আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

।। যে পত্রকথা হাওয়ায় উড়ে-২।।

♠ ব্লগার ইমন জুবায়ের ♠ মেঘের আড়ালে থাকা একটি নক্ষত্রের নাম প্রথম পর্ব পড়তে চাইলে যে পত্রকথা হাওয়ায় উড়ে-১ নিরু, আজ বৃষ্টি নেই। আকাশে কোন তারাও নেই, কোথায় যেন গেছে ওরা। হয়তো আজ ছুটি পড়ে গেছে ওদের তাই বেরুতে গেছে। চারপাশে থমথমে ভাব। ঘরে ফিরে জানালা খুলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম তবুও হাওয়া এলোনা।

কৃত্রিম হাওয়াটাও বন্ধ হয়ে আছে। ইলেকট্রিসিটি নেই। কদিন ধরেই এমন ইচ্ছে, রোজ রাত্তিরে মেঘ ডাকলেই হাওয়া হয়ে যায় সে। অনেকদিন পর পুরোনো সেই গ্যাসের বাতি জ্বাললাম আজ। অনেক কাজ বাকী পড়ে আছে, তাই ভাবলাম আলো ফিরবার আগে ঘরটা অন্তত গোছাই।

ঘর গোছাতে গিয়ে দেয়ালে টাঙ্গানো পুরোনো একটা পেইন্টিং এর দিকে চোখ আটকে গেলো। পেইন্টিংটা অরজিনাল নয় রেপ্লিকা তবুও আশ্চর্য রকমের একটা দ্যুতি আছে। অপরিচিত অঙ্গনার খসে পড়া কাপরের ভাজে বাধা চুল, আর উন্মুখ পিঠের উঠোন ভেসে আছে পেইন্টিংটায়। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছিল তাই কিনেছিলাম। আজ ওটাতে চোখ রাখতেই মনে হলো তোমার চুলের মতোই একটা চুলেল আভাস আছে পেইন্টিংটায়।

বছর দুয়েক আগে ঋষিকোন্ডা সৈকত দেখতে যাচ্ছিলাম কয়েকজন মিলে। হাওরা ষ্টেশন থেকে বিশাখাপত্তনমে যাবো, তাই তিরূপতি এক্সপ্রেসে উঠেছিলাম। ট্রেন থেকে নামার পর এক মাঝবয়সী লোকের হাতে দেখতে পেলাম তারপর দর কষাকষি অতঃপর কেনা। ঋষিকোন্ডার ‘দ্যা পার্ক’ হোটেলে বসে পেইন্টিংটি নিয়ে ভেবেছিলাম যে,কোন অনুষ্ঠানে এটা কাউকে গিফট দিয়ে দেব। কিন্তু সে হয়নি আজ মনে হলো না দিয়ে ভালোই হয়েছে।

থেকে যাক আমার কাছেই। মাঝে মাঝে কল্পনা করা যাবে। গত দুদিন আগে তোমার চিঠি পড়ে কয়েকবার ভেবেছি উত্তর লিখে ফেলবো কিন্তু হয়নি। একটা ছোট্ট ঘটনা আমাকে ভাবিয়েছে অনেকক্ষণ। আমি যাদের শ্রদ্ধা করি, পছন্দ করি তারা সময়ের কালক্ষেপনে অজানা কারনে আমার কাছ থেকে একসময় দুরে চলে যায়।

কোন একদিন সেটা বুঝতে পেরে ফিরে আসতে গিয়ে দেখে সে পথটা অস্পষ্ট হয়ে আছে! কেন যে এমনটা ঘটে, তা বুঝে উঠতে পারছিনা। কিছু লোক আমার আড়ালে আমার গুন কীর্ত্তন করে বেড়ায় সে বিষয় আমার আর কোন মাথাব্যথা নেই। এ চিঠি লিখতে গিয়ে তাই মনে পড়ছে রবী’র গীতাঞ্জলীর কয়েকটি পঙ্তীর কথা লোকে আমায় নিন্দা করে, নিন্দা সে নয় মিছে- সকল নিন্দা মাথায় ধরে রব সবার নীচে শেষ হয়ে যে গেল বেলা, ভাঙল বেচা কেনার মেলা- ডাকতে যারা এসেছিলো ফিরল তারা রোষে। গীতাঞ্জলী যারা আমার নিন্দে করে আমি মনে করি তারাও আমার বন্ধু, আমার স্বার্থকতা সেখানেই, এই যা, নিন্দে করে হলেও ওরা আমার কথা মনে করে রেখেছে। আজকাল এক একবার ভাবি শামুকের মতো করে আর কতাকাল নীরবতা নেব এ বুকে? একবার গঙ্গাফরিঙ হয়ে যাই।

একটু না হয় ছুটে চলি পাখির মতো। আবার এসব কথা মনে করে নিজেই হেসে চলি কি ভাবনার খেয়াল আমার। সময় যখন পেয়ে গেছি এবার কদ্দিন নিজের ইচ্ছে মতো করে লিখে পাতা ভরে ফেলবো। জানিনা তা সম্ভব হবে কি-না! নীরু, তোমাকে গত চিঠিতে বলেছিলাম জীবনকে উপভোগ করতে শেখো। এভাবে নিজেকে হারিয়ে দিওনা।

হয়তো কথাগুলো তোমার মাথায় আছে, তবে তা যে কতটুকু তুমি মেনে চলেছো তা কিন্তু বুঝতে পারছি না। আমি না হয় উদাস পথিক। তারপরও নিজেকে নিয়ে ভাবি। যদিও আমি কষ্ট নামক চারা গুলোকে অতি যতেœ পরিচর্যা করে বড় করে তুলি। অজানা কোন কোন কারনে তাকে লালন করি।

তবুও কিন্তু আমি প্রতিদিন হাসতে ভুলি না। তুমি কি জানোনা ‘কষ্ট নামক কান্নার পাতাটিকে রঙ্গীন হাসির পাতায় ঢেকে রাখতে হয়’। আনন্দ- কষ্ট হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যেন পরস্পর-পরস্পরের বন্ধু। আমি হলাম সকালের মতো প্রতিটি সুর্যদয়ের প্রথম অনুভবে আমি মিশে থাকি তোমাদের চোখের মাঝে, আমাকে প্রতিদিন কষ্টানন্দ মুদ্রা নিয়ে দিন শুরু করতে হয়।

প্রতিটি মানুষের জীবনে আনন্দের অনেক চেক থাকে তা সঠিক ভাবে খরচ করতে পারলেই দুঃখ ব্যাংকে আর তার সুদ গুনতে হয় না। নিরু তুমি অল্পতেই হেরে যেওনা কখনো। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক মানুষের মাঝেই সফলতা ব্যর্থতা আছে। তোমাতে যা আছে তা তোমাকে একদিন আলোড়িত করে তোলবে। নীরু রাত অনেক হয়ে এলো চিঠি শেষ করতে হবে এবার।

তার আগে নজরুলের সেই কবিতার লাইন গুলো বলতে ইচ্ছে করছে, কারণ কাল তুমি বলেছিলে আমরা সবাই এই গ্রহ ছেড়ে একদিন চলে যাবো। দু-বেলার যত কথা-অপকথা বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে তা, একদিন,থেমে যাবে। কারো কারো আগে কেউ কেউ চলে যায়। যদি তোমার আগে যাই চলে তাহলে আমিও কবির মতো বলে যাবো, আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন, তুলতে সে-ফুল-গাঁথতে মালা কাপবে তোমার বন্ধন- কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন। শিউলি ঢাকা, মোর সমাধি পড়বে মনে, উঠবে কাঁদি।

-অভিশাপ নিরু দেখো চিঠি পড়ে আবার চোখের জল ফেলোনা। এমনিতেই তোমার কাছে আমি বড্ড ঋণী হয়ে গেছি। আর আমায় ঋণী করোনা। জানো তো সবচে শান্তি হলো সরলের মতো করে সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসা। মেঘ ডাকছে।

কোথায় যেন বর্জ্রপাত হলো। রাত এখন মধ্যবর্ত্তী। একটু পড়েই সেহরীরর ডাক পড়বে। ঘুমুতে যাই আজ। ভালো থেকো নিরু।

নিজের মতো করে। ============================================= ১৫ ই আগষ্ট-২০১২ সুসং নগর রিভার ষ্ট্রীট,  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।