আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শত বছর ধরে চিপলেও যে লেবু তেতো হবে না... একক পরিবার না যৌথ পরিবার...কোনটি ভাল?...পর্ব-১

আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় অর্ধযুগ হতে চললো। তার উপর আমি একটি যৌথ পরিবারের বউ। এর ও উপরে যে যোগ্যতা আমাকে একজন পরামর্শদাতায় পরিণত করেছে তা হলো আমি হাউজওয়াইফ নই। আমার সমবয়েসী কিংবা ছোট বড় বান্ধবীরা যারা এখনো বিয়ে করেনি কিন্তু করবে করবে ভাবছে, তাদের যখনই বিয়ের প্রস্তাব আসে তারা আমার কাছে জানতে চায় যৌথ পরিবারে বিয়ে করবে কিনা? কি কি অসুবিধা হতে পারে? কত আশঙ্কায় যে তারা অস্থির হয়?আমি অবাক হয়ে ভাবি আমি বিয়ে করার আগে আমার মাথায় এসব চিন্তা আসলো না কেন? সবার সাথ থাকবো কি একা থাকবো এটা যে একটা বড় ইস্যু হতে পারে তা মাথাতেই আসে নি। ভাগ্যিস আসে নি তাহলে আমিও নিশ্চইয় একক পরিবার কে বেছে নিতাম।

অনেক ছোটখাট অসুবিধা থেকে হয়তো মুক্তি পেতাম কিন্তু অনেক বড় বড় সুবিধা তো হাতছাড়া হয়ে যেত। শুধু যারা বিয়ে করবে করবে করছে তারাই নয়। বিয়ের পর যৌথ পরিবারে আছে এমন অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য খুঁজে নেয় আমাকে। এই যেমন সেদিন লাঞ্চ আওয়ারের কিছুক্ষণ আগে শান্তার ফোন। “এই তুই আজকে আমার সাথে লাঞ্চ করতে পারবি? তাহলে আমি তোকে পিক করব”।

“কিরে সেদিন বিয়ে করলি কোথায় বরের সাথে লাঞ্চ তা না বেরসিকের মত বান্ধবীর খোঁজ” হাসতে হাসতে বললাম আমি। “আরে রাখ তোর বর,শনিবারে বর পাব কই? তার তো আজ ছুটি। কিরে একটু সময় বের কর না মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে আছে”। না শান্তাটা একটু ও বদলায়নি। সেই আগের মতই কোন কারণে রাগ হলে মন খারাপ হলে আমাকে তার বলতেই হবে।

কি আর করা রাজী হয়ে গেলাম। রিসেপসানের পর তো আর দেখা হয়নি তাই ওকে দেখারও লোভ হচ্ছিল খুব। আজ আমার অফ ডে। শুধু একটা মিটিং এর জন্য অফিসে আসা। সকাল বেলাতেই মিটিংটা হয়ে যাওয়ায় আমি ফ্রি।

তাই শান্তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই সেদিন বিয়ে হল এর মধ্যে কি এমন হলো ওর। এসময় তো মেয়েরা ফুরফুরে মেজাজে থাকে। বান্ধবীদের কথা তো তাদের মনেই থাকে না। ফোনটা আবার বেজে উঠল “ কিরে নেমে আয়”।

সারাপথ এটা সেটা নানান কথা হল। আমি ভাবলাম যাক বাবা বাঁচলাম কোন সমস্যা হয়নি। খেতে খতে সখী আমার মনের কথা বলা শুরু করলেন। শান্তার কথা শুনে আমি হাসব না কাঁদবো বুঝতে পারলাম না। আমি ওকে বললাম “ দেখ যদি তুই আমার বন্ধু না হতিস তাহলে আমি ভাবতাম তুই একটা টিনেজার।

আরে তোর মত ম্যাচিউর একটা মেয়ে এমন হাস্যকর ব্যাপারে কষ্ট পায়?” তাহলে খুলেই বলি তার কি অভিযোগ। সে আর তার ননদ সমবয়েসী। বলাই বাহূল্য ননদিনী এখনো অবিবাহিত। দুজনেই চাকরী করে। প্রায় একই সময়ে তারা দুজন বাসা থেকে বেরোয়।

সকালবেলা তার শাশূড়ীমা মেয়ে কি খাবে, কি টিফিন নিয়ে যাবে তাই নিয়ে অস্থির। দেখলে নাকি মনে হয় মেয়ে কেজি স্কুলে পড়ে। শান্তার এ মন্তব্য শুনে অবশ্য আমি স্থান কাল পাত্র ভুলে খুব হেসেছিলাম। যার জন্য শান্তার মৃদু তিরস্কারও শুনতে হয়েছিল, “সুখে আছ তো তাই তুমি তো হাসবেই”। যা হোক ছেলে তো অফিসেই খায়।

কিন্তু বউকে নিয়ে নাকি তাঁর কোন চিন্তাই নেই। সে তো গেল। অফিস থেকে মেয়ে ফিরলে নাকি তার সে কি আফসোস “আহা আমার মেয়েটার কত কষ্ট? এই কে আছিস ওকে শরবত করে দে। বাসায় পড়ার জামা বার করে দে”। শান্তার ক্ষেত্রে এই আদিখ্যেতাগুলো হয় না বলাই বাহূল্য।

সমস্ত কিছুতেই মেয়ে নিয়ে উনি অস্থির। “তাতে তোর কি হয়েছে? উনার মেয়েকে তো উনি টেককেয়ার করবেনই এটাই স্বাভাবিক” আমি বলতেই শান্তার চোখ ছলছল করে উঠলো। “ আমার বুঝি কষ্ট হয় না? আমি আমার মা বাবাকে ছেড়ে এসেছি। আর কই মা তো কখনও আমাকে এত টেককেয়ার করত না”? “ কি মুশকিল একেকজনের প্রকাশভংগী একেক রকম। তাছাড়া আন্টি জব করতেন ওনার এত সময় কই? তাই বলে কি উনি তোকে কম ভালবাসেন বল”? “তা না আমি তোকে বোঝাতে পারব না আমার খুব কষ্ট হয়।

রাগ হয় কেন উনি আমার সাথে এমন করেন না? আমাকে যদি ওনাকে মা ভাবতে হয় উনি কেন আমাকে মেয়ে ভাবতে পারেন না?” শান্তার কন্ঠে চাপা ক্ষোভ “ এখনো নতুন তাই কিছু করতে হয়না। পুরোনো হলে দেখবি এই কাজগুলো আমাকেই করতে হবে। ননদ ঠিক মত খেল কিনা, অফিস থেকে ফিরে শরবত বানিয়ে দিতে হবে। আমি ও যে কষ্ট করে এলাম তা মাথাতেই আনা যাবে না”। পরিবেশ হালকা করার জন্য আমি রসিকতা করে বললাম “তুই ও এখন থেকে বাসায় ফিরেই বলবি আমাকে ও একগ্লাস শরবত করে দাও।

উহ অনেক টায়ার্ড লাগছে”। রেগে যাচ্ছে দেখে ওকে বললাম ওর যদি কোন কাজ করতে ভাল না লাগে তাহলে করার দরকার নাই। ওর এখন যে মানসিক সমস্যাগুলো হচ্ছে তা হয়তো সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো এমন দিন আসবে ও তার শাশূড়িমার সাথে গলা মিলিয়ে ননদের কষ্ট নিয়ে আফসোস করবে। তবে সেদিন আসতে হলে যে বস্তুটার প্রয়োজন তা যদি তার নতুন পরিবারের লোকজন দিতে কার্পণ্য করে তার দায়ভার একা বউটা নিবে কেন? সেই ভালবাসা নামক বস্তুটা আছে বলেই না এখনো এই যুগেও যৌথ পরিবারগুলো বহাল তবিয়তে টিকে আছে।

(এটা পড়ার পর শান্তা নির্ঘাত আমাকে গুলি করবেঃ)ঃ)) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।