আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা ও দ্বন্দ্ব

-- গতকাল বাড়ি পাল্টানোর ধকল গেছে মাহমুদা বেগমের উপর নিয়ে। অনেক ক্লান্ত সে। তবে ক্লান্তি নিয়ে দু-দন্ড আরাম করার সময় নেই। বাড়িতে মোট সদস্য সাত জন। দুই বৌ, ছোট ছেলে, দুই মেয়ে, একটা কাছের মেয়ে, এই নিয়ে মাহমুদার সংসার।

বাকি দুই দুই মেয়ে আর মেয়ের জামাই থাকে বাহিরে, বড় ছেলেটাও দেশের বাহিরে। মাহমুদা বেগমের ভাষ্য মতে ১২ বছর বয়সে সে বাবা কে খেয়েছে, চল্লিশে মা আর পঞ্চাশে সবচেয়ে বড় সম্বল স্বামী। এখন অনেকটা সন্তান নির্ভর। কথা মনে হয় একটু অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল! থাক পুরনো আলোচনায় ফিরে যাই। বাড়ি পাল্টানোর পুরো কাজটাই করতে হয়েছে তার, আর ছেলে মেয়েদের।

বড় বউ প্রেগনেন্ট তাই তাকে এর থেকে দুরেই রেখেছে মাহমুদা। যদিও কাউকে বলে না, মনে মনে ভাবে বৌ এর অনাগত সন্তান হবে ঠিক তার স্বামীর মত। ওই বাচ্চাটাকে নিয়ে তার দিন কেটে যাবে। তবে এমন স্বপ্ন যে ফিঁকে হবে এমনটাও মনের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে উকি মারে। কেন এখানে পড়ে থাকবে বৌ? ছেলে যে বিদেশে।

ছোট বৌ বড় ঘরের মেয়ে। প্রায়ই তাদের বাড়ি থেকে শুনতে হয়। মেয়ে কে আমরা ফেলে মানুষ করিনি। তাই বাড়ি পাল্টানোর সব কাজ নিজেই করেছে। যে হাতে ছয় ছয়টা ছেলে মে বড় করা যায়, সেই হাতে একটা বাড়ি পাল্টানোর কাজ শেষ করতে পারবেনা সে।

না, পেরেছে মাহমুদা। সে তোর আর বাবা মার আদুরে মেয়ে না। নতুন বাসাটা অনেক বড়, বিশাল বড় বড় রুম। যা সংসারের প্রথম জীবনে কল্পনাও করেনি মাহমুদা । তবে সেই বড় ঘরে মার রুমটা সবচেয়ে ছোট।

দুই মেয়ে কে নিয়ে এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ছোট ছেলে যে তাকে বড় রুমের কথা বলেনি তা না। তবে তার একটাই কথা আগের বাসায় আমার রুম ছোট ছিল আপনার পরের রুপ আমার। তাহলে বড় বৌকে দিতে হবে সব চেয়ে ছোট রুম। আর এমনটা করলে সংসারে অশান্তির আগুন যে দাউ দাউ করে জ্বলবে তা এতো দিনের সংসারের অভিজ্ঞতায় ঠিক জানেন তিনি।

আর সোহাগ, তার বড় ছেলেটাও দেশে নেই। ছোট বেলা থেকে এই ছেলেটা সংসারের জন্য অনেক করেছে। রুম নিয়ে যে দ্বন্দ তা এখানেই শেষ নয়, ছোট ছেলে মায়ের ড্রয়িং রুমে থাকার আয়োজন করলো, এখানে একটা দরজা করে দিলেই হবে। ব্যাপার টা এমন মায়ের এতো কিছুর কি দরকার। না এ ব্যাপারে বৌদের ও কোন মন্তব্য নেই, তারা ঘর সাজাতেই ব্যস্থ।

বৌদের নিয়ে মাথা ঘামাননা মাহমুদা। তাদের তো পেটে ধরেনি সে,তাই কোন অভিযোগ আনুযোগ নেই। বরং বৌদেরই সেবা করেন তিনি। ছোট মেয়েটা অনেক এ রোখা, মায়ের এমন অপমানে ভাত খেলো জবা। ভোর রাতেও না।

তাতে কি কারও কিছু আসে যায় মা ছাড়া। জবা মাঝে মাঝে ভাবে এই মা না থাকলে কোথায় যাবে ওরা। আবার এও ভাবে দুই বোন আর মা যদি একই দিনে মারা যেতো তাহলে অনেক ভালো হতো। রুম নিয়ে এলো কিছু হতো না। ভবিষ্যতের জন্য একটা রুম ফাকাই পড়ে থাকতো।

নতুন অতিথিদের মাঝে পুরোনো পাখিটার এতো অযতœও হতো না। সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে ছুঁটলো জবা , বুকে চাপা একটা কষ্ট। এই কষ্ট মা ছাড়া কি অন্য কেউ বোঝে! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।