আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রাবনের অতিথি। (ছোটগল্প)

আমি মনে প্রাণে একজন মুসলিম। ঘৃণা করি ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ছাগু তথা উগ্রবাদীদের। ক্যঁচাল পছন্দ করিনা । । আকাশ আধার কালো।

ঢালছে অবিরত বর্ষণ। রাস্তা জনমানবশুণ্য। মাঝে মাঝে দু একজনকে ছাতা মাথায় পথ চলতে দেখা যায়। তবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেও বের হয়নি। বারান্দায় বেধে রাখা বাহাদুর মাঝে মাঝে ম্যাঁ-ম্যাঁ করে ডেকে ওঠে।

শ্রাবনের দিন গগণ জুড়ে মেঘ। বৃষ্টিময় দিন। আমি বসে আছি বৈঠকখানা ঘরের চেয়ারে কবিতার পান্ডুলিপিগুলো হাতরাচ্ছিলাম। জানালা দুটি উন্মুক্ত, গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে বৃষ্টি মাথায় কিছু কিছু পথিকের পদচারণা দেখছিলাম। অনেকে ছাতা মাথায় দিয়ে বিভিন্ন কাজে যাচ্ছিল।

বারান্দায় দড়ি দিয়ে বাধা ছিল রামছাগলের এক বিরাট খাসি নাম তার বাহাদুর। খাসিটি আমার পোষা কিন্তু একদম হাড়ে বজ্জাত!.. শুধুমাত্র আমাদের বাড়ির লোকজনকেই খাতির করে। অপরিচিত কাউকে নাগালের মধ্য পেলেই ব্যস!.. এমন গুতো মারবে যে তার অন্তত এইখাসির সামনে আসার শখ মিটে যাবে। বাহাদুরের শিং ছিলো অনেক লম্বা এবং রং ছিলো ব্রাউনের মধ্য ছোপছোপ সাদা। দেখতে অনেকটা হরিনের মতো।

বৃষ্টি তখন কমেছে। টিপটিপ করে পড়ছে। আসরের আজান হয়েছে কিন্তু আকাশের বেজার মুখের জন্য মনে হচ্ছিল সন্ধ্য লেগে গেছে। আমি টুকরো কাগজের লেখা কবিতাগুলোতে একটা পান্ডুলিপিতে লিখতেছিলাম। কিছুক্ষণ পরই ঝুপঝুপ করে শুরু হল বৃষ্টি।

বাহাদুর তখন বারান্দায় উত্তর পাশে বাধা ছিলো। বৃষ্টি দেখে মেয়ে দুইটি বারন্দায় আশ্রয় নিতে আসলো তাও আবার বাহাদুরের কাছে!.. ব্যস!.. বাহাদুর তার নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটায়নি সজোরে এক গুতো মেরে মেয়ে দুটিকে বারান্দাছাড়া করেছে। মেয়েদুজনের চিৎকার শুনেই আমি দরজা খুলে বারান্দায় আসলাম। দেখি ওরা দুজন ভয়ে বৃষ্টিতে জড়োসড়ো হয়ে খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে ভিজতেছিল। সাথে সাথে আমি বাহাদুর বলে ডাক দিলাম।

খাসিটি আমার কাছে এলো আমি ওর কান টেনে ধরে মেয়েদুটিকে বারান্দায় উঠতে বললাম। ওরা তাই করলো। বাহাদুরের গলার দড়ি খাটো করে বেধে আমি ঘরের মধ্য চলে এলাম। মেয়েদুজন ও ঘরের মধ্য এসে পড়ল। বৈদূতিক বাল্বের আলোয় তাদের চিনতে পারলাম।

আমাদের গ্রামেরই মেয়ে ওরা দু বোন। একজনের নাম আদ্রিতা এবং অন্যজনের নাম খাদিজা। বয়সে খাদিজা বড়। দেখতে দুজনকে একই রকম। মনে হবে জমজের মত।

দেখতে খুবই সুশ্রী দুজন। যেমনি ফর্সা তেমনি সুডিল। বয়স কেমন হবে!.. হয়তো আদ্রিতার ১৩ বছর খাদিজা ১৫ বছর হবে। আমিও তখন ম্যনেজার৥বাবার হেটেল ছিলাম। আমার বয়স হয়তো ১৫/১৬ ছিলো তখন।

আমার কাজ ছিলো তখন ২টা । ১. স্কুলে যাওয়া। ২. ক্রিকেট খেলা। আর মাঝে মাঝে উর্বর মস্তিস্কে নিষ্ক্রিয় ভাবনা গুলোকে ছন্দাকারে কাগজে লিপিব্ধ করা। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম।

বয়স বড়জোর ১৫/১৬ তখন। ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টিতে দুজনেই আধাভেজা হয়ে আছে। আমি ওদের বসতে বলে একদৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে এলাম। আম্মার ঘর থেকে গামছা এনে দিলাম। প্রথমে খাদিজা তার চুল খুলে মুছতে লাগলো।

আমি অবাক বিষ্ময়ে দেখলাম অনেক লম্বা তার চুল একদম কোমড় পর্যন্ত। আদ্রিতারও চুল বেশ বড় তবে সামনের দিকে বব কার্টিং। সাদা ধবধবে চেহারা দেখতে অত্যান্ত চমৎকার। দুই বোন তখন বসে অপেক্ষা করছে বৃষ্টি থামার। আমি আবার ডুব মেরেছি পান্ডুলিপিতে।

হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠের শব্দ শুনে তাকালাম। দেখি আদ্রিতা বলছে কি এত মনযোগ দিয়ে লিখছেন? না তেমন কিছুনা একটু দেখতে পারি? আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। হ্যা মানে হ্যা অবশ্যই । ওদের দুবোনকে দুটো পান্ডুলিপি দিয়ে আমি ৪ নং পান্ডুলিপিতে কাগজে লেখা কবিতাগুলো লিপিবদ্ধ করতে লাগলাম। আবার প্রস্ন এগুলো কার লেখা? আর বলবেনা অবচেতন মনে যা আসে তাই লিখি এগুলো উর্বর মস্তিস্কের নিস্ক্রিয়ভাবনা এছাড়া কিছু নয়।

দুজনেই হাসছে আমার কথা শুনে..। এরপর একটাই মন্তব্য করলো আদ্রিতা “বেশ সুন্দর লেখেনতো…। জানিনা সুন্দর না ছাই!. আজগুবি সব ভাবনা…হয়েছে অনেক পড়েছো এবার পান্ডুলিপি দাও। ওরা পান্ডুলিপি ফেরৎ দিলো। সন্ধ্যা তখন পুরোদমে…মাগরিবের আজান হলো মসজিদের মাইক থেকে।

এবার আদ্রিতা আর খাদিজা নড়ে চড়ে বসলো ওরা বলাবলি করছে নানু বাড়ি আর যাবনা রাত হয়ে যাচ্ছে চলো বাড়ি ফিরে যাই। দুবোনই একমত হলো। বাহিরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি। ওরা বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়ী যাওয়ার চিন্তা করছে। আমি বললাম ওয়েট..আবার বাড়ীর ভিতরে গমন করলাম।

আমাদের বাড়ীতে সর্বমোট ৩টি ছাতা নিয়ে বৈঠকখানা ঘরে এলাম। সাথে আমার মাকেও নিয়ে এলাম। আম্মা ওদের দেখে চিনলেন। আম্মার বান্ধবীর মেয়ে ওরা। আম্মা অনেকবার বললেন বাড়ির ভিতরে যেতে কিন্তু ওরা রাজী হলোনা।

রাত হয়ে যাচ্ছে এজন্য। অবশেষে আম্মা বললেন ছাতা নিয়ে ওদের বাড়ী পর্যন্ত পৌছে দিতে। আমরা রাস্তায় চলছি ছাতা নিয়ে। আগে আদ্রিতা ও খাদিজা পেছনে আমি। মাঝে মাঝে আকাশ গর্জণ করে তখন ওরা থেমে যায়।

আবার হাটতে শুরু করে। একসময় প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হলো নিকটেই মনে হলো। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম সাথে ওরা দুজনও। থেমে গেলাম একটা মক্তবের বারান্দায়। রাস্তায় বের হতে সাহসে কুলোচ্ছিল না।

এবার আদ্রিতা বলল থেমে গেলেন যে, এত ভয় পেলে কি চলে? ওর কথা শুনে সাহস ফিরে পেলাম। আবার হাটেতে আরম্ভ করলাম। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরই ওদের বাড়ি এসে পড়লাম। বাড়ী প্রবেশের সদর দড়জায় ওদের রেখে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। ওরা ওদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিষণভাবে বলতেছিল এমন কি আদ্রিতা হঠাৎ আমার হাত ধরে ফেলল হাত ধরে বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য টান দিল।

আমি শুধু বললাম। অন্যদিন দেখা হবে। রাত হয়ে যাচ্ছে এখন রাস্তায় লোকজন শুণ্য হয়ে যাচ্ছে। আম্মা চিন্তা করছে এই বলেই চলে আসলাম। একটি ছাতা মাথায় এবং দুটো ছাতা হাতে নিয়ে পথ চলছি।

দুটো হাতই বন্ধ। টর্চ জ্বালানোরও কায়দা নেই। আবার বজ্রপাত হলো বিকট শব্দে….। এবার আর সামলাতে পারলামনা…পা পিছলে পড়ে গেলাম। আছাড়টা ভালোই লেগেছে উঠতে বেগ পেতে হল।

এবার ছাতা বন্ধ করে একটি দৌড় দিলাম….একদৌড়ে বাড়ী চলে এলাম। এখনো বাদল দিনে সেই পুরনো দিনের স্মৃতি ভেসে ওঠে দৃষ্টির অকপটে। ভেবে কিছুটা পুলকিত হই। সেই ১৬/১৭ বছর আগের স্মৃতি… যা ভেবে একটা দির্ঘশ্বাষ বের হয়। তবে কি আমি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম আদ্রিতার প্রতি?িএরপর দুবছরেরও কমসময় গ্রামে ছিলাম।

তারপরে চলে আসি শহরের বাসাতে। ক্লাস এইটে ভর্তি হই। ঈদের সময় বাড়ি যেতাম মাঝে মাঝে হাটতে হাটতে চলে যেতাম ওদের বাড়ির সামনের রাস্তায় যদি দেখে সে আমায়? একবার যদি বলে আসেন আমাদের বাড়িতে…। ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।