আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই মওদুদ সেই মওদুদ

দেখুন ২০০৭ সালে ব্যারিস্টার মওদুদের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ ছিলো। এখন তিনি ধোয়া তুলসি পাতার মতো কথা বলছেন। বিস্তারিত... সাবেক বিএনপি সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে ৭ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলার তথ্য অনুসন্ধানে দুদকের কর্মকর্তারা জেলা রেজিস্ট্রার, সাব-রেজিস্ট্রার বদলি, কাজী নিয়োগ, নিম্ন আদালতে বিচারক বদলি, সরকারি পিপি, এপিপি নিয়োগ বাণিজ্যের এসব তথ্য খুঁজে পায়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একটি ব্যাংকে ১৯টি স্থায়ী আমানত (এফডিআর) জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

এই ১৯টি এফডিআরে ১৯ জনের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন। অন্যদিকে তিনি বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে দুদকের মামলায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে সোমবার (১৭ এসেপ্টম্বর) গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাদি শরীফুল হক সিদ্দিকী মামলার তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই মামলায় তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর আদালতের বিচারক মোঃ মিজানুর রহমান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।

দুদক সচিব মোঃ মোখলেস-উর-রহমান বলেন, দুদক রবিবার (১৬ সেপ্টম্বর) সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করায় দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফুল হক সিদ্দিকী বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। সচিব এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ একটি ব্যাংক চেকের মাধ্যমে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা উত্তোলন করে ভুয়া ১৯ ব্যক্তির নামে নিজে স্বাক্ষর করে এফডিআর করেছে। এফডিআরকৃত ১৯ ব্যক্তির নাম-ঠিকানা অনুযায়ী অনুসন্ধান করে অনুসন্ধান কর্মকর্তা কারো হদিস পায়নি। এই অবৈধ টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে নিয়োগ ও বদলি বাণ্যিজের তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের পর মওদুদ আহমদ ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত ৩৫ টি এফডিআরে টাকা স্থানান্তর করতে থাকেন। আইএফআইসি ব্যাংক, মতিঝিল শাখা এবং আরব বাংলাদেশ ব্যাংক, ইসলামপুর শাখায় ৩৫ টি এফডিআরে তিনি মোট ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন, যা তিনি দুদকে দাখিল করা হিসাবের বিবরণীতে তথ্য গোপন করেছেন। দুদক সোমবার এই ৩৫ টি এফডিআর স্থগিত করেছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তিনি এই এফডিআর থেকে কোন টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না। অনুসন্ধানে আরো পাওয়া গেছে যে, তিনি বিএনপি সরকারের আমলে বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ধশতাধিক জেলা ভূমি রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার বদলি, শতাধিক কাজী নিয়োগ, নিম্ন আদালতে বিচারক বদলি, সরকারি পিপি ও এপিপি নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।

যাদেরকে তিনি বদলি অথবা নিয়োগ দিয়েছেন, দুদক তদন্ত কর্মকর্তা তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এই তালিকার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলা রেজিস্ট্রার বদলির মধ্যে মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদের বান্ধবীর স্বামী আব্দুল গণিকে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে কুড়িগ্রাম থেকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। এছাড়া মাইনুদ্দিনকে ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে মানিকগঞ্জ থেকে কুমিল্লায়, আব্দুল হামিদ হাওলাদারকে ২৮ লাখ টাকার বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জে, নারায়ণ দাসকে ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে শেরপুর জেলা থেকে মুন্সিগঞ্জে বদলি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাব-রেজিস্ট্রার পদে আনোয়ার হোসেনকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম সদর থেকে নবীগঞ্জ উপজেলায়, শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াসকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ভোলার লালমোহন থেকে চট্টগ্রাম সদর কমপ্লেক্সে, মওদুদের স্ত্রীর বান্ধবী ফাতেমা বেগমকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে, রত্না ভৌমিককে চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স থেকে ২৭ লাখ টাকার বিনিময়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে, হাসনা হেনাকে ১৯ লাখ টাকার বিনিময়ে নাটোর থেকে চট্টগ্রাম সদরে, তপন কুমার সিংহকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে, আনোয়ারুল হক চৌধুরীকে গৌরিপুর থেকে কুমিল্লায় বদলি করা হয়েছে।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা জানান, এসব বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অবৈধ টাকা তিনি নামে-বেনামে দু'টি ব্যাংকে ৩৫ টি এফডিআর করেন। চলমান দুর্নীতির অভিযানের পর তিনি ৩৫ টি এফডিআরে মোট ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন। ব্যারিস্টার মওদুদ একটি ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা করে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা উত্তোলন করে ভুয়া ১৯ ব্যক্তির নামে নিজে স্বাক্ষর করে এফডিআর করেছে। তিনি ১৯টি এফডিআরে ডি মিয়া, এফ মিয়া, কে আলম, জে আলম, এম জামান, কে আনোয়ার, এন ইসলাম, সামসুল আলম, ইএফ আলম, নূরুল আমিনসহ ১৯টি ভুয়া নাম ব্যবহার করেন। এফডিআরকৃত ১৯ ব্যক্তির নাম-ঠিকানা অনুযায়ী অনুসন্ধান করে অনুসন্ধান কর্মকর্তা কারো হদিস পায়নি।

এই টাকাগুলো তিনি সম্পূর্ণ গোপন করেছেন। দুদক সূত্র আরো জানায়, মওদুদ আহমদ বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা তদন্ত শুরু করেছেন। গত রবিবার বিকেলে তার বিরম্নদ্ধে ৭ কোটি ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৩৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে দুদক মামলা দায়ের করে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি ৪০ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার বাদি মো. শরীফুল হক সিদ্দিকী জানান, হিসাবে গোপন করার মধ্যে মওদুদ আহমদের বেনামে আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামপুর শাখায় ৩ কোটি টাকার অস্থায়ী আমানত (এফডিআর) এবং আইএফআইসি ব্যাংক মতিঝিল শাখায় এক কোটি ৪০ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৫ টাকার এফডিআর রয়েছে। গত ৩ জুলাই সম্পদের হিসাবের বিবরণী চেয়ে দুদক তার কাছে নোটিস পাঠায়। গত ২৩ জুলাই তিনি সাড়ে ৩ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাবের বিবরণী দাখিল করেন। অনুসন্ধান করে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুদকে দাখিল করা হিসাবের বিবরণীতে তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে দুদক জরুরি অধ্যাদেশ ২০০৭ এর ১৫(ঘ) এর ৫ এবং কমিশন আইনের ২৬ (১) ও ২৭ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে গত ১২ এপ্রিল তার গুলশানের বাসভবনে তল্লাশী চালিয়ে যৌথবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। ঐ রাতেই তার বাসা থেকে ১২ বোতল বিদেশী মদ জব্দ করে এবং মাদক আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তথ্য সূত্র : ইত্তেফাক  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।