আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চার সিটিতে যে কারণে শাসকদের পরাজয়

দেড় বছর ধরে রাজশাহীর মানুষ গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। নির্বাচনের সাত দিন আগে লাগল সেই সংযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা এর নাম দিয়েছে ‘নির্বাচনী গ্যাস’। এই ‘নির্বাচনী গ্যাস’ মেনে নিতে পারেননি ভোটাররা। তবে তাঁরা স্বীকার করেছেন, রাজশাহীর জন্য অনেক কিছু করেছেন খায়রুজ্জামান লিটন।


এ সরকারের আমলে ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনা প্রভাব ফেলেছে সিলেটে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পেছনে অন্যান্য জাতীয় ইস্যুর মতো এটাও একটা কারণ, যদিও ইলিয়াস আলীর সমর্থকদের তেমনভাবে কাছে টানতে পারেননি আরিফুল হক চৌধুরী। ইলিয়াস আলীর সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব ছিল। তিনি এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট টেনেছেন। সুশীল সমাজের ভোটও তাঁর বাক্সে গেছে।


মেয়র হিসেবে নির্বাচন করার জন্য অনেক দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আরিফুল হক। মন্দির, শ্মশানঘাট উন্নয়নে অনেক টাকা ব্যয় করেছেন। বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে প্রায়ই বলতে শোনা গেছে, সুশীল সমাজের ভোট তাঁর না হলেও চলবে, তিনি ‘মেহনতি’ মানুষের ভোটেই জিতে আসবেন। এসব নিয়ে সুশীল সমাজের সঙ্গে তাঁর একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ভোট নষ্ট হবে বলে তিনি ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করেননি।

এলাকার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা দূর করতে তেমন কিছু করেননি। অন্যদিকে আরিফুল হক চৌধুরী প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে কাউন্সিলর হয়েও সিলেটের উন্নয়নে কাজ করেছেন। নগর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে টাকাপয়সা আত্মসাতের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও সিলেটের উন্নয়ন হবে ভেবে মানুষ আরিফুল হক চৌধুরীকে ভোট দিয়েছেন।
রাজশাহীতে শেষ মুহূর্তে গ্যাসের সংযোগ নিয়ে খায়রুজ্জামান লিটন নিন্দিত হয়েছেন।

এ ছাড়া, জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের পর সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে পুলিশ, এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। এ ঘটনায়ও আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক নষ্ট হয়েছে। আছে এমন আরও ঘটনা, যার মাসুল গুনতে হয়েছে খায়রুজ্জামানকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নাগরিক কমিটি করে খায়রুজ্জামানের পক্ষে কাজ করেছিলেন। এবার আওয়ামী লীগ ও নাগরিক কমিটির মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না।

খায়রুজ্জামানকে নির্বাচনী প্রচারে অনেকটা একাই মনে হয়েছে।
বরিশালেও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ আছে। বরিশালে বিএনপির ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকলেও নির্বাচনের সময়ে তা ছিল না। আবদুল্লাহ আল নোমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার মানুষকে বলেছেন, আহসান হাবিব কামালকে ভোট দেওয়ার মানে ধানের শীষে ভোট দেওয়া। ব্যক্তি শওকত হোসেন হিরণ যেমনই হোন না কেন, এলাকার নির্বাচনে যা-ই করুন না কেন, আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল মেটাতে পারেনি।

জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে মহানগর সভাপতি শওকত হোসেন হিরনের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের কথা এলাকার লোকজনের অজানা নয়। আওয়ামী লীগ শওকত হোসেনকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে এলাকার লোকজনের মধ্যে। এ ছাড়া, নির্বাচনের দুই দিন আগে বিএনপির এক কর্মীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ভোটাররা ভালোভাবে নেননি।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেকের কাছ থেকে ভোটারদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর দুর্ব্যবহার। খালেক লোকজনকে গালিগালাজ ও মারধর করছেন, এমন ভিডিওচিত্র সিডিতে ধারণ করে খুলনার মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর বিরোধীরা।


সব মিলিয়ে সদ্য শেষ হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় ইস্যুর পাশাপাশি স্থানীয় বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ফলে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীরা নির্বাচনের ময়দানে হালে পানি পাননি। পাশাপাশি দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব তো ছিলই।

(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন বরিশাল থেকে রাজীব নূর, খুলনা থেকে শেখ আবু হাসান, রাজশাহী থেকে আবুল কালাম মো. আজাদ ও সিলেটে থেকে সুমনকুমার দাশ)।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।