আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ রিভিউ : নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে ছিল না বৈচিত্র্য

গভীর কিছু শেখার আছে .... প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদে চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে নাটকের প্রাধান্য ছিল। পাশাপাশি চ্যানেলগুলো চেষ্টা করেছে ব্যতিক্রমধর্মী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচার করে দর্শক টানতে। প্রায় তিন শতাধিক নাটক ও টেলিফিল্মের ভিড়ে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের সংখ্যা খুব উল্লেখযোগ্য ছিল না বললেই চলে। অন্যান্য বছরের ঈদ অনুষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, এবারের ঈদেও প্রচারিত নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য দেখা যায়নি। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রায় প্রতিটি চ্যানেলই এক পর্বের নাটকের পাশাপাশি ৫ থেকে ৬ পর্বের ধারাবাহিক নাটক প্রচার করেছে।

এগুলো আসলে দর্শকদের কথা চিন্তা করে প্রচার করা হয় কিনা সেটা মনে হয় ভাববার সময় এসেছে। কারণ সারা বছর দর্শকরা ধারাবাহিক নাটক দেখেন। ঈদের সময়ও যদি তাদেরকে সেই ধারাবাহিক নাটকই দেখতে হয় তবে ঈদ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তারা কোন বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন না। ২০০৮ সালে একুশে টিভি ঈদে প্রথমবারের মতো ৬ পর্বের ধারাবাহিক নাটক প্রচার করার পর অন্য চ্যানেলগুলোও যেন পরবর্তীতে ঈদে ধারাবাহিক নাটক প্রচারের বাধ্যবাধকতায় নিজেদেরকে বেঁধে ফেলে! ফলশ্রুত প্রতি ঈদে দর্শক দেখুক আর না দেখুক ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হচ্ছেই। অথচ ঈদে দর্শকদের বিভিন্ন আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে যাবার ফাঁকে প্রতিদিন একইভাবে ধারাবাহিক নাটক দেখার সময় বের করা বাস্তবিকই বেশ কঠিন।

এক্ষেত্রে দর্শকরা এক পর্বের নাটক দেখতেই বরং বেশি উৎসাহিত হন। অন্যদিকে ধারাবাহিক নাটকগুলোর প্রতিটি পর্বের মূল কাহিনীর সম্প্রচার সময় গড়ে ১৫ মিনিট করে মোট ছয় পর্বে দেখানো হয় ৯০ মিনিট, যা একটি টেলিফিল্মের দৈর্ঘ্যরে কাছাকাছি। এজন্য টেলিভিশনের কর্তা ব্যক্তিরা ধারাবাহিক নাটকগুলোকে টেলিফিল্মের দৈর্ঘ্যে নির্মাণ করে প্রচারের উদ্যোগী হতে পারেন। এতে করে দর্শকদের ভালো সাড়া পাবেন বলে আশা করা যায়। তবে এসবের ভেতরেও বাংলাভিশনে মাসুদ সেজানের রচনা ও পরিচালনায় ‘একদা এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল’ ও বৈশাখী টিভিতে পলাশ মাহবুবের রচনা ও হাসান মোর্শেদের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘হাঁটাবাবা রিটার্ন’ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

এক পর্বের নাটকগুলো প্রচলিত কমেডি ধাঁচের বৃত্ত থেকে এবার অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে বলা যায়। এ কারণে ঈদে বিষয়ভিত্তিক ও সিরিয়াস ঘরানার কিছু নাটক প্রচার হয়েছে, যে নাটকগুলো দর্শকরা দেখেছেন এবং বোদ্ধাদের প্রশংসা পেয়েছে। এনটিভি, দেশ টিভি, চ্যানেল নাইন, মাছরাঙা ও চ্যানেল ২৪-এর নাটকগুলোর নির্মাণ মান ও কাহিনীর গভীরতা ছিল প্রশংসনীয়। তবে বাংলাভিশন, এটিএন বাংলা, একুশে টিভি, আরটিভি ও বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত নাটকে কোনো নতুনত্ব চোখে পড়েনি। তারা কমেডি ধাঁচের নাটককেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে।

আর অপরাপর চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত নাটকগুলোর মাঝে ঈদের নাটকের কোনো বিশেষত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা ঈদ অনুষ্ঠানের নামে সারা বছর যেমন নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচার করে সেগুলো দর্শকদের কে দেখিয়েছে। তবে দর্শক এখন অনেক সচেতন। কারণ তাদের হাতে আছে এখন অসংখ্য চ্যানেল। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এখন স্যাটেলাইন চ্যানেলে বিস্তার ঘটেছে।

ফলে মানহীন ও ফালতু অনুষ্ঠান দিয়ে দর্শক আকর্ষণের চেষ্টা করাটা এখন বৃথা। এ কারণেই হয়তো হানিফ সংকেতের গ্রন্থনা ও পরিচালনায় ঈদের ‘ইত্যাদি’ ছাড়া বিটিভির অন্য কোনো অনুষ্ঠান কোনো দর্শক দেখেছেন বলে এখন আর শোনা যায় না। বাংলাভিশনে সাগর জাহানের রচনা ও পরিচালনায় আরমান ভাই সিরিজের সিক্যুয়াল ‘আরমান ভাই হাউজ হাজব্যান্ড’ যথারীতি দর্শকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। নাটকটির ‘আরমান ভাই’ চরিত্রে জাহিদ হাসান তার অসাধারণ অভিনয় প্রতিভা ধরে রেখেছেন। এবারের ঈদে প্রচারিত টেলিফিল্মগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো রেদোয়ান রনির পরিচালনায় ‘কিক অফ’।

এয়ারটেল নিবেদিত এই টেলিফিল্মরটির বিজ্ঞাপন ঈদের আগ থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় বেশ ঘটা করে প্রকাশ করা হচ্ছিল। এ কারণে টেলিফিল্মটিকে ঘিরে দর্শকদেরও আকর্ষণ ছিল। তবে পরিচালক দর্শকদেরকে হতাশ করেননি। দেশীয় ফুটবল নিয়ে ভিন্ন স্বাদের এই টেলিফিল্মটি দর্শকদের হƒদয় ছুঁয়ে গেছে। ফুটবল কোচ হিসেবে সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়াকে কাহিনীর সঙ্গে দারুণ মানিয়েছিল।

ক্রিকেটের মতো ফুটবলের প্রতি কিশোর-তরুণদের আকর্ষণ ফিরিয়ে আনতে এ রকম নাটক ও টেলিফিল্মের বিকল্প নেই। অন্যান্য দর্শকপ্রিয়তা টেলিফিল্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চ্যানেল আইতে ‘যদি ভালো না লাগে তো দিও না মন’, চ্যানেল ২৪-এ ‘অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ’, চ্যানেল নাইনে ‘না কমলা, না মেহেরজান’, মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত ‘মানুষ অথবা কিউই ফলের নেশা’, ও গাজী টিভিতে ‘নোলক’। ঈদের দিন একুশে টিভিতে দিপু হাজরার রচনা ও পরিচালনায় প্রচারিত ‘কুত্তা চোর’ নাটকটির কাহিনীর গভীরতা ও অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের অসাধারণ অভিনয় দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এ নাটকটিকে ঈদের অন্যতম সেরা নাটক হিসেবে বলা যেতে পারে। কমেডিধর্মী কিন্তু জীবনমুখী নাটকগুলোর মধ্যে সেরা বলা যেতে পারে দেশটিভিতে প্রচারিত ‘ওয়ান পিস মেড, কারিগর ডেড’।

নাটকের সংলাপগুলো মধ্যে অসাধারণ সেন্স অব হিউমার খুঁজে পাওয়া যায়। উপরন্তু ইরেশ যাকেরের সাবলীল অভিনয় নাটকটির অন্যতম প্রাণ বলা যেতে পারে। অন্যান্য দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিটিভিতে ‘বাবা’, এটিএন বাংলায় ‘শায়লাকে বলবেন না প্লিজ’, ‘বোঝা-না বোঝার বোঝা’, চ্যানেল আইতে ‘পিপীলিকা, ‘ঘাস ফুল নদী’, ‘সাহেব হলো নুরুল’, মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত ‘জর্দা জামাল’, ‘এখনো মুষলধারে বৃষ্টি ঝরে’, এনটিভিতে ‘লোভ’, ‘সবুজ ভেলভেট’, দেশ টিভিতে ‘আমি তৃণা ও ম্যাজিক’ এবং ‘মেক-আপ’। চ্যানেল আইতে ঈদের তৃতীয় দিন প্রচারিত শাইখ সিরাজের ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ যথারীতি অনুষ্ঠানটির মানের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে। [ফটো ক্যাপশন: যথারীতি দর্শক জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "ইত্যাদি"।

এবারের ঈদের ইত্যাদিতে সংগীত পরিবেশন করেন রুনা লায়লা। ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।