আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক পৃথিবী, একটা বাড়ি, একটাই হৃদয়। হার্ট সুস্থ রাখার পদক্ষেপ শুরু হয় নিজের বাড়ি থেকেই।

এক পৃথিবী, একটা বাড়ি, একটাই হৃদয়। হার্ট সুস্থ রাখার পদক্ষেপ শুরু হয় নিজের বাড়ি থেকেই। সুস্থ থাকুক আপনার হার্ট। হার্ট বা হৃৎপিণ্ড কোনো কারণে কাজ না করলে জীবন থেমে যায়। তাই জীবনে হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বেঁচে থাকার জন্য হার্ট পরিশোধিত রক্তকে সারা শরীরে পরিসঞ্চালন করে। বিভিন্ন অসুখ বা কারণে হার্ট আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হৃদযন্ত্রের যেকোনো অংশ আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে হৃদরোগ বলে থাকি। বর্তমানে চিকিৎসাব্যবস্থার অনেক উন্নতি হলেও হৃদরোগ এখনো প্রধান ঘাতকব্যাধি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হৃদরোগ উন্নত বিশ্বে শীর্ষ ঘাতকব্যাধি এবং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় তৃতীয় ঘাতকব্যাধি।

সারা বিশ্বে হৃদরোগের প্রকোপ প্রতিদিনই বাড়ছে মহামারির মতো। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে যত লোকের মৃত্যু হয়, এর ২৯ শতাংশ ঘটে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগের জন্য। প্রতিবছর পৃথিবীতে এক কোটি ৭৫ লাখ লোক এ রোগে মারা যায়। এ সংখ্যা উন্নত বিশ্বে মোট মৃত্যুর ৪৫ শতাংশ এবং উন্নয়নশীল দেশে মোট মৃত্যুর ২৫ শতাংশ। আর এ-সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।

অথচ এই মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কমানো সম্ভব প্রতিরোধের মাধ্যমে। ব্রিটিশ কার্ডিয়াক সোসাইটির অফিসিয়াল জার্নালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে উন্নত দেশগুলোতে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়বে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ, আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাড়বে ১২০ থেকে ১৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশে হৃদরোগীর সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। এমনকি নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সবারই হৃদরোগ হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ রয়েছে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ৭ থেকে ২২ বছরের ছেলেমেয়েদের গলাব্যথা, পরবর্তী সময়ে বাতজ্বর এবং তা থেকে হার্টের ভাল্বের রোগ হয়। এ ছাড়া করোনারি হার্ট ডিজিজ, শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ (কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ), রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ, পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ উল্লেখযোগ্য। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও দেশে হার্টের চিকিৎসাব্যবস্থা সেভাবে গড়ে উঠেনি। হৃদরোগের ঝুঁকি যাদের বেশি ▬▬▬▬▬▬▬▬ 1) বয়স ৪০ পার হলে পুরুষের, আর ৫০ পার হলে মেয়েদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৫০-এর আগে পুরুষের হৃদরোগের ঝুঁকি মেয়েদের প্রায় দ্বিগুণ থাকে।

বিজ্ঞানীদের মতে, মেয়েদের শরীরে সে বয়সটাতে বেশ কিছু হরমোন নিঃসরণের কারণেই হৃদরোগ তুলনামূলকভাবে কম হয়। 2) বংশগত : পরিবারের সদস্যের মধ্যে মা-বাবা বা নিকট কারো হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ জন্য দায়ী ক্রোমোজমের ভেতরকার এক ধরনের জিন। 3) কর্মক্ষেত্র : কর্মক্ষেত্রে বিরূপ পরিবেশ, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, চাওয়া-পাওয়ায় অসামঞ্জস্য ও উচ্চাভিলাষী চিন্তাচেতনা, সমাজে সহযোগিতার অভাব ও মানসিক অবসন্নতা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বাড়ায়। 4) উচ্চরক্তচাপ : রক্তচাপ বেশি থাকার কারণে হৃদরোগে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হতে পারে।

তাই উচ্চরক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। 5) কোলেস্টেরল : রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বেশি হলে তাকে হাইপারলিপিডেমিয়া বলা হয়। রক্তে বেশি চর্বি হলে রক্তনালি ক্রমেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রক্ত চলাচল না হলে হার্টের সে স্থানের কোষগুলো মরে যায়। এতে হার্টঅ্যাটাক হয়।

6) ধূমপান : ধূমপান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বেই। মেয়েরা, যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খান আর ধূমপানও করেন, তাঁদের হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো অনেক বেশি। 7) ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস অনেক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ব্যথাহীন হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে। বয়স ৪০ পেরোলেই রক্তের সুগার পরীক্ষা করে জেনে নিন ডায়াবেটিস আছে কি না।

আবার ডায়াবেটিসের সঙ্গে মেদস্থূল হলে, অলস জীবন-যাপন করলে, কিংবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মেয়েরা ধূপমান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি দেহের রক্তনালিগুলো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বেশি ওজন : শরীরের অতিরিক্ত ওজন মানেই একসময় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাওয়া। যারা অলস; সারা দিন বসে-শুয়ে সময় কাটান, তাঁদের হৃদরোগের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেশি। 9) জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি : একটানা দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করলে হার্টের অসুখের হার বাড়ে বলে অনেক চিকিৎসক মনে করেন। হার্ট ভাল্বের সমস্যা ▬▬▬▬▬▬▬▬ বাতজ্বরের জটিলতা থেকে এ রোগ বেশি হয়।

বাতজ্বর যদি প্রাথমিক অবস্থায় সঠিকভাবে চিহ্নিত না হয় অথবা চিহ্নিত হওয়ার পরেও যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হয়, তখন অনেক দিন পরে হার্ট ভাল্বের অসুখ শুরু হয়। সঠিকভাবে এর চিকিৎসা করা হলে ভাল্বের অসুখ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব। এ ধরনের অসুখে সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্তপ্রবাহের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং হার্ট অতিরিক্ত কাজের মাধ্যমে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী রক্তপ্রবাহের চেষ্টা করে। এই অতিরিক্ত কাজ করতে করতে একসময় হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীরের সঠিক রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হয়। এ অবস্থায় রোগীর শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে বুক ধড়ফড় করা, কাশি, বুকে ব্যথা, শরীরে পানি জমাসহ নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।

হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয় ▬▬▬▬▬▬▬▬ স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রতিবছর যত লোকের মৃত্যু হয়, তার সাড়ে ১২ শতাংশের কারণই হৃদরোগ। অন্যদিকে বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভে ২০১০-এ দেখা যায়, দেশের ছয় কোটি মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে কম সবজি ও ফলমূল খায়। এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করে না। আর তিন কোটি ৩০ লাখ মানুষ ধূমপান করে।

সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়ানোর অসংখ্য প্রমাণ আছে। এ জন্য আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্য-সচেতন হোন ▬▬▬▬▬▬▬▬ হার্ট সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া। কিছু কিছু খাবার যা হার্টের রোগ হওয়ার ঝুঁকি যেমন বাড়ায় তেমনি কিছু খাবার হার্টের জন্য উপকারী, দরকারিও বটে। প্রতিদিন শাকসবজি ও ফল খাবেন।

দুপুরের খাবার তৈরি করুন নিজ ঘরে, যাতে খাবার হয় স্বাস্থ্যকর। নিশ্চিত করুন, প্রতিদিন সন্ধ্যার খাবারে থাকবে প্রতিজনের জন্য সবজি। শিমের বিচি ও মটরশুঁটিতে থাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যা মন্দ চর্বি, অল্প ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) হ্রাস করে। আবার বেশি ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) দেহের জন্য উপকারী। ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার যেমন লেবু, আমলকী, কাঁচা মরিচ, পেয়ারা, সবুজ শাকসবজি বেশি খেলে এইচডিএল বাড়ে।

তেমনি আঁশযুক্ত খাবার, ফল, সবজি, শস্যজাতীয় খাবার রক্তের চর্বি কমিয়ে আনে। কৌটা বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাবেন না, এতে লবণ বেশি থাকে। লবণ উচ্চ রক্তচাপের জন্য ক্ষতিকর। শিশুদের চকোলেট, চিপস, ক্যান্ডি, ফাস্টফুডসহ কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। মগজ বাদ দিয়ে বেশি বেশি মাছ খান।

সামুদ্রিক মাছ আরো ভালো। এই মাছের তেলে আছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড, যা হার্টের সুস্থতার জন্য বেশি প্রয়োজন। কায়িক পরিশ্রম করুন ▬▬▬▬▬▬▬▬ সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট হাঁটুন। হালকা ব্যায়াম, বাগান করা, হেঁটে দোকান বা বাজারে যাওয়া অর্থাৎ কিছুটা কায়িক পরিশ্রম করলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে যায়। টিভি দেখার সময় দুই ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আনা উচিত।

পরিবারের সদস্যদের জন্য নানা ধরনের শরীরচর্চার আয়োজন করা উচিত। যেমন-সাইকেল চালানো, বেড়ানো, খেলাধুলা। যখন সম্ভব, মোটরগাড়িতে না চড়ে সাইকেলে চলুন বা বাড়ি থেকে হেঁটে যান গন্তব্যে। বিরত থাকুন ধূমপান ও তামাক পরিহার করুন। পরিবারের অন্যদের, বিশেষ করে শিশুদের রক্ষার জন্য হলেও ঘরে ধূমপান বন্ধ করুন।

আসলে যেকোনো স্থানই হোক, ধূমপান বর্জন করা অবশ্যকর্তব্য। জেনে নিন ▬▬▬▬ একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জেনে নিন শরীর সম্পর্কিত সংখ্যাগুলো ক. রক্তচাপ (যদি কারো রক্তচাপ ১৪০/৯০ মি. মি. পারদ বা এর ওপরে হয় তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়)। খ. দেহের উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন (বিএমআইথবডি মাস ইনডেক্স)। বাড়তি ওজন হৃদরোগের এক নম্বর ঝুঁকি। গ. রক্তে মোট কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি।

ঘ. কোমরের মাপ (নাভি থেকে ওপরে কোমর বরাবর মাপ দিয়ে কোনো পুরুষের ৩৭ ইঞ্চি এবং মহিলার ৩২ ইঞ্চির বেশি পাওয়া গেলে তার মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে)। রোগ প্রতিরোধ করুন ▬▬▬▬▬▬▬▬ উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ফেইলুর, বাতজ্বর, হরমোনঘটিত কিছু রোগ হৃদরোগের কারণ ঘটায়। যথাসময়ে যথাযথভাবে চিকিৎসা করালে ভবিষ্যতে হৃদরোগের হাত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। বাচ্চাদের গলাব্যথার চিকিৎসা যদি সঠিকভাবে করা যায়, তবে বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকার সম্ভাবনা থাকে। কমিয়ে ফেলুন দুশ্চিন্তা ▬▬▬▬▬▬▬▬ দুশ্চিন্তা বেশি হলে হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়বেই।

অযথা দুশ্চিন্তার কোনো মানেই হয় না। এই চাপ আর দুশ্চিন্তায় বেড়ে যায় অ্যাড্রেনালিন হরমোন, অন্যান্য হরমোনও। বেড়ে যায় হৃদস্পন্দন। বাড়ে রক্তচাপ, ঘটে হার্টঅ্যাটাক। তাই দুশ্চিন্তা কমিয়ে ফেলুন।

আর বিষণ্নতা মনকে কাবু করে। বিষণ্ন মানুষ বদভ্যাসে জড়িয়ে পড়ে। ধূমপান বা মদপান করে। সুষম খাবার খায় না। ব্যায়াম করে না।

মনের ভেতর সব সময় নেতিবাচক প্রশ্ন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিষণ্ন মনের লোক তাদের হার্টঅ্যাটাক, বিষণ্ন নয় এমন রোগীর তুলনায় চার গুণ বেশি ঝুঁকি। সুতরাং চাই মনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।