আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ, বাংলার ঐতিহ্য ও একটি গান

কবি হওয়ার ভান করি, উদাস হই; ভালোবাসার মাহাত্ব খূঁজি রাশেদুল হাসান ‘ওমন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ এ গানটি ঈদ ঐতিহ্যকে ধারণ করে রেখেছে বহুকাল ধরে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ গানটি যে, ঈদের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এ কথাটার সঙ্গে নিশ্চই কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব এ ঈদ। ছোটকালে ঈদের চাঁদ দেখতে গিয়ে সে কি লাফালাফি। ঢিল ছুড়ার তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে ছেলে মেয়ে প্রায় সবার মুখে একই সুর ‘ওম... ন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

এ গানটি মিনিটে মিনিটে বাজিয়ে রেডিও টেলিভিশন ঈদের আগমনী বার্তা প্রচার করে। সন্ধ্যার দুসর আকাশে যারা চাঁদ দেখলো কিংবা যারা দেখলোনা এ গানটি বাজার সাথে সাথে বুঝে ফেলে চাঁদ দেখা গেছে, আগামী কাল ঈদ। সারা রাত গানটি রেডিও বিভিতে বাজত শোনা যেত। এ মুহুর্তে আমার এ চিন্তার হেতু কি এমন প্রশ্নচিন্তা অমূলক নয়। কেউ হয়তো ভাবছেন গানটিতো এখনো বাজে বা বাজতে শুনেছি তাহলে এ ব্যাটার মাথা ব্যথার কারণ কি? প্রফেশনাল কারণে গোটা রমজান মাসটা দারুন ব্যস্তার মধ্যে কাটা হয়।

তবে রমজানের শেষ মূহুর্তে কাজ নেই বললেই চলে। ঘুরে ফিরে অলস সময় কাটানো। সময় যেন যেতে চায় না। ঈদের আরো দু’একদিন বাকী হাতে কোন কাজ নেই। সময়টা লেখা-পড়ায় কাটাতে চাই।

লেখালেখির সামান্য নেশা থাকায় চিন্তায় ডুবি। এবারও সাতাশ রমজান থেকে হাতে কোন কাজ নেই। এর আগেই সম্পাদনার পাঠটা ছুকিয়ে শাহাদাতের সঙ্গে বকবক করছি। আড্ডা মারছি এখানে ও খানে। দেখতে দেখতে চাঁন রাত (ঈদের আগের দিন) এসে গেল।

সিএনজি করে শহর থেকে বাড়ী ফিরছি। পথে ঈদ প্রস্তুতির অনেক আয়োজন চোখ এডালো না। রাস্তায় ছিকা মেরে ঈদ মোবারক লেখা হালো, কোথাও কোথাও লাইটের বন্দোবস্ত করা হলো। রাজনৈকতক নেতাদের তোরণ, পোস্টারের কথা না হয় নাই বললাম। দু’চারটা আতশ বাজির আওয়াজও কানে বিদ্ধ হলো।

পথে কোথাও কোথাও মাইক কিংবা সাইন্ড বক্স’এর শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম। ওয়েস্টার্ন, রক কিংবা হিন্দি গানের মহোৎসবে প্রশ্ন জাগে আজ ঈদ না ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’! সিএনজিটা বাজারে এসে থামলো। পরিচিতদের সাথে দেখা হলো, কেউ ফোন করলো এখানে এসো ওখানে এসো। পুরো বাজার টা ঘুরে দেখলাম। দফায় দফায় আড্ডা চললো।

চা-আইসক্রীমের সাথে সাথে কত স্বপ্ন খাওয়া হলো তার ইয়ত্তা নেই। বাজারের গোলিতে গোলিতে সেই সাউন্ড বক্স, সেই হিন্দি, ওয়েস্টার্ন ও রক গানের লম্ফঝম্প। একটি বারও সে ঐতিহ্যের গান, ঈদের গান ‘ওমন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ একবারও শুনলাম না। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন। দুপুর ছুইছুই।

এ পযর্ন্ত একটি বারের জন্যও এ গানটি শোনা হলো না আমার। এ না শোনাটা আমার সীমাবদ্ধতা না অযোগ্যতা আমার জানা নেই। না বর্তমান হাল হাকিকত (সভ্যতা) সম্পর্কে আমার মূখ্যতা! এ কোন সভ্যতারে বাবা ঈদের দিনের মত অনুষ্ঠানে রক! হিন্দি! নাম গন্ধ নেই ঈদের গানের! এ কোন সভ্য সমাজে বাস করছি আমরা। যে সভ্যতা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ভুলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি লালন করতে উদ্বুদ্ধ করছে। যে সভ্যতা দেশীয় সংস্কৃতির পরিবর্তে ডিজুস সংস্কৃতি চালু করছে।

আমরা কোথায় যাচ্ছি, কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমাদের জাতীসত্ত্বা। আমরাকি ক্রমশ অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছি? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।