আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫টি খাবার যা বাঁচাতে পারে এই বিশ্বকে!!!!!!

মানুষের উপকার কম করলাম না,পরিনামে খেলাম শুধু বাঁশ। তবু হাল ছাড়ি নাই....উপকারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এই এক বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আজও পৃথিবীর প্রতি ছয়জন মানুষের একজনকে প্রতিদিন অনাহারে কাটাতে হয়। যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে গবেষকরা ধারণা করছেন যে আগামী ২০ বছরে খাবারের এই চাহিদা শতকরা ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। এই ভয়াবসহ হুমকি হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে গবেশনা করে যাচ্ছেন এমন সব খাবার উদ্ভাবনের লক্ষ্যে যা খরা, তাপ, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যেও বেড়ে উঠতে পারে এবং সেই সঙ্গে পুষ্টিগুনেও থাকে ভরপুর।

এরই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন পাঁচটি নতুন ফসল যা ভবিষ্যতে রক্ষা করবে লাখো মানুষের জীবন- ১. “স্কুবা রাইস”:- মাসের পর মাস হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল একদিনের ঝড়েই হয়তো নষ্ট হয়ে যায়, কৃষকের চোখের সামনে বন্যায় ভেসে যায় তার সাধের সোনালি ধান, তার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন- এটি আমাদের দেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের কৃষকদের জন্য খুবই সাধারণ ঘটনা। প্রতি বছর বন্যায় ভারত ও বাংলাদেশে প্রায় ৮,০০,০০০ টন ধান ধ্বংস হয়ে যায় যা কিনা প্রায় ৩০ মিলিয়ন লোকের ক্ষুদার চাহিদা মেটাতে পারে। ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা অভয় দিয়েছেন যে খুব শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে। তারা এমন একটি ধান আবিষ্কার করেছেন যা পানির নীচে পুরোপুরি নিমজ্জিত অবস্থাতেও দুই সপ্তাহ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। সাধারণ ধান গাছও পানির নীচে বৃদ্ধি পায় কিন্তু বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এই “স্কুবা রাইস” অত্যান্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়।

“স্কুবা রাইসের” মজার দিক হচ্ছে এটি বহুদিন পানির নীচে থাকলে নিস্ক্রিয় হয়ে পরে কিন্তু পানির উপরে ভেসে ওঠার সাথে সাথে এটি পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠে। প্রায় ৩০ বছরের গবেষণার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধান বাজার জাত করা হয়। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন ২০১২ সালের মধ্যে এই “স্কুবা রাইস” সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে যাবে। ২. বীটার মেলন (তেতো করল্লা):- আপনি জানেন কি? পৃথিবীর ২৮৫ মিলিয়ন লোকের মধ্যে ৮০ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর শিকার। বিশেষ করে ভারত এবং চীন এর মতো দেশ, যেখানে স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনগণ খুব একটা সচেতন নয়- সেখানে ও রোগের প্রকোপ আরও বেশি।

গবেষণায় দেখা গেছে য, এই রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর আয়ের ৭০ শতাংশই রোগের চিকিৎসা পেছনে ব্যয় হয়। বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন যে, তেতো করল্লাতে আছে অধিক মাত্রার ক্যারোটিন যা দেহে গুকোজ নিয়ন্ত্রনকারী যৌগ AMPK এর মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং এতে ক্ষুধা নিবারণকাী এক ধরনের প্রোটিন ও রয়েছে। ২০০৭ সালে ফিলিপাইনের হেলথ ডিপার্টমেন্টের গবেষকরা একটি গবেষণায় প্রমান করেন যে, একটি তেতো করল্লার কার্যকারিতা প্রতিটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধক ওষুধের কার্যকারিতার সমান। তাইওয়ানে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টার এর বিজ্ঞানীরা ২৮০টি পদের করল্লা নিয়ে গবেষনা করছেন যাতে তারা এর একটি “সুপার” সংস্করন উদ্ভাবন করতে পারেন। তাদের আশা যে ৫ থেকে ৮ বছরের মধ্যে তারা তাদের গবেষনায় সফল হবেন এবং ডায়াবেটিস এর চিকিৎসায় এটি বৈপ্লবিক অবদান রাখবে।

৩. মাঙগ বীন্স (কলাই শুঁটি):- শুনতে আহামরি না লাগলেও এটি সত্য যে দক্ষিণ এশিয়ার অনেকে অসহায় মানুষদের খাবারের চাহিদা মেটাতে অসাধারণ ভূমিকা রাখছে এই শুঁটিবীজ। ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. জ্যাকলিন হিগউইস বলেন “সাধারন মহিলা এবং বাচ্চারা সব সময়ই একটি অরক্ষিত অবস্থার মধ্যে থাকে কেননা সমাজে তাদের ততটা সম্মানের চোখে দেখা হয় না। প্রায়ই দেখা যায়, বাড়ির পুরুষেরা প্রথমে খেয়ে যাবার পর তাদের অবশিষ্ট খাবারই এদের ভাগ্যে জোটে। এর কারনে এদের পুষ্টির অভাবে দেখা দেয় এবং তারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পরে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি ১৫ জন শিশুর মধ্যে একজন পাঁচ বছর পূর্ণ হবার আগেই মারা যায়”।

আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা থেকে শুরু করে মানসিক প্রতিবন্ধকতা সহ নানা ধরনের রোগ হয় কলাই শুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। কিন্তু মাত্র কিছুদিন আগ পর্যন্তও এশিয়ার কৃষকেরা এটি চাষে অনীতা প্রকাশ করে কেননা এটি উৎপাদনে প্রায় চার মাস সময় লাগে কিন্তু ফলন হয় খুবই সামান্য। ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টারের বিজ্ঞানীরা এমন এক পুষ্টিকর ও অধিক ফলনশীল প্রজাতির কলাই শুঁটির ইতোমধ্যেই এটি এশিয়ার প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কৃষকের মধ্যে বিতরন করা হয়েছে এবং এর ফলে কলাই শুঁটির উৎপাদন প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন কলা :- কলা এবং কলাগাছ দুটোই আফ্রিকার সাহারা মরুভূমী সংলগ্ন এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। পশ্চিম আফ্রিকার পাহাড়ী এলাকাসহ গ্রেট ল্যাক এর প্রায় ৫০ মিলিয়ন কৃষকের আয়ের একটা বড় অংশ আসে এসব চাষ করে।

কিন্তু ২০০১ সালে ব্যানানা জ্যানথোমোনাস ওয়াইল্ট (B X W) নামে কলাল এক ধরনের রোগের উদ্ভব হয় যা উগান্ডা, থেকে শুরু করে কঙ্গো, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, এবং তানজানিয়া মহামারী প্রকোপ সৃষ্টি করে। এর ফলে কৃষকদের আয় প্রায় অর্ধেক কমে যায় এবং উগান্ডার হাজার হাজার পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। রোগটি বারবার ফিরে আসতে থাকে এবং প্রতি বছর আফ্রিকা প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি সম্মুখীন হয় এ রোগটির কারনে। অবশেষে বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে “সুপার ব্যানানা” উদ্ভাবন করেন। সাধারণ কলার পক্ষে এই (B X W) রোগ প্রতিহত করা সম্ভব নয়।

এই জন্য নাইজেরিয়া এবং উগান্ডার জাতীয় কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীর মিলিত প্রচেষ্টার এক ধরনের নতু কলা আবিস্কার করেন। এই কলার জিনে তারা ক্যাপসিকাম এর কিছু জেনেটিক উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটনার যা (B X W) রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন এই প্রজাতিকে নিয়ে আরও গবেষণা করে চলেছেন এবং আশা করা যাচ্ছে যে- আগামী ৩ বছরের মধ্যেই এটি পশ্চিম আফ্রিকার কৃষকদের মুখে পুনরায় হাসি ফিরিয়ে আনবে। ৫. শুষ্কতা সহনশীল ভুট্টা:- পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের জন্যই আবহাওয়া পরিবর্তন একটি ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এর জরিপ অনুযায়ী, শুষ্কতা এবং বৃষ্টির অভাবে আফ্রিকার ভুট্রার ফলন যা কিনা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন গরীব লোকদের খাবারের চাহিদা মেটায়, ২০৫০ সালেল মধ্যে ১০ শতাংশ কমে যাবে।

এই বিপর্যয়ের হাত থেকে আফ্রিকারে রক্ষা করতে ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ এবং মেক্সিকোর আন্তর্জাতিক ভুট্ট্রা এবং গম উন্নয়ন কেন্দ্রের বিজ্ঞানীর “ইন্টারন্যাশনাল জিন ব্যাংক” থেকে নানা ধরনের ভুট্টার জিন নিয়ে একধরনের নতুন সংকর প্রজাতির ভুট্টার সৃষ্টি করেছেন যা স্বল্প বৃষ্টিতেও অধিক ফলনে সক্ষম। ফিলিপ গোলানিয়া, কেনিয়ার একজন দরিদ্র কৃষক গত ফেব্রয়ারীতে এই নব আবিস্কৃত ভূট্টার বীজ বুনেছিলে। কেনিয়ার প্রায় একযুগ ধরেই ভয়াবহ করা চলছে কিন্তু তারপর ও ফিলিপের এক তৃতীয়াংশ হেক্টর জমি থেকেই ৩৬০ কেজি ভুট্টা ফলেছে। ফিলিপ এর মতে “এই নতুন ভূট্টার বীজ না হলে আমি কিছুই করতে পারতাম না। এটিই আগামী নয়মাস আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধার সহায়”।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন এই ভূট্টা চাষে ভূট্টার ফলন ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং দুনিয়াজুড়ে প্রায় ৪০ মিলিয়ন কৃষক এর দ্বারা নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে পারবে। (রীডার্স ডাইজেষ্ট অবলম্বনে) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।