আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাকুরীজীবী, প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের জীবন চক্র এবং আমার খামার ভাবনা ...

গাড়ি থেকে নেমে মূল ভবনের দিকে হাটতে লাগলাম আমি, গাজ্জালী ও ডঃ বাদায়ুনী। বাগানের বা দিক থেকে একটা ডাক আসল (গাজ্জালীকে ডাকা হল)। তাকিয়ে দেখি পাইপ দিয়ে গাছে পানি দিচ্ছেন আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব, বিনয়ী সেই মহামানব। হ্যাঁ, ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ ... আমার বড় মামা একজন অবসরপ্রাপ্ত আয়কর কর্মকর্তা। ঢাকায় ৩ টি বাড়ি, ২ টি দামী গাড়ি, ৫ টি জায়গা (বাসাবো ৪ কাঠা, মিরপুর এক বিঘার কিছু বেশি, আশুলিয়া, সাভার ২ বিঘা ও বাড্ডায় সাড়ে ৫ কাঠা জায়গা) আছে।

অর্থ্যাৎ টাকার হিসেবে প্রায় কম-বেশি ১৫-১৭ কোটি টাকার মালিক। মামির কাছে শুনেছি ব্যাংকে সেভিংস কত টাকা আছে তা হিসেব করে বলতে হবে (!!!)। তিনি কিভাবে এত টাকা কামাই করেছেন তা সবাই জানে। যারা পাঠক তারাও অনুমান করে ফেলেছেন। আমার বড় ফুফা একজন সচিব ছিলেন।

খুব শক্তিশালী এক মন্ত্রনালয়ের। শুনেছি সেই চেয়ারর সচিবরা নাকি প্রতি মাসে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি বিভিন্ন দিকের সম্মানী কথিত ঘুষ পায়। তিনি সচিব হিসেবেই ছিলেন প্রায় ২৭ মাস। তার আগে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ন সচিব, উপ-সচিব সহ অনেক দায়িত্বই পালন করেছেন। আমার হিসেবে তার থাকার কথা কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা।

কিন্তু তার তেমন কিছু নেই। ঢাকায় খুব সাধারণ এলাকায় একটি তিনতলা বাড়ি, মেরাদিয়া ৬ কাঠা, টঙ্গীতে ৪ কাঠা জায়গা, একটি স্টারলিট গাড়ি ছাড়া ব্যাংকে পেনশনের পাওয়া খুব বেশি টাকা আছে বলে আমার মনে হয় না। আমার ছোট মামা আমেরিকাতেই থাকেন। প্রতিদিনই চেটিং করি তার সাথে। এমন কোন মাস নেই ২/২.৫ লক্ষ টাকা আয় না করেন।

কিন্তু খরচা-পাতি বাদ দিয়ে নানির পান-সুপারির টাকা পাঠাতেও ওনার আমার সাথে দেনা-পাওনার ঝামেলায় যেতে হয়। তাই আমি মাঝে মাঝেই মামাকে প্রশ্ন করি, আমেরিকা থেকে তোমার লাভটা কী? আমাদের অনেক আত্নীয়-স্বজন ও পরিচিত অনেকেই আছে যারা মালয়শিয়া, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে থাকেন। আমি যখন মালয়শিয়া যাই, তাদের অনেকের সাথেই দেখা করি। তাদের থাকা, খাওয়া, পরিশ্রমের অবস্থা দেখলে যে কারো কস্ট লাগবে। অথচ থাকা, খাওয়া বাদ দিয়ে তাদের ৪/৫ হাজার টাকাও থাকে না।

লন্ডনে যতদিন ছিলাম, খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে টাকার সমস্যায় পরি কিনা আবার। এতটাই এক্সপেনসিভ। সেখানের বাংলাদেশীরা যারা অবস্থায় চলে গেছে তারা ঠিক আছে, কিন্তু নতুন যারা যাচ্ছে তারা প্রথমত কোন কাজই পাচ্ছে না, দ্বিতীয়ত খরচাপাতি বাদ দিয়ে দেশে টাকা পাঠানোর কোন রাস্তাও দেখছে না। তাছাড়া সেসব দেশে বাংলাদেশীদের খুব ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে এখন। আমেরিকাও ব্যতিক্রম নয়।

আমার ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সি এস ই থেকে অনার্স কমপ্লিট করে ১০,০০০ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করেছে প্রায় দেড় বছর। এখন অন্য একটা ফার্মে জয়েন করেছে যেখানে ২২,০০০ টাকা সম্মানী পাচ্ছে। অরেক ভাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করবে এ বছর। চাকুরীর টেনশনে তার অবস্থা দেখলে আমি মনে মনে হাসি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাস্ট ক্লাস পেয়ে যদি এই অবস্থা হয় তবে কিভাবে চলবে।

আমার শিক্ষা - ১. বড় মামার মত হতে হলে সততা, নীতি বিসর্জন দিয়ে চাড়াল মানসিকতার হতে হবে। মানুষের জন্য, দেশের জন্য ভাল কিছু করা তো যাবেই না বরং সর্বোচ্চ ক্ষতি করা যাবে। ২. বড় ফুফার মত সৎ চাকুরীজীবী হলে শেষ জীবনে কষ্ট করতে হবে। তার মত এই বয়সে এসেও নিজে বাজারে গিয়ে বাজার করে আনতে হবে। ৩. ইচ্ছে করলেই ছোট মামার এখানে আমেরিকায় অথবা লন্ডনে চলে যেতে পারি, কিন্তু যোগ-বিয়োগে কোনই লাভ হবে না দেখেছি।

কেননা যারা ২০/২৫ বছর সেসব জায়গায় কাটিয়ে টাকা জমিয়েছে, তারা এখন দেশে এসে ভাল ব্যবসা খুজতে খুজতেই হয়রান। কয়েকজন আমার পরামর্শের দিকে তাকিয়েও আছে। আমি ২০০২ সালে চীনে গিয়ে প্রথম উপলব্ধি করি বাংলাদেশের লোকসংখ্যা যা আছে তাদের উৎপাদনমূখী করা গেলে বেকারদের অস্থিরতা কমে আসবে। উৎপাদন বাড়বে প্রায় ১৮-২০ গুন। উৎপাদিত পন্য বিদেশে রপ্তানী করে দেশ হবে স্বাবলম্বী, অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ।

চীনে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ইন্ফুয়েন্সড হই, যখন দেখলাম তাদের প্রতিটি খামারী প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষুদ্র খামারী ছিল (সেই এলাকাটাই ক্ষুত্র খামারীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া ছিল)। কিন্তু ক্রমবর্ধমান উৎপাদনে তারা প্রত্যেকেই কোটি কোটি টাকার খামারী। অনেক খামার আছে যেগুলো হেটে পার হতেই ৫/৬ মিনিট লাগে। অথচ তারা প্রত্যেকেই ক্ষুদ্র খামারী হিসেবে সরকার থেকে রেশন নিত ২০ বছর আগেও !!! এক খামারী আমাকে গুয়াংঝু এগিয়ে দিয়ে গেল তার বি এম ডব্লিউ স্যুট গাড়ি দিয়ে। আপনারা সম্ভব হলে এই উৎপাদন বিপ্লব নিজেরাও ভিজিট করতে পারবেন।

আমার পূর্ববর্তী পোস্টগুলোতে আমি আলোচনা করেছি যে একজন গ্রাম্য শিক্ষিত যুবক যদি চাকুরীর খোজে শহরে না এসে, ৫/৬ লক্ষ টাকা টাকা খরচ করে বিদেশে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে মাত্র ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পুজি বিনিয়োগ করে খামার শুরু করে, তবে মাত্র ১০ বছর পরই সে এক বৃহৎ খামারী হয়ে যাবে। ৩০/৩৫ বছর পর তার খামারের শ্রমিকই লাগবে ২০-৩০ জন। শেষ জীবনে ৮/১০ কোটি টাকার মালিক হতে তাকে আমার মামার মত অসৎ উপায় অবলম্বন করতে হবে না। চাকুরীর পেছনে দৌড়ান, বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করার আগে এই বিষয়টি চিন্তা করলে অনেক যুবক আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারবেন না। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, দেশের খাদ্য-পুস্টি চাহিদা পূরণ করে, দেশের অথনীতিকে সহযোগীতা করেই একজন বেকার যুবক তার কাঙ্খিত লক্ষ্য "চুড়ান্ত আর্থিক স্বচ্ছলতা"-য় পৌছাতে পারবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।