলতে পারলেও কবে বাবুল জন্ম নিয়েছে এটি তার মনে নেই। ভালো কথা। আসুন তার জবানবন্দী আরেকটু ভালোভাবে পর্যালোচনা করি। আব্দুর রাজ্জাক জবানবন্দীতে বলেছে- “১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন আমাদের নলবুনিয়ায় একটা ঘটনাই ঘটেছে।

আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি হঠাৎ একদিন শেষ রাত্রে একটা আওয়াজ হয়। আমি অনুমান করলাম এটা গুলির আওয়াজ। তারপর দেখি যে, ফজরের টাইম হয়ে গেছে। আমি আযান দিয়া নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পর উত্তরদিকে রাস্তার পাশে যাই কোথায় কি হয়েছে জানার জন্য।

তখন গিয়ে দেখি উত্তর দিক থেকে সামনের খাল দিয়ে নৌকায় করে ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নিয়ে পাড়ের হাটের দিকে আসতেছে। নৌকায় কালাম চৌকিদার, আইয়ুব আলী চৌকিদার এবং হাকিম মুন্সিকে দেখি। এরপর দেখি আরও কয়েকজন লোক খালের পাড় দিয়ে উত্তর দিক থেকে আসতেছে। যে সব লোক আসতেছে তাদের মধ্যে দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, রুহুল আমিন, মোমিন রাজাকার ছিল। আরও দেখি উক্ত লোকেরা আজু হাওলাদারের বৌ এবং তার ছেলে সাহেব আলীকে বেঁধে নিয়ে আসতেছে এবং পাড়েরহাটের দিকে নিয়া যাচ্ছে।

তারপর দিন শুনি আজু হাওলাদারের বৌ বাড়িতে আসে এবং সাহেব আলীকে পিরোজপুরে নিয়ে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে। এটাই আমার বক্তব্য। স্বাধীনতার কিছুদিন পরে শুনেছি যে, ইব্রাহিম কুট্টির বৌ একটা মামলা করেছে” আব্দুর রাজ্জাক জেরাতে বলছে যে সে তার ভগ্নীপতিকে নিয়ে পালিয়ে থাকত গ্রামের বিভিন্ন বাসায় বা তাদের বাড়ীতে। কিন্তু নামাজ পড়ত আজান দিয়ে। পালানোর নমুনা শুনে আমি খানিকটা হতবাক।

তার থেকেও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে ফজরের নামাজের সময় সূর্য পুরোপুরি উঠে না। তখনও আবছা অন্ধকার থাকে সব জায়গায়। কিন্তু সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক উত্তর দিকের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেই অন্ধকারেই দেখে ফেললেন যে খালে করে নৌকা দিয়ে ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নিয়ে আসছে। সাক্ষীর চোখ যেনো এক অটোমেটিক বাইনোকুলার। অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা থেকে খালের মধ্যে থাকা লাশ দেখে ফেললেন।

এবং সেই লাশের সাথে তিনজন মানুষ বসে ছিলেন। একটা নৌকায় যখন তিনজন মানুষ বসে থাকেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই তিনজন এক সাইডেই বসে থাকবেন না। এটা কমন সেন্স। আমরা যদি ধরে নেই যে নৌকার দুই দিক থেকে মানুষ বসা ছিলো তাহলে সেটি ডিঙ্গিয়েও নৌকাতে কার লাশ ছিলো এটা বোঝা দুষ্কর হবার কথা। কিন্তু এক আশ্চর্য কারনে সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাকের তা হয়নি।

আর যেহেতু সাক্ষী গুলির শব্দ শুনেই সেখানে গিয়েছেন ও রাজাকারদের দেখেছেন, স্বাভাবিক ভাবেই তিনি ভয়ে খুব সামনে যাবেন না ঘটনা দেখতে। দূর থেকে লুকিয়েই দেখবেন। তার ঝুঁকি আরো বেশী। কেননা তার দুলাভাই আওয়ামীলীগ করতেন বলে তিনি জেরাতে বলেছেন। এসব দিক বিবেচনা করে যা বোঝা যাচ্ছে তা হোলো সাক্ষী দূর থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খালে থাকা নৌকা এই অন্ধকারে দেখে এবং নৌকার তিনজন মানুষকে ডিঙিয়ে লাশ যে ইব্রাহিম কুট্টির তা দেখে ফেলেছেন।

মাশাল্লাহ। কি চমৎকার!!! আবার লক্ষ্য করুন সাক্ষীর গ্রাম নলবুনিয়াতে কোনো রাজাকার আসেনি বলে জেরাতে বলছেন সাক্ষী। অথচ উপরের জবানবন্দী লক্ষ্য করুন, সেখানে বলা হচ্ছে যে তিনি তিনজন রাজাকারকে দেখেছেন যে আজু হাওলাদারের বউ ও ছেলেকে বেঁধে নিয়ে যেতে পাড়ের হাটের দিকে। আবার জেরাতে গিয়ে লক্ষ্য করুন পাঠক। সাক্ষী বাবুল বলছে যে, যুদ্ধের সময় তার ভাগ্নে মানে বাবুলের আরো দুই ভাই বাহাদুর ও মধু বাড়িতেই থাকতেন।

কিন্তু এর পরেই মধুর বয়স জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন মধুর বয়স ৩৫ বছর। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে ৪১ বছর আগে। মধুর বয়স বর্তমানে ৩৫ বছর। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সময় মধু আর বাহাদুর কিভাবে একসাথে ছিলো? মধুতো হিসাব মতে মুক্তিযুদ্ধের ৬ বছর পরে জন্মেছে। তবে প্রসিকিউশনের আইনজীবিদের কাছে একটা বিনীত অনুরোধ, তারা যেনো ঘটনাস্থলের রাস্তাঘাট গুলো পরিদর্শনে যান দয়া করে।

রাস্তা থেকে খালের দুরুত্ব, ফজরের সময়ে একজন মানুষ ঠিক কতটুকু দেখতে পারেন সেটার একটি চক্ষু বিশেষজ্ঞ থেকে রিপোর্ট, খাল দিয়ে যদি নৌকা পাড়ের হাঁটে যায়, তাহলে কি রাস্তা সেটি কেমন দেখায় ফজরের ওয়াক্তে ইত্যাদি। সাক্ষী জেরাতে আরো বলেছেন যে তিনি তার ভগ্নীপতিকে নিয়ে পালিয়ে থাকতেন বিভিন্ন জায়গায়। এবং পাড়ের হাটের বিভিন্ন রাজাকারের নামও বলতেন। অথচ বাজার করতে তিনি পাড়ের হাঁটেই যেতেন। বড়ই আজব ঘটনা।

পাঠক একটা পয়েন্ট নোট করে রাখবেন যে সাক্ষীকে ঢাকায় খরচ পাতি ইত্যাদি করে নিয়ে এসেছে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর শালা। সুতরাং ঘটনা কি হচ্ছে, টাকা কোত্থেকে আসছে, সাক্ষীর কথা বার্তা আপনারা দয়া করে একটু ভাবুন। আশা করি বুদ্ধিমান মানুষ আপনারা। বুঝতে পারবেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী আব্দুর রাজ্জাক আঁকনের জবানবন্দী ও জেরার এই অসামঞ্জস্যগুলো আমার চোখ ধরা পড়লো। সাঈদীর উকিল, ছেলে, শালারা মিথ্যে সাক্ষী নিয়ে এসে জবানবন্দী দিচ্ছে এটা খন পানির মত পরিষ্কার।

মিথ্যে সাক্ষী দেবার জন্য আমাদের প্রচলিত আইনেই ব্যাবস্থা নেবার কথা বলা হয়েছে। এইসব বানানো সাক্ষী নিয়ে এসে এই ট্রাইবুনালকে দীর্ঘায়িত করবার ও বিচার পন্ড করবার দুঃসাহস কোত্থেকে পাচ্ছে এই রাজাকারের ছানা পোনারা? এরা এতই ভয়ংকর যে মামাকে টাকা দিয়ে কিনে সাক্ষী দেয়াচ্ছে ভাগ্নের বিরুদ্ধে। সরকারের এই ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করবার সময় এসেছে বলেই আমার মনে হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.