আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থ-নীতি,সমাজ-নীতি আর ব্যাবসা-নীতির সহজ পাঠ (গরু পর্ব)

সমাজ-নীতির সহজ পাঠ পুঁজিবাদের ধারণা এমন যে ধরেন আপনার দুটো গরু আছে; তার মধ্যে একটা বিক্রি করে দেবেন এবং একটা গাভী কিনবেন। গরুর উৎপাদন বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতি ক্রমশঃ স্ফীত হবে। সাম্যবাদের ধারণায় একটা গরু প্রতিবেশীকে দান করে দেয়া হয়। কমিউনিজমের সরকার দুটো গরুই নিয়ে নেয়,বিনিময়ে আপনাকে কিছু দুগ্ধ দেবে। ফ্যাসিস্ট সরকার আপনার দুটো গরুই কেড়ে নিয়ে দুধ আপনার কাছেই বিক্রি করবে।

নাৎসীজমে সরকার আপনার কাছ থেকে দুটো গরু ছিনিয়ে নিয়ে আপনাকে মেরে ফেলবে। অর্থ-নীতির সহজ পাঠ অর্থনীতি বুঝতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক . . . ভারতীয় অর্থনীতির ধরণ অনেকটাই ভিন্ন। তাদের কারো দুটো গরু থাকলে, তারা তার উপাসনা করে আর গরু অচল হয়ে গেলে বাংলাদেশে পাচার করবে। পাকিস্থানীদের নিজেদের গরু নাই কিন্তু দাবী করে যে ভারতীয়দের সব গরু আসলে তাদেরই। এরপরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অর্থ-সাহায্য চাইবে, চীনের কাছে সামরিক সহায়তা, জাপানের কাছে প্রযুক্তি, সুইজারল্যান্ডের কাছে ঋণ।

পরে নিজেদের গরু নিজেরা মেরে বলবে তারা বৈশ্বিক রাজনীতির শিকার। আমেরিকানরা একটা গরু বিক্রি করে দেবে এবং অন্যটিকে দিয়ে চারটি গাভীর সমান দুধ উৎপাদনের চেষ্টা করবে। এরপর সেটা মরে গেলে চোখ গোলগোল করে তাকাবে। গরুর মৃত্যুর জন্য গরুসমৃদ্ধ একটা দেশকে দায়ী করে তাদেরকে মানবতার জন্য হুমকি আখ্যা দিবে। পরে বিশ্বকে বাঁচানোর মহান ব্রত নিয়ে সেই দেশের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবে এবং সব গরুগুলো দখলে নিয়ে নেবে।

নাইজেরিয়ান কারো যদি দুটো গরু থাকে তবে সে একটা খেয়ে ফেলে বলবে চুরি গেছে। তারপরে পুলিশকে খবর দেবে। পুলিশ আশপাশের সমস্ত মানুষকে গ্রেফতার করবে। নির্যাতন করে সবার নিকট থেকে একটা করে গরু আদায় করবে। পরে চুরি যাওয়া গরুর মালিককে একটা গরু ফিরিয়ে দিয়ে পুলিশ নিজে একটা গরুর খামার চালু করবে।

রাশিয়ানরা দুটো গরু গুনে পাঁচটা আবিষ্কার করবে। পরেরবার গুনে পাবে ১২টা। এরপরের বার গুনে দেখবে ২টা। হতাশ হয়ে গোনা বাদ দিয়ে একটা ভোদকার বোতল খুলে বসবে। ফরাশীদের আন্তর্জাতিক গরুসুন্দরী প্রতিযোগীতা অথবা ফ্যাশন শো আয়োজন করে অর্থ সংস্থান করবে ।

জার্মানরা তাদের দুটো গরুকে প্রযুক্তি খাটিয়ে একশ বছর বাঁচাবে। বৃটিশ অর্থনীতি বৃটিশদের মতই পাগলাটে। তারা একটা গরুকে ফুটবলার বানাবে আরেকটাকে ক্রিকেটার। সুইসদের নিজেদের দুইটা গরু থাকলেও তারা অন্যের পাঁচ হাজার গরু কমিশনের বিনিময়ে ভরনপোষন করে। জাপানীরা তাদের দুটো গরুকে এমন ভাবে ডিজাইন করবে যেন সেগুলো স্বাভাবিক আকৃতির চেয়ে দশগুন ক্ষুদ্র হয়ে যায় এবং বিশগুন বেশী দুধ দেয়।

এরপরে গরুর ছবি দিয়ে চমৎকার কার্টুন "গরুমন" তৈরী করে বিশ্বজুড়ে প্রচার করে। জিম্বাবুয়েতে তোমার দুটো গরু থাকলে তুমি বিলিওনিয়ার। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সকল অর্থের সাথে নীতি নাই। তাই সকল গরুরা সব লাগামছাড়া।

ব্যাবসা বাণিজ্য শিক্ষা-বাংলাদেশ পাঠ তোমার দুটো গরু আছে। "টু কাউ এন্ড কোম্পানি" নামে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী বানিয়ে দুই গরুকে ১০ টা গরু বানিয়ে বেচে দেয়া হলো। এই ১০ টা গরু দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আরও ১০ টা গরু কেনা হলো। ঋণ বা ইকুইটি সোয়াপ এর মাধ্যমে বেচেঁ দেয়া গরু ফিরিয়ে নেয়া হলো। দুধের স্বত্ব বেচে, কিছু গরু বাংলা সিনেমায় সাপ্লাই দিয়ে আর কুরবানির সময় ১০ গুন দামে বেচে আরও ১০০ টা গরু কেনা হলো।

অডিটরকে ঘুষ দিয়ে কোম্পানির ব্যালান্স শীটে দেখানো হলো গরুর সংখ্যা ৫০০। কিছু গরু বিক্রি করে কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও আমলা কেনা হলো। তাদের সুনজরে থাকায় ব্যাংক ঋণ মওকুফ হলো আবার "টু কাউ এন্ড কোম্পানি"র শেয়ারমূল্য ১০ গুনও হলো। কিছু গরু বেচে তুমি ভোটে দাড়ালে। ভোট জয়লাভ করে মন্ত্রি হলে।

গরু উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পেলে। এখানকার সকল গরুই তোমার। বিঃ দ্রঃ- এই লেখার বেশির ভাগ অংশ"Two cow economics by Steve Clemon on The Washington Note" থেকে নেয়া। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।