আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবে তুমি মম হৃদে,সরবে নিরবে

হয়তো আমি একাই... • এ, কে, এম মুজিব বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তার হাত ধরেই নতুন পথের সন্ধানে যাত্রা করে। দেশের মুমূর্ষ চলচ্চিত্র শিল্পকে তিনি এনে দেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতি। শিক্ষা জীবনের শুরুটা ছিল মাদ্রাসায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৮৯ সালে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে 'আদম সুরত' নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ১৯৯৫ সালে তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির গান ও মুক্তির কথা (১৯৯৬) প্রশংসিত হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। এরপর ২০০২ সালে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মাটির ময়না বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে নিয়ে যায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে এ ছবি। স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ছিলেন এই চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক। এরপর অন্তর্যাত্রা (২০০৬) ও রানওয়ে (২০১০) নামে আরো দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি।

আরেকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক। পরে শিক্ষকতা ছেড়ে কাজ করেছেন দেশের প্রথম বেসরকারি টেরেস্ট্রিয়াল চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের ব্রডকাস্ট নিউজ হেড হিসেবে। এখন দেশের নামকরা অনেক সাংবাদিকের হাতে-খরি হয়েছে তার হাত ধরেই। এর আগে বিবিসিতে ক্যামেরাম্যানের কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত দ্য রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্কের ছিলেন ডিরেক্টর অব নিউজ অপারেশন।

দেশের মিডিয়াকে কিছু দিবেন বলেই ফিরে এসেছিলেন; এটিএন নিউজের বার্তা সম্পাদক হিসেবে। বলছিলাম তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনিরের কথা। বাংলা চলচ্চিত্র এবং সাংবাদিকতার ইতিহাসের দুই প্রবাদ পুরুষ। ক্যামেরার পিছনের দুই মানুষ চলে গেলেন হঠাৎ করেই। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা হিসেবে যেটি আত্নপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছিল তারেক মাসুদের নতুন ছবি কাগজের ফুল নির্মাণের জন্য প্রি-প্রডাকশন পর্যায়ের কিছু কাজ চুড়ান্ত করতে গত বছর এই দিনেই সকাল ৬ টায় ঢাকা থেকে তারা মানিকগঞ্জের স্যুটিং স্পটে গিয়েছিলেন।

সকাল থেকে সেখানে বৃস্টি হচ্ছিল। কাজ শেষে যখন তারা ঢাকায় ফিরছিলেন তখন সকাল সোয়া ১১ টার দিকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোখা নামক স্থানে তাদের বহনকারী ঢাকাগামী মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-০৩০২) সাথে বিপরীতমুখো পাটুরিয়াগামী একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪২৮৮) সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে; ঘটনাস্থলেই মারা যান তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনির সহ ৫ জন। স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটউটের শিক্ষক ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি আহত হয়েছিলেন। অদ্ভুত লাগতো; কি এক মোহ ছিল মাটির ময়না, রানওয়ে চলচ্চিত্রের মাঝে। প্রথাগত বানিজ্যিক ধারা থেকে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক বাংলাদেশের উপর নির্মিত কোন চলচ্চিত্র দেখা যায়নি।

নির্মান শৈলী থেকে শুরু করে ক্যামেরার কাজ সব কিছুতেই ছিল দক্ষ শিল্পীর ছাপ। যুদ্ধাপরাধ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তারা; নিজেদের লেখায়, নিজেদের কথায়, নিজেদের চলচ্চিত্রে। চলে গেলেন বড্ড অসময়; অনাকাঙ্খিত পরিনতির শিকার হয়ে। মানতে কষ্ট হয়; আর নতুন কোন চলচ্চিত্র উপহার দিবেন না তারেক মাসুদ; মিশুক মুনিরের অসম্ভব সুন্দর ক্যামেরার কাজ দেখে নয়ন জুড়াবে না। একদিন হয়তো আমাদের চলচ্চিত্রের দুর্দিন কেটে যাবে; অস্কারে সম্মানিত হবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র।

তবে এর জন্য হারিয়ে যাওয়া দুজন মানুষের অবদানই হবে সবচেয়ে বেশি। তাদের দেখেই আজকের প্রজন্ম চলচ্চিত্র দেখতে শিখেছে; বুঝতে শিখেছে; ভালোবাসতে শিখেছে। একদিন এই তরুনদের মাঝেই গড়ে উঠবে একজন তারেক মাসুদ; একজন মিশুক মুনির। লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।