আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক বর্বর অমানবিক ধর্মীয় উৎসব।

প্রবাসী যাযাবরের দৃস্টিপাত উপন্যাসে ( বা সৈয়দ মুজতবা আলীর উপন্যাসে) পড়েছিলাম যে দুইজন জার্মান একসাথে হলে খোলে ব্যাঙ্ক, দুজন ইংরেজ একসাথে হলে খোলে ক্লাব আর দুইজন বাংগালী একসাথে হলে করে ঝগড়া। টোরোন্টো শহরে হিন্দুদের বেশ অনেকগুলো মন্দির আছে। বাঙ্গালী হিন্দুরা অবাংগালী হিন্দু থেকে আলাদা। বাংগালী হিন্দু আবার পশ্চিম বাংগলা’র হিন্দু এবং বাংলাদেশের হিন্দু। এই বাংলাদেশের হিন্দুদেরই আবার ৬টা ভাগ এবং ৬ টা আলাদা মন্দির।

অদুর ভবিষ্যতে আরো বাংলাদেশী হিন্দুদের মন্দির হবে এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। ঝুলিয়ে রাখা মানুষটি। গত শনিবার ফরাসী ভাষার ক্লাস করতে যেতে হয়েছিল বার্চমাউন্ট এভিনিউ দিয়ে হাইওয়ে ৪০১ পেরিয়ে বার্চমাউন্ট এবং হান্টিঙ্গটন ড্রাইভ ইন্টেরসেকশনে। ওয়ার্ডেন সাব ওয়ে স্টেশান থেকে ১৭ নং বাস নিয়ে যত উত্তরে যাচ্ছিলাম লক্ষ্য করলাম দক্ষিন ভারতীয় লোকের সংখ্যা বাড়ছে। আগ্রহ নিয়ে পাশে বসা দক্ষিন ভারতীয় ভদ্রলোককে জিজ্ঞেষ করে জানলাম যে দক্ষিন ভারতীয় হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে হিন্দু ধর্মাশ্রম মন্দিরে।

ক্লাস শেষে ফিরে আসার পথে নেমে পড়লাম হিন্দু ধর্মাশ্রম মন্দিরের সামনে। হিন্দু ধর্মাশ্রমের নাম আমি আগে শুনেছি কিন্তু যাওয়া হয় নি এবং জানতামও না যে ওটা বার্চমাউন্ট রোডের উপরেই। যাই হোক বাস স্টপেজ থেকে নেমেই চোখ পড়ল ৪/৫ টা রথের মত ঘর। তাতে পুজারী বসে আছেন । সবচে’ অমানবিক যে ঘটনা চোখে পড়ল তা হল একজন মানুষের পিঠে বরশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

উপুড় হয়ে ৪ হাত পা শুন্যে চার দিকে ছড়ানো পিঠ উপর দিকে মানুষটার। বৈদ্যুতিক মোটর লাগানো কপিকল দিয়ে নামানো উঠানো হচ্ছে মানুষটাকে । বরশি গেলা মাছ পানির উপর তুলে ডাঙ্গায় নিয়ে আসার আগ মুহুর্তে ছিপের সাথে যেমন ভাবে ঝুলতে থাকে তেমনি ভাবে ঝুলছে মানুষটা। পিছনের দড়ি দিয়ে খুটি গুলো থেকে ঝুলান ছিল মানুষটাকে। মুখের সামনে দেখা যাচ্ছে জিহবায় ফোটানো রুপোর সাপ।

সাথে ক্যামেরা ছিল। ছবি তোলার জন্য এগিয়ে গেলাম। দুঃখের বিষয় ঝুলন্ত অবস্থায় সে লোকের ছবি তোলার আগেই মাটিতে নামানো হল মানুষটাকে। মানুষটা যখন পায়ের উপর দাড়ালো তখনো তার পিঠের চামড়ায় দুটো মোটা মোটা বরশী বিধে আছে । সামনে থেকে দেখে আরো অবাক হলাম।

লোকটার মুখের ভিতর দিয়ে ডান থেকে বা দিকে একটা তীর ফোটান আর ঠোটের মধ্যে ফুটান একটা রুপার তৈরী সাপ। উপ[স্থিত মহিলারা উলুধ্বনি দিলেন। কি কি যেন বলছিলেন তামিল ভাষায় তা আমি বুঝতে পারি নি। ভদ্রলোকের মুখের ভিতর দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে লোহার তীর। নেতৃস্থানীয় একজনের কাছে এ উৎসব সম্পর্কে জানলাম।

ভুলে গেছি উৎসবের নাম তবে তা চলে ১৫ দিন । শেষের আগের দিন ছিল গত শনিবার। ঐদিন বড়শি দিয়ে ঝূলিয়ে রাখা হয় একটা মানুষকে ৫/৬ ঘন্টা। বাংগালী হিন্দুদের চড়ক পুজার নাম আমি শুনেছি যদিও দেখি নি কোনদিন। শুনেছি চড়ক পুজায় একইভাবে পিঠে বরশী ফূটিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয় মানুষকে।

ব্যাপারটা শুধু মাত্র অমানবিক নয় মনে হল বর্বরতাও বটে। এটা কি ধর্ম? আমি জানি না। পিঠে বরশি দিয়ে মানুষ ঝুলিয়ে পুন্য হয় কিনা তাও আমি জানি না। তবে ধর্মের নামে এই কুসংস্কার সত্যি পীড়াদায়ক। কয়েকজন পুলিস ও দায়িত্ব পালন করছিলো ।

কানাডা সরকার ধর্মীয় সহনশীলতায় বিশ্বাসী তাই হয়ত হস্তক্ষেপ করে নি। তবে আমার মনে হয়েছে এ পুজো বন্ধ হওয়া উচিত। বর্বর বুনো মানুষের এ ধর্ম হতে পারে । সভ্য সমাজে এই নৃশংস পুজো করা এক মুর্খতা এবং অমানবিক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।