আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনলিপি-২

দিনলিপি-১ পড়তে চাইলে পড়তে পারেন। আজ আমি আমার বাংলা সিনেমার নায়কের ভুমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলব……… আজকের দিনটাও শুরু হতে হতেই বিকেল হয়ে গেল। ইন্টারনেট কানেক্ট করেও শেষ করতে পারিনি তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিছু গালিগালাজ নিঃশব্দে হজম করতেই হল। যে ফোন করেছিল সে আমার স্কুলের বন্ধু।

আজকে আমাদের একসাথে ইফতার করার কথা। তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হব তখন জানতে পারলাম আজকে নাকি বাসাতেও ইফতার। বাসায় জুয়েল নামক যে প্রাণীটি বসবাস করে তার সকল বন্ধুরা আসবে। আমাদের দুজনকেই নাকি থাকতে হবে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল তবে আমার চেয়ে আমার বউয়ের মন খারাপ বেশিই হল।

আমি বের হতে পারলেও সে পারবেনা। আমি তাকে সাহস দিলাম চল বের হয়ে যাই কিন্তু চক্ষুলজ্জা বলে যে কথাটা প্রচলিত তার প্রভাবে সে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। আমি রুম থেকে বের হতেই দেখি ড্রইং রুমে কিছু অতিথি হাজির। পরিচয় পর্ব কুশল বিনিময় শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করে বেরিয়ে পড়লাম। আমি এমনিতেও থাকতাম না, তার উপর গেটটুগেদার হবে থাকার কোন প্রশ্নই আসেনা।

পারিবারিক ইগোর কথা এখানে এড়িয়ে গেলাম। ইফতার স্থলে পৌছেই দেখি প্রায় ৫০-৬০ জনের এক ওয়াজ মাহফিল বলা যায়। টুপি-পাঞ্জাবীওয়ালা, তা না পড়লে কমপক্ষে দাড়ি আছে, সেটা হউক ফ্রেনচ কিংবা চাপদাড়ি। আমি মনে চিন্তা করলাম আমাদের আরেকটা গ্রুপের সবাইকে জানালেতো ১০০ ছাড়িয়ে যেত। ইফতার শেষে কিছু খুনসুটি, হাতাহাতি, চা-সিগারেট, গল্প, হইহুল্লোড়, সমালোচনা, ছবি তোলা শেষে শাহবাগে উপস্থিত হলাম।

এখানেও প্রতিদিনকার মত আড্ডাবাজি শুরু হল। আমার মঈন নামের বন্ধুটি এক বন্ধুকে ফোন করল। আমরা নিশ্চিত সে আসবেনা। সে আজিজেই থাকে কিন্তু সহজে নিচে নামতে চায়না নানা কাজের উসিলা দেখায়। সে আসতে রাজি হওয়ায় অবাক হয়ে বলেই ফেললাম ভাদ্র মাস সমাগত তাই হয়তো একটু বাইরে বের হয়েছে।

আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বন্ধুটির নিক নেম কি? যে প্রানীটি ভাদ্র মাসে প্রজনন করে আরকি। আড্ডার শেষ দিকে আমার শ্যালিকা ফোন দিয়ে বলল সে নিউমার্কেটে আছে শাহবাগে আসতে চায় আমার সাথে বাসায় ফিরবে। আমি হ্যা বলে দিয়ে অপেক্ষা করছি আর বন্ধুদের সাথে কথা বলছি। সে কিছুক্ষনের মাঝেই উপস্থিত হলে বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে চলে আসি। শ্যালিকাকে নিয়ে শাহবাগ মোড়ে রিক্সা ঠিক করছি এমন সময় আমার স্কুলের বন্ধু কয়েকজনের সাথে দেখা যাদের সাথে একটু আগেই ইফতার করেছি।

তাদের দৃষ্টি যেন কেমন কেমন? বুঝলাম আমার সাথের সুন্দরী তাদের উৎসাহের কারন। আমি পরিচয় করিয়ে দিয়ে রিক্সা ঠিক করতে যাব এমন সময় পেছন থেকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু দুইজনও টিপন্নী কেটে ডাক দিল। বুঝলাম তাদেরও হিংসা হচ্ছে কেননা তাদের কাছে বিদায় নেয়ার সময় বলে আসিনি আমার সাথে আমার শ্যালিকা আছে। আমি শ্যালিকাকে রেখে একটু সামনের দিকে রিক্সা ঠিক করছি এমন সময় পেছনে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনে তাকাতেই দেখি আমার শ্যালিকার সাথে এক যুবক আঙুল নাচিয়ে নাচিয়ে কথা বলছে। তাড়াতাড়ি এসে জিজ্ঞেস করতেই শ্যালিকা বলল এখানে এত জায়গা থাকা সত্ত্বেও সে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।

ছেলেটা দেখতে যেমন চামারের মত ব্যবহারও তাই। বোঝায় যা গেল ব্যবহারেই বংশের পরিচয়ের সার্থকতা। আমি তাকে আস্তে কথা বলার কথা বলতেই সে দ্বিগুন জোরে চিৎকার করে বলছে এটা নাকি সে ইচ্ছা করে করেনি। আমি বললাম তাহলে আপনি একটা মেয়ের সাথে এভাবে শাসিয়ে কথা বলছেন কেন আমার সাথে কথা বলেন। সে বললো আপনের সাথে কথা বললে কি হইবো।

বলতেছিনা আমি ইচ্ছা করে করিনি। আমি এবার খেপে গিয়ে বললাম বাবা-মা ব্যবহার শেখায়নাই একটা অন্যায় করেছেন তার উপর সিনাজুড়ি দেখাচ্ছেন। সাথে সাথে সে কাকে যেন ফোন করে বলল ভাই একটু আসেন তো এখানে আমার সাথে এক হালার ঝামেলা হইছে। এইবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। আমি হারামজাদা ব্যাটাকে চড়-থাপ্পড় যা দেয়া যায় ততক্ষনে শুরু করে দিয়েছি।

আমার আশেপাশে আমার বন্ধুরা ততক্ষনে উপস্থিত হয়ে গিয়েছে। তারা আমাকে মারামারি থেকে নিবৃত করলো। কিন্তু ছেলেটার তখনও চাপার জোর কমেনি। ধরে থানায় নিয়ে যাবার কথা বলতেই আশেপাশের সবাই না করলো। অতঃপর ছেলেটিকে ছেড়ে দিয়ে বাড়ির পথে রওনা হতে হল।

মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে আইন করে কয়জনকে রুখে দেয়া সম্ভব। রিক্সায় আসতে আসতে ঘটনা শুনে মনে হল ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যায় করেছি, পুলিশে দেয়া উচিত ছিল। এমন চোরের মার বড় গলা টাইপের অবস্থায় কখনও পরিনি তাই জানিওনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।