আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুক রিভিউঃ মৃন্ময়ী – হুমায়ূন আহমেদ

হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ পরীক্ষার আগের রাতে প্রতিবারই আমার এ সমস্যাটা হয় । শুধু আমি না, পরিচিতজনদের কাছ থেকে শুনেছি আমার মত অনেকেরই নাকি পরীক্ষার আগের রাতে এ সমস্যাটা হয় । গল্পের বই পড়ার অদ্ভুত নেশা জাগে । পড়া বই আবার পড়তে ইচ্ছা করে । যে বই শেলফের এক কোনায় মাসের পর মাস পরে থাকতে থাকতে এককারি ধুলো জমে সাদা হয়ে গিয়েছে সে বইও অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে ।

এ নেশা বড় কঠিন নেশা । মনকে যত বুঝিয়েই পড়ার টেবিলে নিজেকে বসাই না কেনো কোন একটা গল্পের বই পড়ার আগে পরীক্ষার পড়ায় কিছুতেই মনোযোগ আসে না । কেমন জানি ছটফট লাগে । অস্থির লাগে । যাদের এ সমস্যা নাই তাদেরকে কিছুতেই এ অনুভূতি বোঝানো সম্ভব না ।

কাল সকালে ফাইনাল পরীক্ষা । ‘তাই’ আজ সন্ধ্যার কিছু সময় পরে নতুন করে আবার পড়ে শেষ করলাম উপন্যাস ‘মৃন্ময়ী’ । আমার পড়া অন্যতম প্রিয় একটি উপন্যাস । ‘মৃন্ময়ী’ হুমায়ূন আহমেদের লেখা ঐ সব উপন্যাসগুলোর একটি যেটি পড়ার পর মনে হয় ‘হুমায়ূন আহমেদ আসলেই একটা জিনিস ছিলো’ । মাত্র একশ সাত পৃষ্ঠার উপন্যাস ।

কিন্তু এই ছোট পরিসরেই কি অসাধারণভাবেই না বর্ণনা করা হয়েছে একটি বৃহৎ জটিল গল্পের ... ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ব্যাক্তি মানুষের স্বাতন্ত্র্যতা ও বিচিত্রতা, আধুনিক নাগরিক জীবনের জটিলতা, ধনিক শ্রেণির কুটিলতা, মানুষের একাকীত্ব আর হাহাকার ! এই উপন্যাসের উপস্থাপনাটা অনেকটা ধাঁধাঁর মত । লেখক উপন্যাসের গল্প বা কাহিনীর সব কথাই লিখেন নি । কিন্তু যতটুকু লিখেছেন ততটুকুও এমনভাবে লিখেছেন পাঠক উপন্যাসের বিভিন্ন ঘটনা পড়ে একটু চিন্তা করলেই গল্পের যে অংশগুলো লেখক লিখেন নি তা স্পষ্ট বুঝতে পারে । উপন্যাস লেখার এ কৌশলটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে । লেখক হুমায়ূন আহমেদ যে একজন অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ ছিলেন সেটা ‘মৃন্ময়ী’ পড়ে আচ করা যায় ।

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসগুলোতে কিছু কিছু অতি বুদ্ধিমান চরিত্র থাকে যারা অল্প কিছু হিসাব মিলিয়েই জীবন বাস্তবতার অনেক বড় বড় ঘটনা বুঝে ফেলে । ‘মৃন্ময়ী’ উপন্যাসটা পড়ার সময় অনেক পাঠকের ঐ সব বুদ্ধিমান চরিত্রের মত নিজেকে বুদ্ধিমান মনে হবে । উপন্যাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এসে পাঠক উপন্যাসের এক ঘটনার সাথে আরেক ঘটনার হিসেব মিলিয়ে উপন্যাসে না লেখা অনেক তথ্য জানতে পারবে, অনেক ঘটনা বুঝতে পারবে । মৃন্ময়ী এ উপন্যাসের নায়িকা । বুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগে পড়ে ।

অনেক বুদ্ধিমতী এক তরুনী । বাবা ব্যবসায়ী । আগে ঢাবি’র শিক্ষক ছিলেন । বাবা, মা, এক সৎ ভাই – এই নিয়ে মৃন্ময়ীদের পরিবার । হুমায়ূন আহমেদের আর দশটা উপন্যাসের মত এ উপন্যাসও আপাত দৃষ্টিতে অর্থহীন, গুরুত্বহীন নানা ঘটনার সরস আর হাল্কা চালের বর্ণনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে ।

পড়তে পড়তে হঠাৎ একসময় পাঠক খেয়াল করে উপন্যাস শেষ, এবং বুকের ভেতর কেমন মোচর দেয়া হাহাকার আর কষ্ট কষ্ট লাগছে । উপন্যাসের চরিত্রগুলোর জন্য কেমন মায়া লাগছে । আমি যতবার ‘মৃন্ময়ী’ উপন্যাসটা শেষ করেছি ততবারই বুকে মোচর তৈরি করা হাহাকার আর কষ্টের সাথে সাথে আরেকটা অনুভুতি হয়েছে । মনে হয়েছে এই উপন্যাসটি থেকে অসাধারণ সিনেমা তৈরি করা যাবে । ইস, আমি যদি ভালো চলচিত্র নির্মাতা হতাম তবে অবশ্যই এই উপন্যাসটি থেকে সিনেমা বানাতাম ।

যেহেতু আমার চলচিত্র নির্মাতা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, সেহেতু কেউ কি নেই এই অসাধারণ উপন্যাসটি থেকে একটি অসাধারণ সিনেমা তৈরি করবে ? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।