আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসব কুলাঙ্গার সন্তানের জন্যই মনে হয় জাহান্নাম! চোখের পানি আটকাতে পারলামনা: বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে কাটছে স্বজনহারাদের রোজার মাস

জীবনটা বরই আজব! যখন জীবণ সাদাকালো থাকে তখন মানুষের কাছে জীবণটা মূল্যহীন মনে হয়! কিন্তু কিছু কিছু সময় আসে যা মানুষের মনকে সাত রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দিয়ে জীবণের মূল্যটা অনেক অংশে বারিয়ে দিয়ে যায়! আবার কখন চোখের পলকেই সব নিঃশ্বেষ হয়ে যায় অনেকে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকেন, হয়তো এখনি সন্তান এসে আব্বা আম্মা বলে ডাকবে- প্রতিদিন ঐ সময় এই স্মৃতি বুকে ধরে শুধু চোখের পানি ছাড়েন। আসলে কেউ আসবে না। চোখের জলেই হবে তাদের চির বিদায় বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। অন্যরকম কষ্টকর ও ভাবনার একটি চিত্র- বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে কাটে স্বজনহারাদের রোজার মাস- চার বৃদ্ধার মৃত্যু, দাফনেও আসল না আপনরা- আমরাও কি পাশ্চাত্যের অমানবিক জীবনের দিকে? "মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই ইহার চেয়ে নাম যে মধুর, ত্রিভূবনে নাই। " কাজী কাদের নেওয়াজ স্বার্থের জুয়াখেলায় মত্ত এই বিচিত্র পৃথিবীতে আমরা এতটাই ব্যস্ত যে জীবনের জন্য ধ্রুব মৃত্যুর কথাটাই ভুলে গেছি।

এমনি সামনে দিয়ে মৃত মানুষের লাশ নিয়ে গেলেও মনে হয় না মরব। অথচ ঠিক আগামী কালই আমাদের সবাইকে নিম্ন মানের সেলাই বিহীন কাপড় নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। সন্তান, আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনহারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পুরো রমজান মাস কাটলো চোখের জলে। কেউ কেউ ভুলতে পারেননি তাদের পুরানো স্মৃতি। স্ত্রী, স্বামী, সন্তান ও নাতী-নাতনীদের নিয়ে রমজান মাসে এক সঙ্গে ঘরে বসে ইফতার করতেন।

এতে কতই আনন্দ উপভোগ করতেন। কয়েকজন বৃদ্ধ বলেন, চাকরি কিংবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকলে ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে স্ত্রী ও সন্তানদের কথা মনে পড়ে যায়। কখন তাদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করবেন। তখন চাকরি কিংবা ব্যবসায়ের কাজ রেখে অথবা দ্রুত শেষ করে বাড়ি ফিরে যান। এমন কি স্ত্রী ও সন্তানরা পিতা কখন আসবে? ইফতারি প্রস্তুত করে বসে থাকতো।

কোন কারণে ইফতারিতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে ঐ দিন বাসায় আপনজনদের ইফতার ঠিকমত হতো না। কিন্তু বয়সের ভারে পরিবারের সবার প্রিয় ব্যক্তি এক সময় আয়-উপার্জন করতে অক্ষম হওয়ায় সবার বোঝা হয়ে যান। বৃদ্ধের প্রতি মানসিক ও শারীরিকসহ কতই নির্যাতন নেমে আসে। অবশেষে নাড়ি ছেড়া ধন ও কলিজার টুকরা সন্তানদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা পিতা-মাতা সইতে পারেননি। চোখের পানি মুছতে মুছতে বাড়ি থেকে পাড়ি দেন অচেনা পথে।

অবশেষে ঠাঁই নেন হূদয়বান ব্যক্তি ও শিল্পপতি প্রতিষ্ঠিত বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। বৃদ্ধাশ্রমে রমজানে ইফতারের সময় তাদের সেই স্মৃতি মনে পড়ে। অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ইফতারি হাতে নিয়ে কেঁদে ফেলেন। জীবনের শেষ সময় কলিজার টুকরা সন্তান কিংবা আপনজন দ্বারা বিতাড়িত হয়ে একাকী ইফতার করতে হবে, এটা তাদের কল্পনার বাইরে। অনেকে বলেন, এটা তাদের কপালের লিখন।

প্রতিদিন রমজানে ইফতার ঘনিয়ে আসার ঘণ্টাখানেক আগে বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে তারা একে অপরের পুরনো স্মৃতি নিয়ে গল্প করেন। অনেকে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকেন, হয়তো এখনি সন্তান এসে আব্বা আম্মা বলে ডাকবে, আসেন ইফতারের সময় হয়েছে, এক সঙ্গে ইফতার করি। প্রতিদিন ঐ সময় এই স্মৃতি বুকে ধরে শুধু চোখের পানি ছাড়েন। আসলে কেউ আসবে না, চোখের জলেই হবে তাদের চির বিদায় বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। তখনো শেষ বিকালের লালচে আলোর খেলা চলছে দিগন্তে।

নতুন আরেকটি সন্ধ্যার আগমনী সংকেত বাজছে। কেন যেন পুরোনো মানুষদের কথা ভীষণ মনে পড়ছিলো। কিভাবেই যে টুপটাপ ঝড়ে গেছে চারপাশের প্রিয় মানুষগুলো। যে জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে রাস্তাটা কোথাও যেন হারিয়ে গেছে। রাস্তাও বোধ হয় পথ হারায় কখনো কখনো।

কিন্তু আমাদের বাবা মারা তো সন্তানের জন্যেই সব কিছু করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এমন কোন বাবা মা কি আছে যারা সন্তানের জন্য নিজেদের সুখ, স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দেননি। যে বাবা মা জীবনের ধন ভেবে সন্তান সংসার আঁকড়ে ধরে রাখে, সেই সন্তানই একদিন বড় হয়ে সেই বাবা মা যে জীবন ধারাতে অভ্যস্ত সে জীবন ধারাটা পালটে দিতে চায়। তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার কোন মূল্য দিতে চায় না। তাদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে বরং আমাদের সিদ্ধান্ত তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাই।

আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি একটি বয়সে আমরাও বুড়ো হব। যাদের আমরা বলি বুড়ো হয়েছে, বেশী কথা বললে বলি; ভিমরতিতে ধরেছে, ভেবে কি দেখি আমিও বুড়ো হবো, কানে শুনবো না হয়তো, স্মৃতিভ্রম হবে, হাত-পা কাঁপবে। এমনও তো হতে পারে রাতের আধাঁরে হঠাৎ বেড়িয়ে পড়তে পারি অতীতের খোঁজে। এখন যারা বলি আমি সন্তানের বোঝা হবো না, তাদের দয়া ওপর নির্ভর করবো না, আমি তাদের এই ধারনার সাথে কখনোই একমত হতে পারি না। আমার সন্তান আমাকে দেখবে না তো কাকে দেখবে? আমার সব কিছুইতো সন্তানের জন্য, সন্তানতো আমার।

আমার সাথেতো সন্তানের রক্তের বন্ধন। কেমন আছেন প্রবীণ নিবাসে নির্বাসিত দুখিনী মায়েরা কেমন আছেন তারা জানতে চাইলে অনেকেরই চোখে পানি এসে যায়! কেউ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন, ভাষা খুঁজে পান না। আবার কেউ পাছে সমাজে প্রতিষ্ঠিত সন্তানের মানহানি হয় কিংবা ছেলের রক্তচক্ষু দেখতে হয়—সে ভয়েও গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। কেউ আবার নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেন—‘চোখের সামনে না থাকুক, তবুও আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। ’ পিতা মাতা বেঁচে থাকতে আমরা বুঝি না।

তাই সবার জন্য উত্তম, যাদের পিতা মাতা জীবিত আছে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা। আর যাদের পিতা-মাতা জীবিত নেই তাদের জন্য দোয়া করা, যেভাবে আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমার পিতা-মাতার সাথে সেই ধরনের করুণাপূর্ন আচরণ করো, যেভাবে তারা শিশুকালে আমার জন্য করেছিল’। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, “পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে আদের কে ‘উহ’ শব্দটিও বলোনা এবং তাদেরকে ধমক দিওনা, তাদের সাথে শিষ্ঠাচার পূর্ন কথা বলো”। সূরা বনী ইসরাঈল-২৩ Daily Naya Diganta  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।