আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

●● ''সিরাতুল মুস্তাকিম'' বা ''সহজ সরল পথ '' কি ? ●●

সুখ সেতো অধরা; ভালো করেই জানি, মর্ত্যলোকে ঘুড়ে বেড়াই আমি অভিমানী। আল্লাহ ইচ্ছে করলেন তিনি এমন এক 'সৃষ্টি' করবেন যার মধ্যে আল্লাহর সমস্ত গুন ও 'স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি' বিরাজ করবে। 'স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি' যার অর্থই হলো এই 'সৃষ্টি' ইচ্ছে করলেই আল্লাহ্‌র হুকুম অমান্য করে নিজেরাই জীবন ব্যাবস্থা, আইন কানুন তৈরি করে নিতে পারবে। অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টি করলেন আদমকে। এবং নিজের রুহ আদমের মধ্যে ফুঁকে দিলেন।

(সুরা সিজদাঃ৯, সুরাঃ হিজরঃ২৯) ফলে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে আদম হয়ে গেলো আল্লাহ্‌র গুনে গুণান্বিত এক অনন্য সৃষ্টি। আল্লাহ নিজে তার নিয়ম-কানুন ও হুকুমে সমস্ত সৃষ্টিকে পরিচালনা করেন। কিন্তু মানুষকে পরিচালনার ভার তিনি নিজে সরাসরি নিলেন না এবং তিনি মানুষকেই ভার দিলেন আল্লাহর হুকুম মোতাবেক সমস্ত পৃথিবীকে পরিচালনা করার জন্য। মানুষ যদি আল্লাহর দেয়া হুকুম দিয়ে তাদের ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাস্ট্রীয় অর্থাৎ সার্বিক জীবন পরিচালনা করে তাহলেই সে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করলো। কিন্তু আল্লাহ্‌র প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তার প্রথমেই দরকার আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা।

এজন্য আল্লাহ নিজ আত্মা থেকে আদম (আঃ) এর মধ্যে আত্মা ফুঁকে দিলেন। ফলে মানুষ আল্লাহ্‌র গুনে গুণান্বিত হলো। সেই সাথে তার মধ্যে আল্লাহ্‌র স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিও চলে আসলো। ফেরেশতারা বুঝতে পারলো, মানুষ এই স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির বলে আল্লাহ্‌র হুকুম প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। তারা বললো- -''হে আমাদের প্রতিপালক, তারাতো পৃথিবীতে 'ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা' অর্থাৎ অন্যায়, অবিচার,যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত করবে।

'' (সুরা সাদঃ৭৫) আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। আল্লাহ আরো বললেন, '' আমি যুগে যুগে নবী-রাসুলগনের মাধ্যমে ' সিরাতুল মুস্তাকীম'। অর্থাৎ 'হেদায়া' বা সঠিক পথের নির্দেশনা দেবো। যারা সেই নির্দেশনা মেনে চলবে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। '' (সুরাঃ আ'রাফঃ৮২) অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত এই স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিতে প্রভাবিত হয়ে মানুষ যদি ভুল পথে পরিচালিত হয় তবে তার স্বাভাবিক পরিনতিই হবে অশান্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত।

মানুষ যেনো এই অশান্তিতে না পরে তারজন্য আল্লাহ যে জীবন ব্যাবস্থা পাঠালেন তার নাম ''দ্বীন উল ইসলাম'' অর্থাৎ ''শান্তির জীবন ব্যাবস্থা''। এই জীবন ব্যাবস্থার মুল ভিত্তিই হলো ''তৌহীদ'' - ''লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। '' অর্থাৎ - আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা সার্বভৌমত্বের মালিক নেই। ব্যাক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যিনি দিবেন তিনি হচ্ছেন সার্বভৌম বা ইলাহ। সার্বভৌম না থাকলে ব্যাক্তি সমাজ বা রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়েরই চূড়ান্ত মিমাংসা হওয়া সম্ভব নয়।

তাই সব সংবিধানেরই একটি সার্বভৌমত্ব থাকতে হয়। রাজতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব - রাজা,বাদশাহ,সম্রাটের গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব - জনগণের সংখ্যা-গরিষ্ঠতার সমাজতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব - জনগণের একটি বিশেষ শ্রেণির ফ্যাসিবাদদের সার্বভৌমত্ব - এক নায়ক বা ডিক্টেটরের ইসলামের সার্বভৌমত্ব - আল্লাহ্‌র যে জীবন ব্যাবস্থাই গ্রহন করা হোক না কেনো সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে কোনো আপোষ নেই। প্রতিটি ব্যাবস্থার সার্বভৌমত্বের মালিক ভিন্ন হওয়ায় গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র যেমন একসাথে মানা সম্ভব নয়। তেমনি ইসলাম বা গনতন্ত্র বা রাজতন্ত্র একসাথে মানা সম্ভব নয়। তাই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ দ্যর্থহীনভাবে বলেন, '' إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِ (ইনিল হুকমু ইল্লালিল্লাহ) '' ''হুকুম দেয়ার অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহরই।

'' (সুরা ইউসুফঃ৪০) সুতরাং , আল্লাহ্‌র সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার অর্থই হচ্ছে, জীবনের যে অঙ্গনে আল্লাহ্‌র কোনো সিদ্ধান্ত থাকবে সেখানে আমরা অন্য কারো সিদ্ধান্ত মানবো না । এটিই হচ্ছে ''সিরাতুল মুস্তাকিম'' বা ''সহজ সরল পথ''।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।