আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিতার জন্য এক জীবন

শোয়াইব জিবরান কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন তাঁর জীবনের পুরোটাই ব্যয় করেছেন কবিতার পেছনে। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু এ পরিচয় তাঁর কাছে কখনই বড় ছিল বলে আমার কাছে মনে হয়নি। তিনি তা মনেও রাখতেন বলে মনে হত না। নব্বই দশকে আমরা যখন তাঁর সাথে আ্ড্ডা দিতে শুরু করি তিনি আমাদের মিশতেন বন্ধুর মতো।

আমরা যে ছাত্র এটা মনেই রাখতেন না। অথচ তখনই তিনি পূর্ণ অধ্যাপক। কথাবার্তা এমন করে বলতেন যেন ইয়ার-দোস্ত। আমরা খুব আসকারা পেতাম। তাঁর প্রয়াণের পর এখন বুঝতে পারছি তিনি সারাক্ষণ থাকতেন কবিতাগ্রস্ত।

আমরা তরুণ কবিরাই ছিলাম তাঁর সে কবিতাগ্রস্ততার সঙ্গী। কাল যখন তাঁকে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে আনা হলো চারিদিকে তাকিয়ে দেখি শেষ পর্যন্ত তাঁর শেষ যাত্রায় বিদায় জানাতে এসেছি ক’জন তরুণ কবিই। কোন মন্ত্রী আসেননি, এমপি,আমলা আসেননি। এসেছি শুধু কবিরা। সিনিয়র কবিদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক আর মুহাম্মদ নুরুল হুদাকে চোখে পড়ল।

জানাযায় এক কাতারে দাঁডিয়েছি আমি, বন্ধু চঞ্চল আশরাফ, কবির হুমায়ুন, শামীমুল হক শামীম, শামীম রেজা এরকম আর বিশ পঁচিশ জন। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। যদি কাল ওখানে আসতো একজন তৃতীয় শ্রেণির ঔপন্যাসিকের মরদেহ, বা দলবাজি করা কবির তাহলে শোকের হল্লা পড়ে যেত। মন্ত্রী এমপি, আমলারা আসতেন। খোন্দকার আশরাফ হোসেনের দোষ ছিল তিনি ভাল লিখতেন, রাজনৈতিক দলবাজী করতেন না।

আর ভাল লেখার কদর এ রকমই এ পোড়ার দেশে। জানাযায় দাঁড়িয়ে চোখ ফেটে জল এলো। যোগ্য কোন সম্মানই তিনি পাননি। না পুরস্কার না রাষ্ঠ্রীয় পদক। মরার মাস আগে পেশাগত তিনি যে পদ পেয়েছিলেন সেটি তাঁর কাম্য ছিল বলে আমার কাছে মনে হয়নি।

কবি কেন ভিসি হতে যাবেন। তিনি কবিই হতে চেয়েছিলেন। জীবন বিনিয়োগ করেছিলেন কবিতার জন্য, শুধু কবিতার জন্য। এবং তিনি কবিই শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে। বিদায় প্রিয় কবি আশরাফ হোসেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।