আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন হতে পারে ইসলামী নির্বাচন পদ্ধতি? (একটি ব্যক্তিগত পর্যালোচনা)

দেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। ইসলাম একটি বাস্তবসম্মত জীবনবিধান আল্লাহতা'লার পক্ষ থেকে মানব ও জ্বীন জাতির প্রতি প্রেরিত পথনির্দেশক। সমাজবদ্ধ প্রাণী হিসেবে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা সমাজের একটি গুরুত্বপুর্ণ উপাদান। ইসলাম এই শাসনব্যবস্থার রূপ নির্ণয়ে সর্বযুগের সর্বাধিক আধুনিক ও সঠিক বিধান দিয়েছে যার বাস্তব প্রয়োগ হলে মানুষ সত্যিকার অর্থেই শান্তি পাবে।

এই ব্যবস্থার অন্যতম সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো নেতা নির্বাচন। যেহেতু বর্তমানে কোথাও সম্পুর্ণ ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম নেই তাই সত্যিকার প্রয়োগ চোখের সামনে খুঁজে পাওয়াও সম্ভব নয়। তবে আজ আমার ব্যক্তিগত পর্যালোচনায় নেতা নির্বাচন কেমন হতে পারে তার কিছু বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। প্রথমত, রাসুলুল্লাহ (সা) যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনিই সবসময় সালাতে ইমামতি করেছেন (অসুস্থ হওয়ার সময়টুকু বাদে) এবং তিনিই যেকোন বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন। দ্বিতীয়ত, আমরা দেখতে পাই রাসুলুল্লাহ (সা) যখন কোন সাহাবীকে ভিন্ন অঞ্চলে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন তখন ঐ প্রতিনিধি উক্ত অঞ্চলে সালাতেরও ইমামতি করেছেন।

তাই, ইতিহাস থেকে একথা সহজেই বোঝা যায় যে, সালাতে ইমামতির সাথে নির্বাচিত শাসক হওয়ার বড় ধরণের সম্পর্ক রয়েছে (কিছু ব্যতিক্রম বাদে, যেমন নাবালক ও নারী ইমামের ক্ষেত্রে)। তাহলে আমাদের জানতে হবে ইমাম হওয়ার যোগ্যতা কি? আসুন দেখি রাসুলুল্লাহ (সা) এ সম্পর্কে কি বলেছেন, " يَؤُمُّ الْقَوْمَ، أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ، فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً، فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ، فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ سِلْمًا، وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ، وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ، إِلَّا بِإِذْنِهِ " “অধিক কুরআনধারী ব্যক্তি লোকদের ইমামত করবে; যদি তারা তিলাওয়াতে বরাবর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে সুন্নতে পারদর্শী সে; যদি তারা সুন্নতে বরাবর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে হিজরতে অগ্রগামী সে; যদি তারা হিজরতে বরাবর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে; আর কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কর্তৃত্বে ইমামত করবে না; কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বিছানায় তার অনুমতি ব্যতীত বসবে না”। মুসলিম: (১০৮৪) "কুরআনধারী ব্যক্তি" বলতে কি শুধুই কুরআন মুখস্ত এমন ব্যক্তিকে বুঝিয়েছে? নাকি একইসাথে যিনি কুরআন বেশী মুখস্ত রাখেন এবং কুরআনের বাণী বেশি বোঝেন তাকে বোঝানো হয়েছে? আমার মতে দ্বিতীয় ব্যক্তি অধিক উপযুক্ত। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেনঃ "আমাদের মাঝে কেউ যখন দশটি আয়াত শিখতেন, তখন তিনি সেগুলোর অর্থ না বোঝা পর্যন্ত এবং সে অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করতে না পারা পর্যন্ত এবং সে অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করতে না পারা পর্যন্ত আর সামনে এগুতেন না (অর্থাৎ নতুন কোন আয়াত পড়তে যেতেন না)। " (আল বায়হাকী, পৃষ্ঠা নং মনে নেই) অতএব, সাহাবারা কেবল কুরআন মুখস্ত করতেন না, তার অর্থও অনুধাবনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।

তাহলে আমরা রাষ্ট্রের নেতা নির্বাচনের জন্য কয়েকটি ধাপ ব্যবহার করতে পারি। ১ম ধাপ, মসজিদভিত্তিক এলাকা তৈরী করা, যেমন এখন শহরগুলোতে ওয়ার্ড থাকে (একটি এলাকায় একটিই মসজিদ থাকবে)। এই ধাপে এলাকার সকল মুসলিম মিলে তাদের মসজিদের ইমামতির জন্য একই এলাকা থেকে সবচেয়ে যোগ্য ইমাম নির্বাচন করবে। নির্বাচনে কোন প্রার্থী থাকবে না অর্থাৎ কেউ নিজের ঢোল নিজে পিটাবে না। এলাকার যেকোন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নির্বাচিত করা যাবে।

এই ধাপটাই সবচেয়ে কঠিন হবে মনে হয়। ২য় ধাপ, প্রত্যেক ওয়ার্ড বা এলাকার নির্বাচিত ইমামদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠিত হবে অনেকটা সংসদের আদলে। এই ইমামরা আবার জেলাভিত্তিক ইমাম নির্বাচন করবে। যতগুলো জেলা হবে ততজন ইমাম হবেন। এদের পদবী ভিন্ন হবে।

৩য় ধাপ, জেলা ভিত্তিক ইমামগণকে নিয়ে আরেকটি কাউন্সিল তৈরী হবে যারা বিভাগভিত্তিক ইমাম নির্বাচন করবেন। ৪র্থ ধাপ, এবার বিভাগভিত্তিক ইমামগণ মিলে একজন রাষ্ট্রের প্রধান ইমাম নির্বাচন করবেন। আমি জানিনা এই ধরণের নির্বাচন পদ্ধতি কোথাও আছে কিনা। তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হলে সর্বাগ্রে সকল নাগরিকের আদর্শ ইসলাম হতে হবে (অমুসলিমরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তবে তাদের মতামত দিতে হবে মানবতার উপর ভিত্তি করে)। তবেই এর সফল প্রয়োগ সম্ভব।

এটি খুবই সাধারণ একটি বেসিক পদ্ধতি বর্ণনা করলাম। এর ভেতরে আরো অনেক ধাপ হয়তো আসতে পারে। প্রশ্ন আসতে পারে, ওই রাষ্ট্রে কি কোন অমুসলিম থাকতে পারবেনা? অবশ্যই পারবে, তবে আল্লাহতা'লার ইবাদত বাদে অন্যান্য যেসব সৃষ্টির প্রতি দায়িত্ব ও মানুষের স্বাভাবিক সহজাত মানবিক গুণাবলী আছে সেসবের অন্যথা না করে তারা অন্য যেকোন জায়গার চেয়ে শান্তিতে এখানে বসবাস করতে পারবে। (কষ্ট করে যারা লেখাটি পড়বেন তাদেরকে আগাম ধন্যবাদ। এটিকে দয়া করে কোন প্রতিষ্ঠিত কিছু ভাববেন না, এটি আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।

) পাঠকবৃন্দের মতামতও আশা করছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.