আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেডিটেশন-ধর্মের আলোকে

মেডিটেশন-ধর্মের আলোকে ধ্যান ॥ উচ্চস্তরের ইবাদত -আল্লামা শেখ ড. ইউসুফ আল-কারযাভী সর্বজনমান্য ইসলামি চিন্তাবিদ। ১৯৭৩ সালে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উসূল আদ-দ্বীন অনুষদ হতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. কারযাভী মিশর সরকারের বোর্ড অব রিলিজিয়াস এফেয়ার্স এর সদস্য, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডীন এবং আলজেরিয়ার বিশ আজকের বিশ্বে মুসলমানদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে, আধুনিক জ্ঞানের সকল শাখায়ই তারা পাশ্চাত্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যারা বর্তমান তথাকথিত ধার্মিক মানুষদের আচরণ দিয়ে ধর্মকে বিচার করেন তারা ভ্রান্তভাবে একেই আমাদের ধর্ম বা মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। অথচ অতীতে ইসলামি সভ্যতা ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সভ্যতার অন্যতম।

মুসলিম বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিলো জ্ঞানকেন্দ্র যা মুখরিত থাকতো প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খ্যাতনামা শিক্ষকদের বই আন্তর্জাতিকভাবেই পণ্ডিতদের নিকট গণ্য হতো রেফারেন্সরূপে। আরবি ভাষা জ্ঞানচর্চায় পালন করেছে মৌলিক ভূমিকা। রবার্ট ব্রিফল্ট, জর্জ সার্টন, গুস্তব লি বন এবং উইল ডুরান্ত-এর মতো ঐতিহাসিকগণ এ ব্যাপারে প্রকাশ করেছেন ঐকমত্য। পিওর সায়েন্স ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বা সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত।

তবে এর নেপথ্য দর্শন বা শিক্ষা প্রক্রিয়ার বিষয়টি ভিন্ন। মানব ও সমাজবিজ্ঞান স্বাভাবিকভাবেই মানুষের সাথে সম্পৃক্ত। স্বভাবতই তা তাদের আচরণ বিশ্বাস মূল্যবোধ ও পারস্পরিক সম্পর্ক দ্বারা প্রভাবিত। যদিও কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী দাবি করেন, মানবীয় বিজ্ঞানগুলো আন্তঃসাংস্কৃতিক, কিন্তু বাস্তবে তা মূলত পাশ্চাত্যের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রকাশ। মুসলিম বিশেষজ্ঞদের অবশ্যই মুক্তমন নিয়ে এ বিজ্ঞানগুলো পর্যালোচনা করা উচিত।

প্রয়োজন ইসলামের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্লেষণ করা। এতে নতুন তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া যাবে যা এ বিজ্ঞানগুলোয় বিরাজমান অনেক প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করবে। সোশ্যাল সায়েন্সের একটি বিশাল ক্ষেত্র হচ্ছে মনোবিজ্ঞান, যাতে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি সংযোজিত হলে অফুরন্ত কল্যাণ সাধিত হতে পারে। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে মানবাত্মা, তার সহজাত সম্ভাবনা ও দৃশ্যমান আচরণ গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সামপ্রতিককালে মুসলিম বিশেষজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে বেশকিছু কাজ করেছেন।

এ ক্ষেত্রে অগ্রগামীদের একজন হচ্ছেন মিশরীয় বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ ওসমান নাজাতী। যিনি ‘আল কোরআন ওয়া ইলম আন-নাফস’ (আল কোরআন ও মনোবিজ্ঞান) এবং ‘আল হাদীস ওয়া ইলম আন-নাফস’ (আল হাদীস ও মনোবিজ্ঞান) নামে দুটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয়জন অধ্যাপক মালিক বাদ্রী, তিনি বিশিষ্ট গবেষক, মনোবিজ্ঞানী ও থেরাপিস্ট। অধ্যাপক বাদ্রী প্রচলিত মনোবিজ্ঞানের সাথে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সংযুক্ত করে নতুন এক ধারার সূত্রপাত করেছেন। তিনি ইসলামি আকিদা বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও আমল থেকে সূত্র নিয়ে তা প্রয়োগ করে বিভিন্ন মানসিক রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন।

রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেন নি যার নিরাময় নেই। কেউ এই নিরাময় জানে, কেউ জানে না। ’ রসুলুল্লাহ (স)-র এ বাণী শারীরিক এবং মানসিক- উভয় রোগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অধ্যাপক বাদ্রী তার বর্তমান গ্রন্থ ‘আল-তাফাক্কুর মিন আল মুশাহাদাহ ইলা আল-শুহুদ’ (Contemplation : An Islamic Psychospiritual Study)-তে আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। বইয়ের আরবি নামকে ইংরেজিতে অনায়াসে বলা যায় Contemplation : from perception to spiritual cognition অর্থাৎ ধ্যান : ইন্দ্রিয়ানুভূতি থেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পথ।

তিনি ধ্যানকে ইন্দ্রিয় উপলব্ধি বা প্রত্যক্ষন (যা সকল গবেষণামূলক বিজ্ঞানের ভিত্তি) থেকে অবধারণ বা পূর্বজ্ঞান বা অন্তর্দৃষ্টির (Cognition) স্তরে উন্নীত করতে চান। রসুলুল্লাহ (স) এই অন্তর্দৃষ্টি বা পূর্বজ্ঞানের কথাই বলেছেন ‘ইহসান’ শব্দের ব্যাখ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘তুমি তাকে দেখতে না পেলেও তিনি তোমাকে দেখছেন- এই জেনে যখন তুমি আল্লাহর ইবাদত কর তখন তা হচ্ছে ইহসান। ’ গ্রন্থকার তার গ্রন্থে ধ্যান করা এবং প্রশান্ত মনে সৎচিন্তার আলোকে বিচার করার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনাকে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন। যথার্থই আল কোরআন বলে, ‘আমি একটি বিষয়ে সতর্ক করছি, আল্লাহর সামনে দাঁড়াও একক বা যৌথভাবে এবং চিন্তা কর ....’ (সাবা : ৪৬)।

‘আল্লাহর সামনে দাঁড়াও’ অর্থ এখানে আন্তরিকভাবে সত্যকে অনুসন্ধান করা। ‘একক বা যৌথভাবে’ অর্থ হচ্ছে সামাজিক বা ব্যক্তিগত সংস্কারের প্রভাব বা চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে চিন্তা বা বিচার বিশ্লেষণ করা। অধ্যাপক বাদ্রী ইবাদতের একটি মাধ্যম হিসেবে ধ্যানের গুরুত্বকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, এক ঘণ্টার ধ্যান সারা রাত জেগে ইবাদতের চেয়ে উত্তম। অন্যান্য হাদীসবেত্তারা বলেছেন, এক ঘণ্টার ধ্যান সারা বছরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।

আরো সুবিধা হচ্ছে ধ্যানকে বলা যায় বিন্যাস বা আকারহীন ইবাদত যা স্থান বা কাল; দৃশ্যমান বা অদৃশ্য- কোনো কিছু দিয়েই বাধাগ্রস্ত হয় না। অন্যান্য ধ্যানের সাথে বিশেষত ট্রানসেন্ডেন্টাল মেডিটেশনের সাথে যা পাশ্চাত্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, ইসলামি ধ্যানের পার্থক্যও লেখক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। এক্ষেত্রে তার অভিমত হচ্ছে যে, একজন মুসলমান নিজেকে নিয়ে, স্রষ্টার সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হলে আল্লাহর রহমতে অন্য ধ্যানীদের চেয়ে উচ্চতর উপলব্ধিতে উপনীত হবেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।