আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডঃ ইউনুস, পদ্মা সেতু, তত্ত্বাবধায়ক সরকার; বলির পাঁঠা ও হুতুম পেঁছা।

হরবোলা হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুর পরে যে ক’জন বাঙ্গালীর নাম ও খ্যাতির ঢেউ বাংলার সীমানা পেরিয়ে বিশ্বদরবারে আঁছড়িয়ে পড়েছে-ডঃ ইউনুস তাদের মাঝে একজন। বাংলায় একটা কথা আছে, গেঁয়ো যোগী ভিক্ষা পায় না। ডঃ ইউনুসের ক্ষেত্রে তদ্রুপ বললে অত্যুক্তি হবেনা। কারণ রতনে রতন চিনে কাকে চিনে বেল। আর ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছলেন, “যে দেশে জ্ঞানীর কদর নাই সেদেশে জ্ঞানী জন্মায় না।

” ডঃ ইউনুসকে বিশ্ববাসী চিনতে পারলেও অধম বাঙ্গালী চিনেনি। অতিসম্প্রতি ডঃ ইউনুস স্বনামধন্য লেখক হুমায়ুন আহমেদকে দেখতে গিয়ে বলেছিলেন, “দেশে একজন মাত্র মানুষ ছিলেন তিনিও মারা গেলেন। ” অতিব সুন্দর কথা। বাংলাদেশের ১৫ কোটি বাঙ্গালী শুধুই বাঙ্গালী হয়ে কাঙ্গালী জীবন যাপন করল, কিন্তু মানুষ হলো না। ডঃ ইউনুস অত্যন্ত বিনয়ী বিধায় নিজের নামটি মানুষের খাতায় লেখেননি।

তাছাড়া নিজের কথা বলতে বাধে। তবে নিজের ঢোল নিজে বাজানো তেমন খারাপ কিছু নয়। তিনি তেমনটি করেননি। কিন্তু, আমরা পাঠক ও শ্রোতা নিজ গুণে বুঝে নিলাম, বাংলাদেশে আরো একজন মানুষ জীবিত আছেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও আমাদের গর্ব ডঃ ইউনুস।

হুমায়ুন স্যার দু’জনের একজন ছিলেন তাতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। তার প্রতি মানুষের ভালবাসার যে নজির আমি শহীদ মিনারে দেখেছি তা কোনদিন ভুলবার নয়। তবে অত্যন্ত সন্দেহবাতিক দূর্মুখেরা ডঃ ইউনুসকে নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যদা বোঝা উচিত। মৃত্যুর পর ফুল দেয়ার চেয়ে জীবদ্দশায় বুঝে শুনে গালি দেয়া উত্তম।

সন্দেহবাতিকদের সন্দেহের কারণ গুলো যুক্তিক কিনা তা বিচারের ভার পাঠক ও পর্যবেক্ষক মাত্রেরই আছে। এখানে শুধু কারণ গুলো তুলে ধরা হলঃ প্রথম কারণঃ ডঃ ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা কেউ স্বাবলম্বী হয়েছে এমন নজির বিরল। কিন্তু সর্বস্বান্ত হয়েছে এমন ঘটনা অহরহ। দ্বিতীয় কারণঃ গরীবের ব্যাংক বলা হলেও এর সুদের হার অনেক বেশী। তৃতীয় কারণঃ তার নোবেল প্রাইজের অর্থের কানাকড়িও বাংলাদেশের কল্যাণে ব্যয় করেছেন এমন নজির নেই।

চতুর্থ কারণঃ গ্রামীণ ফোনের সাথে ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। কিন্তু সে সমস্ত টাকার ছিঁটেফোটাও বাংলাদেশের কল্যাণে ব্যয় করেছেন এমন দৃষ্টান্ত নেই। পঞ্চম কারণঃ তাঁর সামাজিক ব্যবসার কোন ধরনের স্বচ্ছতা নেই। ষষ্ঠ কারণঃ তিনি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দীর্ঘদিন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ছিলেন ও অতিসম্প্রতি উক্ত ব্যাংকের এমডি পদের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণে লবি করছেন। সপ্তম কারণঃ বাংলাদেশের দারিদ্রকে পুঁজি করে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে তিনি মহান হয়েছেন।

কিন্তু বঞ্চিত ও অবেহেলিত মানুষ গুলোর ভাগ্যন্নোয়ণে তিনি বরাবরই নির্বিকার ছিলেন। অষ্টম কারণঃ দেশের সংকটকালে তিনি বরাবরই নিশ্চুপ ছিলেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সময়ে তিনি ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরে রাজনীতিতে এসেছিলেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিয়ে তার সহকর্মীদের রাস্তায় রেখে রাজনীতি থেকে সটকে পড়েছিলেন। নবম কারণঃ বাংলাদেশের দারিদ্রকে পুঁজি করে তিনি ব্যবসা করেছেন।

গরীবের ঘামের টাকা তিনি পকেটে পুরেছেন। রক্ত চুষে খেয়েছেন এই দেশের প্রান্তিক মানুষের। দশম কারণঃ গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব ধরে রাখার জন্য বিশ্বমোড়লদের ব্যবহার করে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলছেন। পরশ্রীকাতর ও সন্দেহবাতিক লোকদের নিকট আরো কারণ আছে। সব উল্লেখ করে পাঠকের ক্লান্তি বাড়াতে চাইনে।

দীর্ঘদিন যাবতঃ পদ্মা সেতু ও ডঃ ইউনুসকে নিয়ে হাওয়ায় একটা কথা ভাসছিল। আমাদের মত আমজনতা এসব কথায় কান দেয়নি। কিন্তু নিন্দুকেরা বলছে, থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে। ডন ডব্লিউ মজীনার অতিসম্প্রতিক উক্তি সন্দেহবাদীদের আশংকা সত্যি বলে প্রতিয়মান হতে যাচ্ছে। তাহলে কি বলবো, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের না ও তত্ত্বধায়ক ইস্যু একই সুত্রে গাঁথা? তা নাহলে ডন মজীনা পদ্মা সেতুর সাথে এ সবকিছু আনছেন কেন? গ্রামীণ ব্যাংক ও তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু একান্তই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

এসব বিষয়ে অন্যের নাক গলানো কতোটা সমীচীন? তাছাড়া ডন মজীনা সাহেবকে এসব অধিকার কে দিয়েছেন? হ্যাঁ, পদ্মা সেতু একটি বহুপাক্ষিক বিষয়। এখানে মজীনার ভূমিকা থাকতে পারে। কিন্তু অন্য দু’টি একান্তই আমাদের বিষয়। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা মানে আমাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত করা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ হচ্ছি।

আমরা কি পশ্চীমাদের টেডি বিয়ার হতে যাচ্ছি? কথায় কথায় ভারতের কাছে দেশ বিক্রির কথা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সম্রাজ্যবাদীদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার বিরোধীতা হয় না। সত্যি সেলুকাস বিচিত্র্য এই দেশ! যে দেশে ডঃ ইউনুসের মত লোক জন্মায় সে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারে কি? এদেশের আমজনতা ডঃ ইউনুসের কাছে সবিনয়ে আবেদন করে, আসুন খোলস ছেড়ে। আর নিশ্চুপ থাকবেন না। প্রতিবাদ করুন মজীনার বিবৃতির।

পরিষ্কার করুন নিজের অবস্থান। বাংলার জনগণকে বলুন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদের সাথে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের না বলার কোন যোগসাজশ নেই। গ্রামীণ ব্যাংক ও তত্ত্ববধায়ক আমাদের ইস্যু। এটা বিশ্বব্যাংক ও পশ্চিমা মোড়লদের আলোচনার বিষয় না। পদ্মা সেতুর জন্য আপনার মেধা ও শ্রম ব্যয় করুন।

পরশ্রীকাতর লোকদের মুখ বন্ধ করুন। তুমি অধম তাই বলে আমি উত্তম হবো না কেন? যাক, আপনাকে গুরুজনের আসনে দেখতে চাই। আপনি বাংলাদেশের ক্লেদাক্ত রাজনীতির পঙ্কিলে আঁটকে যাবেন না। আপনি যদি আপনার অবস্থান পরিষ্কার না করেন, তবে আওয়ামীলীগ বলবে আপনার ষড়যন্ত্রে বিশ্বব্যাংক; গ্রামীণ ব্যাংক ও তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকে পদ্মা সেতুর সাথে জড়িয়ে সরকারকে বলির পাঁঠা বানিয়েছে। উল্লেখ্য যে, আমজনতা যদি এমনটা বিশ্বাস করে তবে আমাদের আর কিছু করার থাকবেনা।

দেশের সুশীল সমাজের মাথা হেঁট হয়ে যাবে। হুমায়ুন স্যারের মৃত্যুর পর এদেশের একমাত্র জীবিত মানুষটিকে জীবদ্দশায় মৃত ঘোষণা করলে আমাদের দূঃখের সীমা পরিসীমা থাকবেনা। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আমরা আশাবাদী। আমরা আশাবাদী পদ্মা সেতু ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে। কিন্তু এই আশাবাদের মাঝে মাঝরাতে আমগাছের ডালে হুতুম পেঁছা ডেকে উঠলে মনটা অজানা শঙ্কায় কেঁপে উঠে।

দূর হ হুতুম পেঁছা! এই বাংলার আমগাছের ডালে তোর জায়গা হবেনা। ১৫ কোটি বাঙ্গালী আমগাছের ডাল কেটে তোর আস্তানা ঘুটিয়ে দেবে। আমরা জেগে আছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।