আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ এবং জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশে একটি মিশ্র শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

আসুন অন্যের বিচার করার আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখি। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এদেশের জনগণরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বিগত গনতান্ত্রিক নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে দেশের মানুষ কোন একটি সরকারের উপর তাদের আস্থাকে ধরে রাখতে পারছেনা। কেননা জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে প্রতিটি সরকারই সময়ের সাথে সাথে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনী ইশতিহারকে সিন্দুকবন্দী করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে উঠে পরে লাগছে।

এতে করে জনগণের ভাগ্যের তো কোন পরিবর্তন হচ্ছেই না, বরং দেশের উন্নয়ন তরান্বিত হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে। প্রতিটি সরকারের আমলেই অভ্যন্তরীন নানামুখী দুর্নীতির কারলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেইসাথে দেশের খনিজ সম্পদের দখল চলে যাচ্ছে বিদেশে মহলের হাতে। আর এসব দুর্নীতির বিচারের নামে প্রহসন চলে দিনের পর দিন ধরে। এতেও দেশের অর্থ নাশ হয় মাত্র। দেশের টাকা ও খনিজ সম্পদ আর দেশে ফিরে আসেনা।

বরং এই অর্থ সংকট ও খনিজ সম্পদের খাটতির জন্য জনগণকেই মূল্য দিতে হয় নানান কায়দায়। আমি এসব কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রকেই দায়ি করবো। আমার বক্তব্যের সঠিকতা নির্ণয়ের জন্য আমার যুক্তিগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে নানামুখী দুর্নীতির জন্য যেসব কারণ দায়ী- ১. জবাবদিহিতার অভাব। ২. বিচারবিভাগ দলীয়করন।

৩. দুর্নীতির পর্যাপ্ত সুযোগ লাভ। ৪. প্রশাসনে সৎ এবং যোগ্যদের অভাব (সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ বানিজ্যের প্রভাব)। ৫. প্রতিটি দলকর্তৃক নির্বাচনে অঢেল অর্থের ব্যবহার। মূলত উপোরোক্ত কারণসমূহের কারণেই প্রতিটি সরকারের আমলে হাজার হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি আর লুটপাট ঘটে থাকে। আর দেশকে দুর্নীতির কালো থাবা থেকে রক্ষা করতে হলে উপোরোক্ত কারণগুলো নিয়েই আমাদের ভাবতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

কোন কঠিন রোগ সারাবার জন্য সেই রোগের উৎসকে খুজে বের করতে হয় এবং রোগের উৎসকে সারিয়ে তুলতে হয়। তাই দুর্নীতি নিয়ে নানান মুখরোচক ভাষন এবং লোকদেখানো সভা সেমিনার করলেই এর প্রতিকার সম্ভব নয়। প্রয়োজন ব্যতিক্রম কিছু করার। আমার প্রস্তাবঃ দেশে একটি মিশ্র শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মিশ্র শাসনতন্ত্রঃ দেশে গনতান্ত্রিক এবং সামরিক এই দুই ধারার সরকার গঠিত হবে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর।

প্রতিটি সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরই বহাল থাকবে। কিন্তু জনগণ ১০ বছর পর পর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। কেননা প্রতি দশ বছরে একবার দেশে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হবে। আর সেই সরকারের মেয়াদের পর দেশের ক্ষমতা চলে যাবে সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন পরিষদের হাতে। যারা পরবর্তী পাঁচ বছর দেশ শাসন করবে।

অর্থাৎ শাসনতন্ত্রকে এভাবে ধারাবাহিকভাবে গনতান্ত্রিক এবং সামরিক এই দুই খাতে চলতে দিতে হবে। সামরিক সরকার গঠিত হবে তিন বাহিনীর প্রধান এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান কর্তৃত নির্বাচিত সেনাবাহিনীর জেষ্ঠ্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তারাই প্রধান্য পাবেন। সেনা সরকারের মেয়াদ উত্তির্নের তিন মাস আগে তারা একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের দ্বারা একটি গনতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। মিশ্র শাসনতন্ত্রের সুফলঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু একটি প্রশ্নবিদ্ধ ইস্যু, তাই সামরিক পরিষদের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিরপেক্ষ হবেই আমার ধারনা।

যা প্রতিটি গনতান্ত্রিক দলই মেনে নিবেন বলে আমি আশাকরি। তেমনি গনতান্ত্রিক সরকার তাদের মেয়াদের পরে সেনা পরিষদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিবেন। এতে কোন নির্বাচন কমিশন গঠদের দরকার নেই। কোন নির্বাচনেরও দরকার নেই। এতে দেশের অর্থেরও অপচয় রোধ হবে।

গনতান্ত্রিক সরকারের আমলে কোন দুর্নীতি ও অনিয়ম হলে সামরিক সরকারের আমলে তা সুষ্ঠভাবে নিরুপন এবং নিয়মানুযায়ী বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে দেশে ন্যায় বিচারের অনুশীলন শুরু হবে। অন্যায়কারী যেই হোক না কেন সে যদি শাস্তি পায়, তাহলে দেশে অন্যায়ের অনুশীলন হ্রাস পাবে। সামরিক সরকার নির্বাচন কমিশনকে প্রতিটি গনতান্ত্রিক দলকে নির্বাচনে অর্থ খরচ করার একটি নীতিমালা ধার্য করে দিবে। কোন দল তা না মানলে তাদের দলকে নিষিদ্ধ করা হবে।

এতে করে নির্বাচিত সরকারের আমলে চাঁদাবাজি এবং পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অর্থ সংগ্রহের ঝোক কমে যাবে। সামরিক সরকারের আমলে প্রশাসনিক খাতে সৎ এবং দক্ষ লোকের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হওয়াতে প্রশাসনিক এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষ এবং সৎ লোকের সংস্থাপন ঘটবে। গনতান্ত্রিক সরকার সামরিক সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকার কারনে গনতান্ত্রিক সরকার আমলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়া সামরিক সরকারের আমলেও প্রশাসনিক খাতে দুর্নীতির সুযোগও হ্রাস পাবে। মিশ্র শাসনব্যবস্থার এমনও অনেক সুবিধা নিরুপন করা সম্ভব।

মূল কথা হচ্ছে এ মিশ্র শাসনব্যবস্থায় প্রতিটি সরকারেরই পরবর্তী সরকারের কাছে একটি দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে। যা তারা এড়াতে পারবেনা। আর দায়বদ্ধতা এবং জবাবদীহিতা কায়েম হলেই দুর্নীতির সুযোগ কমে যাবে। দেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত। বাংলাদেশে এমন মিশ্র শাসনব্যবস্থা কোন দিন কায়েম হবে কিনা জানিনা।

তারপরেও আমি আমার মতবাদ দিয়ে রাখলাম। যদি কোন দিন দেশে মিশ্র শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এতে বোধ করি দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থ সমুন্নতই হবে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসই হয়তো এড়িয়ে গেলাম সময় সল্পতার জন্য। বুদ্ধিমান পাঠকরা তা বোঝার ক্ষমতা রাখেন বলেই আমার ধারনা। পরিশেষে, সকলের সুচিন্তিত মতামত আশা করছি।

। । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।