আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'বনফুল'র ছোট গল্প "যেমন আছে থাক"

♪ একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়াল... শীষ দিয়ে গান গায় ধূসর খেয়ালে...♪ বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। তিনি বনফুল ছদ্মনামেই অধিক পরিচিত। তাঁর ছোট গল্প গুলো দারুন। "যেমন আছে থাক" গল্পটা আজ পড়লাম। ভালই লাগলো, তাই শেয়ার করলাম- "হঠাৎ তার ঘরে ঢুকে দেখলাম একটা সাবানের বাক্সে নানা রঙের 'রিবন' রয়েছে।

পাশেই আর একটা কৌটো, ঢাকনাটা প্লাস্টিকের, তার ভেতর নানা রকম পুঁতি। শেলফের উপরেই তিনটে মোটা খাতা, এক্সারসাইজ বুক। খুলে দেখলাম প্রত্যেকটিতে ছবিতে ভরা। একটাতে ওয়ালট ডিসনের আঁকা ট্রু লাইফ অ্যাডভেনচারস। আর একটাতে প্রজাপতি আর পাখির রঙিন ছবি।

কয়েকটা কুকুরেরও। সব সুন্দর ছবি। তৃতীয়টাতে ডাকটিকিট। ... ক্যালেন্ডার ঝুলছে এ পাশ ওপাশ। একটাতে ক্রন্দনোন্মুক একটি নাদুসনুদুস ছেলের ছবি, আর একটাতে তাজমহলের।

বাঁ দিকের শেলফে নিপুন ভাবে গোছানো বইয়ের সারি। অধিকাংশই কলেজের বই, কিন্তু 'সঞ্চয়িতা' এবং 'গীতবিতান'ও আছে। শেলফের পাশেই নীল টেবিলটা আর তার উপরে তার শৌখিন টেবিল লাম্পটা। সেকালে মফঃস্বলের মিউনিসিপালিটি রাস্তায় যে ধরনের আলো দিত, লাম্পটাও সেই রকম। দেওয়ালে আর একটি ল্যাম্প।

তার কাগজের শেদে চমৎকার ফুল কাটা, অনেকটা রঙিন আলপনার মতো। বিছানার ধারে ধবধবে সাদা বেড সুইচটি ঝুলছে। শৌখিন বেডকভার ঢাকা ছোট্ট বিছানাটি পাতাই রয়েছে। এর পাশেই একটা ছোটো শেলফ। তাতে ছোট্ট টাইমপীসটি রয়েছে, বন্ধ হয়ে রয়েছে, দম দেওয়া হয়নি বলে।

ঘড়ি ছাড়া টুকিটাকি আরও কতো জিনিস। অদ্ভুত আকৃতির বেঁটে সুন্দর একটা আতরের শিশি। তাছাড়া মাথার কাঁটা, চুলের ফিতে, ছোট ছোট ঝিনুক দিয়ে তৈরি ফুলের মতো একটি পেপারওয়েট। আর একটা পেপারওয়েট ডিম্বাকৃতি কাচের, গাঢ় বাদামী রঙের। আলমারিতে পুতুলের সমারোহ।

কেষ্ট নগরের লক্ষ্মী-সরস্বতী-মহাদেব। বৈদিক ধাঁচের দাঁড়ানো সরস্বতীও রয়েছে একটি। তাছাড়া ব্রোঞ্জের মতো দেখতে আর একটা কলসি কাঁখে তন্বী তরুণী। শান্তিনিকতনের পুতুল কৃষক-দম্পতি। স্ত্রীর মাথায় ঝুড়ি, পুরুষের কাঁধে শিশু পুত্র।

তার এপাশে একটি বক, আর এক-পাশে রবীন্দ্রনাথের একটি মূর্তি, তার পেছনে একটি শৌখিন ট্রে। ট্রের মাথার কাছে একটা টিকটিকি, আর একটা আরশোলা। দেখলে জীবন্ত মনে হয়, কিন্তু মাটির। বুদ্ধ-গয়া, শিব-লিঙ্গ, ধূপদানী, ফটো-ফ্রেম, ভুঁড়ি-বার-করা ন্যাড়া মাথা বিকশিত দন্ত একটা লোক, কাঠের তৈরি ড্রাগন, তারপরই প্যাঁচা একটা। ঠিক তার উপরে তিনটি অহিরিণী গোয়ালিনীর অপূর্ব মৃন্ময় মূর্তি, মাথায় দুধের কেঁড়ে নিয়ে হাত দুলিয়ে চলছে সদর্পে।

ফুলদানীই কত। পাথরের, মাটির, কাচের, পিতলের, চীনেমাটির। তার পাশেই রেঙ্গুন থেকে আনা লেকারের জিনিস, ফুলদানী, কৌটো, চায়ের ট্রে। তার অধারে চীনে-ধাঁচের বুদ্ধমূর্তি। তার পাশেই একটা কাপ, আবৃতি প্রতিযোগিতাই পুরস্কার পেয়েছিল।

শ্রীরামকৃষ্ণদেব আর শ্রীশ্রীমায়ের ফটোও রয়েছে। তাঁদের সামনে রঙিন ছোট ছোট থালায় কন্যাকুমারী থেকে আনা পাথরের চাল, আর নুড়ি রয়েছে নানারকম। নানা রঙের ঝিনুক এবং সামুদ্রিক শামুকের খেলাও। কোণে মোড়া রয়েছে কাগজের রঙিন পাখিটি। আরো কত জিনিস- ছোট ছোট কাপ, ছোট ছোট পাখি, মাটির ফল, কাঠের নেপালী ফুলদানী।

তার পিছনে গনেশ। ... ভুটান আর জাম্বু-কুকুর দুত-মুখ শুকিয়ে বসে আছে থাবার উপর মুখ রেখে। কোথা গেল! সদ্য বিবাহিত কন্যা সব ফেলে রেখে চলে গেছে শশুরবাড়ি। এখানকার একটি জিনিসেও আর দরকার নেই তার। নূতন জায়গায় নূতন জিনিস নিয়ে নূতন সংসার পেতেছে।

চারেদিকে তার সৃতিচিহ্ন দেখে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ওগুলো যেখানে যেমন আছে থাক। দেখে কষ্ট হচ্ছে বটে, কিন্তু এই কষ্টটাই মিষ্টি। এই মাধুর্যের সম্বলই তো একমাত্র সম্বল। " বনফুল ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।