আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ আ আজকের লেখালেখি - ৮৩

কাঁদছো !! কান্নাতে তোমাকে দারুণ দেখায় ! ছাত্রজীবনে যত পরীক্ষা দিয়েছি, আমার কাছে মনে হয়েছে, এইচ.এস.সি পরীক্ষা একটা মানুষের জীবনে সবচেয়ে কঠিনতম পরীক্ষা। অবশ্য যারা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেলে বিভিন্ন ইয়ারে পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা আমাকে এ ব্যাপারে ক্ষোভে গালমন্দ করতে পারেন। আমি আরাম প্রিয় ছিলাম বলে আমার পক্ষে তাদের মতন ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়র হওয়া সম্ভব হয় নি। তাই সাদামাটা একাউন্টেট ম্যানেজার হয়েছি। সকালে অফিসে এসে টাকা গুনে টাকা সাজিয়ে রাখি আবার বাড়ী যাবার আগে টাকা গুনে টাকা সাজিয়ে দিয়ে যাই।

এই আমার প্রতিদিনকার অফিস রুটিন। যাই হোক, আবার ফিরে যাই ছাত্র জীবনে। আমাদের সবাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটে কলেজে। কেননা, আমি স্কুলজীবনে খুব কড়া শাসনের ভিতর থাকতাম। আমাদের বাড়ীতে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছিল মাগরিবের আযানের শেষে যেন আমাকে পড়ার টেবিলে পাওয়া যায়।

সেই জন্যে সারাজীবন মাগরিবের আযান মানে পড়তে বসো এই মন্ত্র জপটে জপটে বই খুলে বসে পড়তাম। টানা তিন-চার ঘন্টা পড়া শেষে মাঝে মাঝে টিভি সিরিয়াল ম্যাকগাইভার দেখতে যেতাম। অনেক সময় বেশী টিভি দেখতে ইচ্ছে করত কিন্তু মা'র বারণ ছিল। তখন ভাবতাম, ইশ কবে যে বড় হবো ! একসময় ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাশ করলাম তারপর শুরু হলো কলেজ ভর্তি যুদ্ধ, মনের ভিতর অনেক আগেই সিটি কলেজ ঢুকে বসেছিল বলে অন্য কলেজে ভালো মতন পরীক্ষা দেই নি। সিটি কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখার সময় অনেক নার্ভাস ছিলাম যদি চান্স না পাই তাহলেতো আমার জীবন পুরাটাই তেজপাতা হয়ে যাবে।

ভালোয় ভালোয় চান্স পেয়ে গেলাম সিটি কলেজে এবং আমার সাথে চান্স পেল আরো অনেকে যারা বিভিন্ন স্কুলে পড়া বন্ধুরা, যাদের সাথে পরিচয় একই মহল্লায় থাকা নয়তো কোন প্রাইভেট টিউশনে পরিচয় এবং আমরা উনিশ জন মিলে একসাথে ভর্তি হলাম। একই ক্লাসে উনিশ জন। আমাদের প্রথম ক্লাস ছিল পিছনের বিল্ডিং-এ যেটিতে যেতে হল একতলার ক্যান্টিনকে পার হয়ে সিঁড়ি দিয়ে। সকালে মেয়েদের ক্লাস হত। এগারোটা পর্যন্ত তাদের ক্লাস চলত।

তারপর আমাদের ক্লাস আরম্ভ হত। আমাদের কিছু বিচ্ছু গোছের বন্ধুগুলো একটু ভাবটাব জমানোর জন্যে আগে ভাগে কলেজে এসে ক্যান্টিনে কাটাতো। ছেলে- মেয়েগুলো ক্লাস কামাই দিয়ে সমুচা সিংগারা নিয়ে ব্যস্ত থাকত আর খিলখিল হাসাহাসির মধ্যে সময় পার করত। এই সময় প্রায়ই হাফিজ স্যার বিরস মুখে হাজির হয়ে সবাইকে বকাবকি করে ক্লাসে পাঠিয়ে দিত। আমি কলেজ জীবনে এসে অনুভব করলাম, আমি বড় হয়ে গেছি কলেজে পড়ি।

একটু ভাব মারার চেষ্টা চালালাম, সারা জীবন শার্টের কলার, প্যান্ট, জুতা সব কিছু পরিপাটি করে চলতাম। কিন্তু কলেজে ঢুকেই ডেয়ারিং হয়ে গেলাম, নিজের ভিতর মস্তান টাইপের ভাব বিরাজ করল। রক্ত গরম বয়সে পা দিলাম। একাদশ শ্রেনীটা পার করলাম উইম্পি আর মালঞ্চতে আড্ডাবাজী করে। উফ! মালঞ্চতে সেই আলুর চপ বন খেতে যা দারুন লাগত প্রচন্ড মিস করি।

লম্বা ভ্রমনে রোজ রিকসা করে কলেজ, রিকসা করে বাড়ী ফেরা। যাদের একটু ভালবাসাসির দিন ছিল তারা কলেজ শেষে চলে যেত এলিফ্যান্ট রোডের কফি হাউজে কিংবা আরেকটু দূরে আজিজ সুপার মার্কেটের নিচে মিনি চাইনিজে। আমরা বরাবর আড্ডাবাজী, বাড়ী ফিরতে বিকাল। দ্বাদশ শ্রেনীতে শুরু হল আমাদের উপর রোলার কোস্টার অত্যাচার। সময় ঘনিয়ে আসতে লাগল ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার।

এই সাথে শুরু হলে ফুটবল ওর্য়াল্ড কাপ। আমরা সবাই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঢাকা কলেজের মাঠে ফুটবল খেলতে চলে যেতাম। পরের দিন পানিশমেন্ট হিসেবে আমরা সবাই বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হি হি করে হাসতাম। লেখালেখির অভ্যাসের কারনে স্যারটা বিশেষ স্নেহের চোখে দেখত, যা আমাকে আরো বেশী দুঃসাহসী করে তুলত। ক্লাসে পেছনের দরজা দিয়ে রোজ পালিয়ে যেতাম।

তাই পরের দিন এসে আবার বেঞ্চের উপর দাঁড়াতাম। এটি আমাদের রুটিন হয়ে গিয়েছিল আমাদের টিচাররা বলার আগে আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম। আজ সেই দিনগুলো প্রচন্ড মিস করি। আজ এমন একটা পাগলামো করতে ইচ্ছে যেগুলো আমি কলেজ জীবনে প্রতিদিন করতাম; ক্লাস পালানো, বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে যাওয়া , বেঞ্চ সরিয়ে ফেলা, খুব আনন্দ লাগত যখন কেউ ধপাস করে পড়ে যেত। আহা! কি আনন্দের সেই দিনগুলি।

শালার কেন যে বুড়া ধামড়া হয়ে গেলাম !! ৪ঠা সেপ্টেম্বর ,২০১২ ------------------------------------------------------------------------------------ লেখালেখি ৩৬৫ প্রজক্টে ৮৩/৩৬৫ পুরাতন লেখালেখিগুলো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।