আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই ছেলেটা দুখী কেন কেউ জানেনা!

সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ! বড় বড় শুকনো পাতার ভেতর দিয়ে একদিন এক দুঃখী ছেলে ছমছম ঝমঝম করে হেঁটে যাচ্ছিলো। ছেলেটাকে কেউ চেনেনা। কি সুন্দর তার পানপাতার মত ভরাট মুখ। ভ্রু কালো পানসি যেন। বড় বড় ঢেউ তোলা চোখ।

দুহাত পেছনে করে সামনে ইষৎ ঝুঁকে সে পাতার ভেতর দিয়ে হেঁটে যায়। এক কাঠুরে পাতায় পায়ের শব্দ পেয়ে তার কাঠ কাটা থামালো তখনই। তাকিয়ে দেখে দুঃখী ছেলে। কাঠুরের ভেতরে দরদ উছলে ওঠে। দুদিন আগে সে বাড়ি ছেড়ে বনে এসেছে তার পুটলার ভেতর ছাতু আর ঝোলাগুড়।

গুড়ে আবার দু একটা কালো পিঁপড়েও লেগেছে। কাঠুরের তাতে বরং মন ভালই হয়। আজ কালের মধ্যেই সে ফিরে যাবে গ্রামে। তারপর কাঠ বিক্রি করতে পারলেই এক সপ্তাহের জন্য নিশ্চিন্ত। কিন্তু ছেলেটা এই জঙ্গলে এমন মন খারাপ করেই বা ঘুরছে কেন? বাড়িতে তার এই বয়সি ছেলে।

অবশ্য কাঠুরের ছেলের বুকের হাড্ডি গোনা যায়। সবাই বলে কাঠ কেটে কেটে কাঠুরের ছেলের উপর কাঠের অভিশাপ। কে জানে বাবা হতেও পারে। কিন্তু কাঠুরে তো গাছ কাটা ছাড়া আর কিছু পারেনা। মাটি কাটতে গেলে তার বুক কাঁপে, মাছ ধরতে গেলে তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল অবশ হয়ে যায়।

ছাগল চরাতে গেলে সে দূরের জিনিস চোখে দেখেনা। ছাগল চরতে চরতে অনেক দূরে চলে যায় কাঠুরে আর দিশা পায়না। তাহলে সে করবেটা কি? বাছা শোনো? ছেলেটা এক মনে পাতার ভেতর দিয়ে হাঁটতেই থাকে । হাঁটতেই থাকে। মচমচ করে পায়ের তলায় পাপড়ের মত পাতারা কুচুমুচু হয়ে যায়।

দুঃখী ছেলে কিছুতেই শোনেনা। নিচু করে রাখা মুখের উপর ছেলেটার চুল এসে পড়ে। চোখ ঢেকে যায়। কাঠুরের বুকের ভেতর আরো দরদ এসে জমা হয়। ও বাছা শোনো।

কাদের বাড়ির ব্যাটাগো তুমি? তোমার বাপু বুঝি কাঠ কাটতে আসিছে? এবার দুঃখী ছেলেটার মুখের দুঃখ চোখে জমা হয়। সে চোখ তুলে তাকাতেই কাঠুরে দেখে ঘন কালো মেঘ! যেন কোথাও ঝড় উঠবে এখনি। দুঃখী ছেলের চোখে এত মেঘ এল কোথা থেকে? আকাশের থলে কি ফুটো হয়েছে? কাঠুরেরও মন খারাপ হয়। কাঠুরে দেখে তার চোখে পানি। দিঘীর জলের মত ঠান্ডা পানি।

কাঠুরে বলে তুমি কাদের বাড়ির ব্যাটাগো ? ছাতু খাইবা? গুড়ও দিতে পারি। দুঃখী ছেলে চোখ নামায় আর তখন ঝকঝকে রোদ। মিঠে বাতাসার মত রোদ তখন গাছের আড়াল থেকে বাইরে এলো। কেটে রাখা কাঠের পাশে, পাতার পাশে, হাতের পাশে পায়ের পাশে তখন কি ঝকমক আলো! মুখের কথা মুখেই থাকে। দুঃখী ছেলে মুখ খুলতেই শন শন করে বাতাস বয়ে যায়।

শুকনো পাতারা দল বেধে পাখির মত উড়তে থাকে। আর যখন কথা কাঠুরে কানে আসে কাঠুরের থম ধরে যায়। কথা যেন সুর হয়ে গাছের ডালে এসে লাগে। গাছের মূলে এসে লাগে। এমন তো বাপু জন্মে দেখিনি।

কাঠুরে ভাবে এ নিশ্চয় জ্বিনেদের ছেলে। পথ ভুল করে পাতায় পাতায় হেঁটে বেড়াচ্ছে! কাঠুরে আবার যখন গাছের কোটরে তার শক্ত কুঠার দিয়ে কোপ দেয়। একটা সবুজ রঙের প্রজাপতি কাঠুরের কানে এসে বসে। কাঠুরে ভাবে একটা গান ধরলে মন্দ হয়না! কিন্তু একটু আগে দুখী ছেলের সুর তাকে সব গান ভুলিয়ে দিয়েছে যে! কাঠুরে মুখ ফিরিয়ে দেখে দুঃখী ছেলে পানির উপর শ্যাওলা বিছানো চিকন খালের দিকে যায়। তার পাশ দিয়ে লাল ঠোঁটের হলুদ পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ছে।

কাঠুরের বুক ধ্বকধ্বক করে। দুঃখী ছেলে মুখ নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে জলের ভেতর নামছে! কাঠুরে তার কুঠার ছুঁড়ে ফেলে ছুটে যায়। দুখী ছেলে পদ্মপাতায় আটকে গেল নামতে গিয়ে । আর তখনি পা উঠিয়ে চড়ে বসলো সে নৌকো করে পাতাটাকেই। গভীর জলের ভেতর সে বাড়িয়ে দিয়েছে হাত।

হাত বাড়িয়ে মাছের সাথে খেলছে তার আঙ্গুল। কাঠুরের চোখ বাধা পড়ে গেল সুন্দরের কাছে। কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারেনা। এদিক টানে ওদিক টানে। চোখতো সরেনা।

এত সুন্দর খেলা যে চোখ কখনো দেখেনি। কাঠুরের ছাতু আর ঝোলা গুড়ের পুটলি পড়ে থাকে জমা করা কাঠের কাছে। কেটে রাখা গাছের কাছে। পায়ের বুড়ো আঙ্গুল অবশ অবশ লাগে। কাঠুরে নামতে থাকে জলের ভেতর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।