আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুত পোষা

সত্য কথা বলি, সৎ পথে চলি......বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি এ লেখাটি আমি ক্লাস এইট-এ পড়াকালীন সময়ে লিখে ছিলাম । কিন্তু কোথাও প্রকাশ করিনি । “ভুতের-ব্লগ”-এ এটি প্রথম প্রকাশিত হল আর লেখাটি আমি ভুতের ব্লগের পরিবারবর্গ কে উৎসর্গ করলাম । ---------------------------------------------------------------------- ১. তখন আমি ক্লাস ফাইভ এ পরতাম । আমাদের গ্রামের বাড়ির এক স্কুলে ।

স্কুলটি ছিল জমিদার আমলের, যার কারণে ক্লাসগুলোতে অনেক ফাঁকি দেওয়া যেত । যেমন নাম কল করার পর কেউ কেউ ভাঙ্গা জানালা দিয়ে পালিয়ে যেত । তাদের প্রধান ছিল শান্ত । নামে শান্ত হলেও আসলে সে কিন্তু শান্ত ছিল না, তাই ড্রিল টিচার প্রায়ই তাকে শাস্তি দিতেন আর ডাকতেন অশান্ত বলে । তাকে ভয় পেত না এরকম বুকের পাটা আমাদের কারও ছিল না, তাই পালিয়ে গেলেও কেউ ভয়ে বলত না ।

একদিন সে ক্লাসের সবাইকে বলল, আমি তোমাদের ভুতের বাচ্চা দেখাব । আমরা তো সবাই হেসেই খুন, ভুতের বাচ্চা হা.....হা.....হা... ; ক্লাসের সবাই হাসছে কিন্তু আমার হাসিটা মনে হয় একটু বেশি শব্দে হয়ে গিয়েছিল, তাই আর কাউকে লক্ষ্য না করে, শান্ত আমাকে ধমকের সুরে বলল, দেখ হাসবি না বলছি, এমন ঠেঙ্গানি দেব না যে নিজের নাম ভুলে যাবি । আমি আমার হাসি থামাতে না থামাতেই ক্লাসে টিচার চলে এলেন । এক এক করে যখন শেষ ঘণ্টা এলো তখন খবর পাওয়া গেল আমাদের শেষ ঘণ্টায় অন্য স্যার আসছেন । কারণটা অবশ্য জানা যায়নি ।

এমন সময় এলেন শফিক স্যার, তিনি যেমন মেজাজি তেমনি কড়া । তিনি বললেন আমি তোমাদের একটি অনুচ্ছেদ লিখতে দেব । আমরা তো পড়লাম মহা মুশকিলে, তিনি আবার কারো কথা শুনবেন না । কিছুক্ষণ পর তিনি লিখতে দিলেন “শিমুল গাছের প্রয়োজনীয়তা”। আমরা তো অবাক হঠাৎ করে শিমুল গাছ নিয়ে লেখা চাট্টিখানি কথা নয় ।

তাও আবার প্রয়োজনীয়তা । ক্লাসের ছাত্র হিসেবে আমি ছিলাম মধ্যম, তাই পাশের জনেরটা না দেখে উপায় ছিল না । দেখছি আর লিখছি, লিখছি আর দেখছি । এমন সময় পেছন থেকে স্যার আমার কানটা টেনে ধরলেন, আর রাগে গরগর করতে লাগলেন । তারপর অনেক চেষ্টা করেও বাঁচতে পারলাম না ।

স্যার তার বেত দিয়ে ধমাধম কয়েকটা বেত্রাঘাত করলেন । এরপর সারা ক্লাসে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে হল । ছুটি হয়ে গেলে সবাই হৈ হুল্লোড় করতে লাগল কিন্তু আমার মনটা খারাপ । আমার মনের অবস্থা দেখে শান্ত বলল চল্ তোকে ভুতের বাচ্চা কিনে দেব । তুই ইচ্ছা করলে বাড়িতে পুষতে পারবি, যা হুকুম দিবি তাই করে দেবে ।

আমি বললাম, তোর কি মথা খারাপ হয়েছে, এটা কি আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ যে,যা চাইব তা-ই পাব । শান্ত উত্তর দিল, কেন তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? চল্ আমার সাথে । সে আমাকে এক প্রকার জোড় করেই নিয়ে গেল । যেতে যেতে এসে থামল আমাদের গ্রামের পুরনো এক মন্দিরে । এখানে নাকি আজ ভুতের মেলা হবে আর অনেক বাচ্চা ভুত এতে অংশ নিবে, ঠিক “নতুন কুড়ি” অনুষ্ঠানের মত এবং এ মেলা থেকে অনেক বাচ্চা ভুত হারিয়ে যাবে ।

আমরা সেই বাচ্চা ভুতদের একটি কীডন্যাফ করবো, বুঝলি? শান্ত বলল । আমি বললাম, না, বুঝি নাই । শান্ত উত্তর দিল, থাক তোর ওসব বুঝে কাজ নেই, এখন যা বলি তাই কর -কি করব? -আমার ব্যাগটা রাখ আর তুই এখানে দাড়িয়ে থাক । আমি যাব আর আসব । শান্ত আমাকে মন্দিরের বাইরের রাস্তায় দাড় করিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল ।

২. প্রায় আধ ঘণ্টা হয়ে এলো তাও শান্ত ফিরছে না । কারণটা কি? নিজের চোখে দেখার জন্য মন্দিরের ভিতরে ঢুকে পড়লাম । অনেক পুরনো মন্দির, কেউ বোধ হয় এখানে আর আসে না । কিন্তু ভিতর থেকে ধুয়ার কুণ্ডলী বের হচ্ছে । ভিতরের এক কুঠুরি থেকে শব্দ আসছে গরর...র...র..হুশ...হুশ....যা...যা....ঢুক....ঢুক.......... ভিতরে ঢুক ।

শব্দ শুনে কুঠুরিটা চিনতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কিন্তু ধোঁয়ায় চোখ জ্বলে যাচ্ছিল । কুঠুরিতে ঢুকতেই শান্ত আমাকে ইশারায় ওর মত চন্দ্রাসনে বসতে বলল । আমি তাই করলাম । দেখি ২ হাত লম্বা দাড়িওয়ালা আলখেল্লা পরা এক জন বুড়ো আমার সামনে বসে আছেন । তার সামনে একটি কৌটা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে ।

আমি বললাম, আচ্ছা এখানে না “নতুন কুড়ি” হওয়ার কথা, ভুতের মেলা, বাচ্চা কিছু-ইতো দেখতে পাচ্ছি না । শান্ত ফিসফিসিয়ে বলল, হিস...সসস, একদম চুপ, পরে কথা হবে, দেখছিস না সাধু বাবা ধ্যানে বসেছেন । -আমি বললাম, কোথায়? তাকে তো আমি দিব্যি ঝিমুতে দেখছি । -শান্ত অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, ধ্যাৎ কি যে করিস না ধ্যানে বসেই ভুতের বাচ্চা কীডন্যাফ করতে হয় । কেন তুই জানিস না? তুই এভাবে ডিস্টার্ব করলে ভুতের বাচ্চা তো দূরে থাকুক পরে আমরাই ভুত হয়ে ফিরব ।

সাধু বাবা এবার মুখ খুললেন, চোপ বেত্তমিজ, না লায়েক, তোদের জন্য হাত ফসকে একটা বেরিয়ে গেল, দুটো ধরেছিলাম । এই নে, হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছি, শিশি এনেছিস? শান্ত বলল, জ্বি না, শিশি আনি নাই । মনে হল সাধু বাবা খুবই বিরক্ত হলেন, রাগান্বিত স্বরে তিনি বললেন, ভুত কিনতে আসছিস আর শিশি আনিস নাই মানে? এখন তোর মুখের মইধ্যে নিবি, বেয়াকুব? আমি বললাম, না ভুতবাবা ও মুখে নিতে রাজি হবে না কারণ, শুনছি ভুতেরা পেছাব করে দেয়, যদি মুখে নিলে ওর মুখে..মানে, বলছিলাম আমার কাছে পানির ফ্লাক্স আছে । শান্ত আমার কথায় প্রথমে রাগ করলেও পরে পানির ফ্লাক্স এর কথা শুনে রাগ দমে নিল । সাধু বাবা উত্তর দিলেন, ঠিক আছে পানির ফ্লাক্স দে, আপাতত এটাতেই রাখ আর আমি ভুতবাবা না, আমি সাধু বাবা ।

সাধুবাবা পানির ফ্লাক্স এ ভুতের বাচ্চাটা রাখলেন আর বললেন, এবার আমার মওকাটা দে, একশত পাঁচ টাকা চাইর আনা পাঁচ পাই আর শোন এটা হচ্ছে মেছো ভুতের বাচ্চা । তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ, এর এক চোখ কানা তাই সবাই একে কানাভুত বলে ডাকে । সকাল বিকাল পুকুরে বা নদীতে চুবিয়ে রাখলে এটা আপনা থেকেই মাছ ধরে খেতে পারবে । তবে আধ ঘণ্টার বেশি চুবিয়ে রাখলে এটা মাছ মানে মাছভুত হয়ে যাবে । শান্ত তার পকেট থেকে ৭০ টাকা বের করল ।

তার কাছে আর নেই তার মানে বাকিটা আমাকে দিতে হবে । কিন্তু চার আনা পাঁচ পাই কোথায় পাব । সাথে তো নেই, এদিকে সাধু বাবা বেকে বসলেন । অবশেষে ১৭০ টাকা দিয়ে তবে মুক্তি । বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় আটটা বাজতে চলল ।

শান্ত কানাভুত টাকে আমার কাছে দিয়ে বলল, দেখ তুই তো জানিস আমার বাবা ট্রাক চালায় তার মাথা সব সময় ঠিক থাকে না । মা মারা যাবার পর থেকে এমনটা হল । এটাকে মানে কানাভুতটাকে তুই যত্ন করে রাখিস । কথা শেষ হতে না হতে আমার বাড়ির গেটের সামনে এসে হাজির হলাম । শান্ত বিদায় নিয়ে চলে গেল ।

আমিও ভিতরে ঢুকলাম । ভিতরে ঢুকতেই ছোট বোন দৌড়ে এসে বলল, ভাইয়া এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আজ তোমাকে দিয়ে.. কথা শেষ না হতেই বাঘের হুংকার, মানে আমার বাবা, কিরে স্কুল ছুটির পর এ তিন ঘণ্টা কোথায় ছিলি? তোকে দিয়ে আজ ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে উড়াবো । মামা সামনেই ছিলেন, তিনি আমাদের সাথে থাকেন । তিনি বললেন, দুলাভাই ঘুড়ি বানানোর কাজটা না হয় আমিই করি । আপনি বরং ফ্লাশ লাইটের ব্যবস্থা করেন ।

-দেখ জালাল সব সময় ইয়ার্কি ভাল লাগে না, ছেলেটা যদি বদমায়েশ হয়ে যায় তখন আমার মুখে চুন কালি পড়বে সেটা কি তুমি চাও ? -আহা দুলা ভাই চটছেন কেন? আপনি যান আমি সব দেখছি । এমন সময় এলেন মা, তিনি জালাল মামার কাছে আমাকে দিয়ে বাবাকে টেনে নিয়ে গেলেন । কিরে এতক্ষণ কোথায় ছিলি? পড়িস ক্লাস ফাইভে আর এ বয়সেই সেয়ানা হয়ে গেছিস, সিগারেট ধরেছিস নাকি? আফিম? অবশ্য গাঁজাও আজকাল খুব জনপ্রিয় । আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু মামা আমাকে থামিয়ে বললেন, যা টেবিলে ভাত রাখা আছে খেয়ে শুতে যা, কাল সকালে তোর সাথে কথা বলব । ৩. আমি কথা না বলে ভাত খেয়ে গেলাম বিছানায়, গিয়ে দেখি কে যেন আমার ব্যাগ খুলেছে ।

আমি ভীত গলায় কানাভুতকে ডাকলাম । কানাভুত... ও কানাভুত.., সাথে সাথে উত্তর এল, কিরে তুই তো আস্ত একটা গাড়ল, আমাকে এর ভিতর বন্দি করে রেখেছিস আবার ব্যাগটাও বন্ধ করে রেখেছিস, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল, তাই বের হয়েছি । আমি বললাম ঠিক আছে আমার ভুল হয়েছে কিন্তু তুমি আমাকে তুই তুই করে বলছ কেন? আমি তো তোমার বন্ধু না, তাছাড়া .. -তাছাড়া কি? -তাছাড়া তোমরা হচ্ছ ভুত জাতি আর আমরা মানুষ । মুচকি হাসির শব্দ হল এবং কানাভুত বলল, তাতে কি হয়েছে, আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি তুইও ক্লাস ফাইভে পড়িস । একই ক্লাসে পড়লে কি বন্ধু হওয়া যায় না? কিন্তু তার আগে তুই বল আমাকে কেন বন্দি করে এনেছিস ? অবশ্য তিন কুলে আমার কেউ নাই, বাবা মা ভাই বোন সবাইকে কাচু মুন্সি তাবিজ করে মেরে ফেলেছে ।

এবার নতুন কুড়ি মানে ভুতের নতুন কুড়িতে বাদাম আর পানি বেচতে এসেছিলাম কিন্তু শয়তান কাচু মুন্সি আমাকে ধরে এই পানির বোতলে আটকে দিয়েছে । এখন তুই-ই বল এটা কি ঠিক হল? আমি বিরক্ত ভরে বললাম, না ঠিক হয় নাই, কিন্তু তুমি আমাকে তুই তুই করে বলছ কেন? ঘনিষ্ঠতা ছাড়া কেউ তুই তুকারি করলে আমার ভালো লাগে না, অনেক রাগ হয় । একবার আমাদের হেডস্যার আমাকে তুই করে বলেছিল বলে আমি দুদিন স্কুলে যাইনি, পরে অবশ্য বাবা হেডস্যার কে সব খুলে বলেছিলেন, তারপর থেকে হেডস্যার আমাকে তুমি করে বলেন । অথচ সামান্য একটা পুচকে ভুতের বাচ্চা কিনা আমাকে তুই করে বলছে । যাক কি আর করা ভুতের বাচ্চা বলে কথা ।

সহসা কানাভুত বলল, কিরে কোন কথা বলছিস না যে? তোর কি শরীর খারাপ নাকি আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না? চল আজ থেকে আমরা দুজনে বন্ধু হয়ে যাই । আমি উত্তর দিলাম, তুই করে বললে আমার ভালো লাগে না, বন্ধু হব তবে.. ; ভুতের বাচ্চা বলল, তবে কি? তোকে তুই করে বলব না, এইতো? ঠিক আছে যা আজ থেকে তোকে আর তুই করে বলব না । এখন এক কাজ কর আমাকে এই বোতলের ভিতর থেকে বের করে দে । আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম কেন..কেন? -কেন আবার বাইরে বের হব । তোর সাথে খেলব, একই বিছানায় ঘুমাব, একসাথে খাব, স্কুলে যাব, আরও শুনবি? -না..না..থাক আর শুনতে হবে না ।

কিন্তু তুমি যদি মুক্ত হয়ে চলে যাও আর না আসো । ধমকের সুরে কানাভুত বলল, কিযে বলিস, ভুত পুষতে এনেছিস আর এটা জানিস না যে ভুতেরা সমাজ ছেড়ে এলে আর সমাজে যেতে পারে না, তাছাড়া আমি আর তুই তো বন্ধু, বন্ধুকে ছেড়ে কি কখনও যাওয়া যায়, বল? ঠিক এমন সময় আম্মা ও ঘর থেকে বললেন, কিরে কার সাথে কথা বলছিস । আমি তাড়াতাড়ি বাতি নিভিয়ে দিলাম কিন্তু ঘুম আসছে না । কারণ গল্পের ভুত নয়, বাস্তব ভুত আমার সাথে বাস করছে । হঠাৎ নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম, গরর...ররর...র.. হুস...স.. , নাক ডাকার শব্দ শুনে কিছুটা অবাক হলাম কারণ আমাদের বাড়িতে কেউ নাক ডাকে না ।

তখন বুঝতে পারলাম এটা কানাভুতের নাক ডাকার শব্দ । পরদিন ভুতের বাচ্চাকে মানে কানাভুতকে নিয়ে কি কি করব তা চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা আর টের পাইনি । অবশ্য ঘুমিয়ে গেলে টের পাওয়া যায় না কি ভাবে ঘুম এল । একদিন বিছানায় শুয়েছি রাত ১০:৩০ মিনিট বাজছে, হঠাৎ মাথায় একটা চিন্তা হল মানুষ কি ভাবে ঘুমায়, ঘুম কিভাবে আসে, কেন ঘুম আসে, কখন আসে দেখতে কি রকম ইত্যাদি, ইত্যাদি । কিন্তু ১০:৩০ থেকে ১২:০০ বাজতে চলল, ঘুম আর আসে না ।

তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা আর টের পাইনি । ৪. সকালে দেখি পানির ফ্লাক্স নেই । কোথায় গেল পানির ফ্লাক্স, খুঁজেও পেলাম না, মা কে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন অঞ্জনা ধুতে নিয়ে গেছে । অঞ্জনা হচ্ছে আমাদের বাড়ির ম্যানেজার মানে কাজের মেয়ে । কাজের মেয়ে বলা আমাদের বাসায় নিষেধ, এটা আমার বাবার হুকুম, তাই আমি কারও সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বলি ও হচ্ছে আমাদের বাড়ির ম্যানেজার ।

অদ্ভুত তার কাণ্ড কারখানা, একদিন তাকে কফি বানাতে বলায় সে কফি বানিয়ে তা ছাকনি দিয়ে ছাঁকছে কিন্তু কোন কফি দানা পাচ্ছে না বলে সেই খানেই মাথায় হাত দিয়ে বসে সূরা ইয়াসিন পড়ছে । প্রথম প্রথম যখন সে আমাদের বাড়িতে এসেছিল, একদিন সকাল বেলার ঘটনা, বারান্দায় একশ পাওয়ার এর বাতিকে সে ফু দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করছে, নিভছে না বলে তাকে খুবই উৎকণ্ঠা মনে হল, আমাকে দেখে বলল, ভাইজান কুফি ডা মানে হারিকেন ডা নিভাইতে পারলাম না, অনেক বার ফু দিছি কিন্তু নিভে না, এহন কি লতে ধইরা টান দিমু? তার কথা শুনে আমি তো ‘থ’ হয়ে গেলাম কারণ লত বলতে সে বিদ্যুতের তার কে বোঝাচ্ছে । যাক্ এসব কথা কিন্তু চিন্তা হচ্ছে এখন আবার আমার পানির ফ্লাক্স মানে কানাভুত নিয়ে না জানি কি করছে । অঞ্জনা..এই অঞ্জনা..তুমি কি আমার পানির ফ্লাক্স ধরেছ? আমি জিজ্ঞেস করলাম । অঞ্জনা বলল, জ্বে ভাইজান, আম্মাজান কইল আইজ আফনের স্কুল বন্ধ তাই ধুইয়া দিতে ।

-কিন্তু কোথায় পানির ফ্লাক্স? -জ্বে, ছাদে শুকাইতে দিছি । অঞ্জনা বসে বসে চিরুনি দিয়ে উকুন আনছে আর কটাস কটাস করে মারছে । দেখে আমার ঘেন্না লাগছে । মনে হয় যেন তার মাথা একটা উকুন সমুদ্র । তা থেকে হাজার বিলিয়ন উকুন মারলেও কমবে না ।

আচ্ছা একটা পরিসংখ্যান করলে কেমন হয়, যদি একজন মানুষের মাথায় ১০০টি উকুন থাকে তাহলে প্রতিদিন দশটা করে মারলে দশদিনে তা শেষ হবার কথা কিন্তু বাকি ৯০ টা হতে দৈনিক গড়ে ১০০০ টা ছোট উকুন মানে বেবী উকুন জন্ম নিচ্ছে, কাজেই যা করতে হবে তা হল সমূলে ধ্বংস করতে হবে । অর্থাৎ মাথার চুল ফেলে দিতে হবে বা উকুন নাশক শ্যাম্পু দিতে হবে । কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে কানাভুত কে নিয়ে, নিশ্চয়ই সে ছাড়া পেয়ে উড়ে গেছে । হঠাৎ কানে কানে কে যেন বলল, কি রে কি ভাবছিস, আমি চলে যাইনি । আমি বললাম, কিন্তু তুমি তো চলে যেতে পারতে ।

-পারতাম কিন্তু যাইনি, কারণ শত হলেও তুই আমার বন্ধু । চল আমরা বাইরে থেকে ঘুরে আসি । -কিন্তু মা যদি বকা দেয়, এই সাত সকাল বেলা বাইরে বের হলে । -বকা দিবে না, চল্ । তারপর দুজনে মানে আমি ও কানাভুত গ্রামের এক পুরনো রাজ বাড়িতে ঘুরতে গেলাম ।

অনেক পুরনো প্রায় দুশো বছর আগের । কানাভুতের সাথে রাজ বাড়ির পুকুর ঘাটে বসে অনেক কথা হল, কানাভুত হঠাৎ বলল, জানিস এই রাজ বাড়িটা আমাদের ছিল । আমি স্তম্ভিত গলায় বললাম, কিভাবে? কানাভুত অনেক উৎসাহ নিয়ে বলল, কিভাবে? শুনবি? আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই শুনবো । -এই বাড়ির মোট সদস্য ছিল বারোজন তাদের মধ্যে আমার চারজন চাচা-চাচীও ছিলেন । আমি ছিলাম আমার বাবা মা’র ছোট ছেলে, দাদা অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন ।

দাদার নাম ছিল শায়েব উদ্দিন খান আর বাবা’র নাম ছিল নওয়াব উদ্দিন খান । চাচারা ধন সম্পত্তির লোভে আমাকে এবং আমার বাবা মা’কে বিষ খাইয়ে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল । সেখানে আমাদের লাশ শেয়াল কুকুর আর শকুনেরা খুবলে খুবলে খেয়েছে । তারপর আমরা ভুত হয়ে গেছি এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মানুষদের শান্তিতে থাকতে দেব না । -মানুষ কি মরলে ভুত হয়ে যায়? আমি জিজ্ঞেস করলাম ।

-না, সব সময় হয় না । যখন তার আত্মা অতৃপ্ত থাকে এবং তাকে কবর দেয়া হয় না, তখন সে ভুত হয়ে যায় । ভয়ে আমার বুক ধুক্ ধুক্ করছে । আমি তারপরেও জিজ্ঞেস করলাম, তার পর কি হল? -তারপর, এইতো কদিন আগে আমার বাবা মা’কে কাচু মুন্সি তাবিজ করে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে । অবশ্য আমরা আমাদের চাচার বংশধরদের কাউকেই বাঁচতে দেইনি ।

-কিন্তু তুমি তো এখন ক্লাস ফাইভে পড়, এসব ভুতুরে ঝামেলায় যাওয়া কি ঠিক? -না, ঠিক না । তবে ... -তবে কি? -থাক না এসব কথা । আসল কথাইতো তোকে বলা হল না । আজ তোদের বাড়িতে সমরেশ বাবু আসবেন তোর নামে নালিশ করতে । -সমরেশ বাবু মানে আমাদের অংক স্যার ।

কিন্তু উনি আমার নামে নালিশ করবেন কেন? -কারণ, তুই এবার অংকে ডাব্বা মেরেছিস । -কিন্তু আমি তো ইচ্ছে করে ডাব্বা মারিনি । পড়তে তো ভালো-ই লাগে, মুখস্থও হয় কিন্তু পরীক্ষার হলে গেলে সব ভুলে যাই । -হুম্ বুঝতে পেরেছি, চল্ বাড়িতে যাই । বাড়ি গিয়ে একটা উপায় বের করতে হবে ।

৫. ড্রয়িংরুমে সমরেশ স্যার, বাবা, মামা, আমি ও কানাভুত । সমরেশ স্যার কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে, দেখুন জালাল সাহেব পড়ালেখা ছাড়া আমাদের দেশে কোনো গতি নাই । সবাইকে শিক্ষিত করার জন্য সরকার কত কিছু করছে আর আপনার ভাগনে অংকে ডাবল জিরো পেয়েছে । আমি মাথা নিচু করে কানাভুতের সাথে কথা বলছিলাম । কানাভুত তুমি আমাকে বাঁচাও ।

হঠাৎ বাবা হুংকার দিলেন, কি রে, সমরেশ স্যার এটা কি বলছেন? মাথা নিচু কেন? আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল, অংকে নাকি ডাবল জিরো পেয়েছিস? আমি ধীরে ধীরে মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ, হঠাৎ সমরেশ স্যার এর কথাবার্তা কেমন যেন বদলে গেল । সমরেশ বাবু বললেন, আহা থাক্ না, এত ধমকা-ধমকির কি আছে, এবার ভালো নাম্বার পায়নি পরের বার পাবে । টমাস আলভা এডিসন বলেছেন, শুধু কয়েকটা পরীক্ষার খাতা কারও ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে না । তাছাড়া আইনস্টাইন, নিউটন, সবাই অংকে ফেল করেছিল । বাস্তব জীবনে তারা ভালো ছাত্র ছিল না ।

জালাল মামা এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন এবার তিনি বললেন, তার মানে বলতে চাচ্ছেন ও বড় হলে নিউটন, আইনস্টাইন হবে? সমরেশ বাবু পরিস্থিতি সামলে উত্তর দিলেন, না ঠিক তা না, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি ওকে অংকটা পড়াতে চাই । অংকে কিভাবে ভালো রেজাল্ট করতে হয় তা আমি জানি । সমরেশ বাবু একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন, যার অর্থ হাড্ডি আর মাংস আলাদা, হাড্ডি গার্জিয়ানের আর মাংস আমার । আমি বুঝতে পারলাম কপালে শনি লেগেছে । সমরেশ স্যার অনেক স্টুডেন্টকে মেরে অজ্ঞান করার রেকর্ড আছে তার ।

ছাত্রছাত্রীদের মেরে উনি একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পান । তবে সব স্যার এক রকম না, এক্ষেত্রে ফয়সাল স্যার অনেক সহজ সরল আর ছাত্রছাত্রীদের অনেক যত্ন করে পড়ান । উনার কথা হচ্ছে স্টুডেন্টদের মারধর করা হচ্ছে মধ্যযুগের বর্বর কায়দা । এটা আধুনিক যুগ, এ যুগের ছাত্রছাত্রীরা শিখবে খেলার ছলে । যাই হোক সমরেশ স্যার চলে গেছেন, কাল থেকে উনি পড়াবেন ।

মনে হচ্ছে উনি স্কুল ছুটির পরপরই চলে আসবেন মানে বিকালে ঘুরতে যাওয়া বা খেলাধুলা বন্ধ । শুনে খুবই মন খারাপ হল । রাতের খাবার খাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়? এমন সময় কানাভুত বলল, কি রে, কি ভাবছিস? কাল থেকে খেলা বন্ধ এটা নিয়ে চিন্তা করছিস, তাই না? -হ্যাঁ, তাই নিয়ে ভাবছি । -ভাবার কিছু নাই, আমি সমরেশ স্যার কে এমন ভয় দেখাব যে ভয়ে প্যান্টে হিসু করে দিবে । উনার ব্যবস্থা আমি করছি বলে কানাভুত কোথায় যেন চলে গেল ।

কানাভুত.. ও.. কানাভুত.., বার কয়েক ডেকেও কোনও সাড়া পেলাম না । পরদিন স্কুলে আর সমরেশ স্যার কে দেখা গেল না । বিকালে খবর এল স্যার এর জ্বর হয়েছে । তাই উনি আসতে পারবেন না । মনে হচ্ছে কানাভুত কিছু একটা করেছে, হয়তো ভয় দেখিয়েছে ।

পরীক্ষায় পাশ করার জন্য একবার তাবিজ এনে দিল কানাভুত । এরপর থেকে সব বিষয়ে ভাল রেজাল্ট হতে থাকল । রোল নং ৬০ থেকে সোজা ৭ হয়ে গেল । বাড়ির সবাই হতবাক । কিভাবে এত ভাল রেজাল্ট হল ।

জালাল মামা একদিন জিজ্ঞেস করলেন, কিরে স্যার ছাড়া এত ভালো রেজাল্ট করলি কিভাবে? আমি উত্তর দিলাম, এমনি । মামা বললেন, এমনি না, নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে । আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম, কানাভুত একটা তাবিজ এনে দিয়েছে । এটা শুনে জালাল মামা খুবই বিরক্ত হলেন, কারণ উনি একজন বিজ্ঞানী মানুষ । উনার নিজস্ব ল্যাব আছে ।

ভুত বিষয়ে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নাই তাই উনি ভুত বিশ্বাস করেন না । উনি বললেন, তোর মানুষিক সমস্যা হচ্ছে, এটাকে বলে হ্যালুসিনেশন, তুই অদ্ভুত কিছু দেখছিস বা শুনতে পাচ্ছিস, এটা তোর উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র । অথবা সিজোফ্রেনিয়া হতে পারে । আমি বললাম, না মামা,আমি সত্যি-ই ভুতের সাথে কথা বলেছি, ওর নাম কানাভুত, এক চোখ কানা তাই কানাভুত, যেমন কানা বগির ছা-এর একচোখ কানা ঠিক তেমন । ও অনেক ভালো ভুত, ওকে আমি পোষার জন্য এনেছি ।

মামা বিরক্ত হয়ে বলল, কি যাতা বকছিস, পোষার জন্য এনেছিস মানে? -মানে ভুত পোষা, বাসায় এনে কোন ভুতকে পুষে রাখা । যদি বুনো ভুত হয় তাহলে পোষ মানবে না আর যদি গৃহপালিত ভুত হয় তাহলে পোষা যাবে । এটা গৃহপালিত ভুত । -মামা অত্যন্ত তাচ্ছিল্যভরে উত্তর দিলেন, আরে বোকা ভুত বলতে কিছু নাই । এই গুলা ফালতু কথা ।

কোথায় তোর ভুত ওকে ডাক, দুচারটে কথা বলি । হা....হা.... এগুলি অবাস্তব বিষয় । আমি অনেক চেষ্টা করেও মামার সাথে সামনা সামনি পরিচয় করিয়ে দিতে পারিনি । কানাভুত মামার সাথে কথা বলতে রাজি না, কারণ যারা ভুত বিশ্বাস করে না তাদের সাথে কানাভুতের কথা বলতে ভালো লাগে না । মনটা অপমানে আর রাগে গজগজ করতে লাগল ।

কানাভুতের উপর ভীষণ রাগ হল । মামা আমার অবস্থা দেখে বললেন, ঠিক আছে তুই যদি এমন কোন অস্বাভাবিক কাজ করে দিতে পারিস তাহলে ভাববো কানাভুত সত্যিই আছে । আমি বললাম, কি কাজ করতে হবে, বল? -ধর আমি নদীতে যাব কালকে, আমার হাতের ঘড়িটা নদীতে ফেলে দেব, যদি কানাভুত সেটা পানির নীচ থেকে তুলে আনতে পারে, তাহলে আমি বিশ্বাস করব যে ভুত বলতে সত্যিই কিছু আছে । আমি বললাম ঠিক আছে । আগামীকাল তোমাকে আমি প্রমাণ দেব যে কানাভুত সত্যিই আছে ।

রাতে ফিসফিসিয়ে কথা বলতে গিয়ে ব্যাপারটা মা’র কাছে ধরা খেয়ে গেলাম । আমি ভুতের সাথে কথা বলি, বাবা জালাল মামাকে বললেন, ওর কি কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি? জালাল মামা উত্তর দিলেন, আমি সব দেখছি, মনে হচ্ছে ওর সিজোফ্রেনিয়া হয়েছে তবে ঘাবড়ানোর কিছু নাই । আমার কাছে এর ঔষধ আছে, তাছাড়া আমার এক বন্ধুর বাবা মানসিক রোগের ডাক্তার । ৬. পরদিন বিকালে নদীতে মামা ও আমি আর কানাভুত । কানাভুত অদৃশ্য বলে তাকে দেখা যাচ্ছে না ।

ভুতেরা বায়বীয় পদার্থের তৈরি, হ্যালোজেন জাতীয় গ্যাস তাই ভেসে থাকতে পারে । অনেকটা টিউব লাইটের ভিতরের গ্যাসের মত আয়নাইজড হলে উজ্জ্বল সাদা দেখায় তবে ভুতের ক্ষেত্রে নীলাভ সাদা দেখায় । চাঁদনি রাতে খুব খেয়াল করলে ভুতদের অবয়ব দেখা যায় কারণ তখন তারা চাঁদের আলো খেয়ে আয়নাইজড থাকে । অবশ্য এ সব ধারনা সম্পূর্ণ আমার নিজের থেকে । ভুত নিয়ে ছোট থেকে অনেক গবেষণা করতে করতে আমি এ ধারনায় উপনীত হয়েছি যে ভুত আছে, হতে পারে তারা এলিয়েন অথবা প্রেতাত্মা ।

যাই হোক, কানাভুতের কথা আমি শুনতে পাচ্ছি কিন্তু জালাল মামা শুনতে পাচ্ছেন না, কে জানে হয়তো না শোনার ভান করে আছেন । অনেকটা আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের মত, যখন কোন সাধারণ মানুষের সমস্যা হয় তখন তারা কানে শোনে না । হয়ত জালাল মামা বিজ্ঞানী মানুষ তাই শুধু কানে শুনে বা চোখে দেখে উনি ভুত বিশ্বাস করছেন না । উনি ওনার হাতের ঘড়ি টা পানিতে ছুড়ে ফেলে দিলেন, ঝপাং করে একটা শব্দ হল, তারপর ঘড়িটা পানিতে তলিয়ে গেল । আমার দিকে মৃদু হাসি দিয়ে বললেন, হে...হে.....এই বার আমার হাত ঘড়িটা ফেরত আনতে বল তোর কানাভুতকে, দেখি বেটা পারে কিনা ।

কিছুক্ষণ পর আমি আমার প্যান্টের ভিতর থেকে একটা ঘড়ি বের করে মামার হাতে দিলাম, এই যে তোমার ঘড়ি । মামা আমার হাতে তার ঘড়ি দেখে খুবই অবাক । তার মুখ শুকিয়ে গেল । তিনি ঘড়িটা নিয়ে সোজা বাসায় চলে এলেন, কোন কথা বললেন না । মনে হচ্ছে তার এখন বিশ্বাস হয়েছে ।

কিন্তু উনি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না । এরপর ঐ দিন রাতেই উনার শরীরে জ্বর এলো । উনি অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে গেলেন । আমাকে ডেকে পাঠালেন তার রুমে । আমি উনার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম ।

মামা জিজ্ঞেস করলেন, তোর কি ধারনা ভুত সত্যিই আছে? আমি উত্তর দিলাম, জ্বি, অবশ্যই । ভুত আছে । অবশ্যই আছে । উনার শরীর ক্রমশ খারাপ হতে থাকল । ভাবলাম উনাকে সত্যি কথা টা বলি ।

নইলে উনি ধীরে ধীরে মারাও যেতে পারেন । তাই ৩/৪ দিন পর ওনার রুমে ডুকে বললাম, মামা, আমি তোমার সাথে মিথ্যা বলেছি । তোমার হাত ঘড়ি পানি থেকে তুলে আনা হয়নি । এটা বাবার ঘড়ি । জালাল মামা ও বাবা একই রকম ঘড়ি পড়তেন, মা কিনে দিয়েছিল ।

শুনে জালাল মামা পরক্ষণেই অনেক উজ্জীবিত হয়ে উঠলেন, হ্যাঁ তাই তো, এখন মনে পড়েছে, তুই যখন ঘড়িটা দিয়েছিলি তখন ওটা শুকনো ছিল । যদি পানির নীচে থেকে তুলে আনে তাহলে তো ওটা ভেজা থাকার কথা । আমি বললাম, কিন্তু মামা কানাভুত সত্যিই আছে, ও বলেছে ও তোমার সাথে কথা বলবে । তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনলে তার কথা শুনতে পাবে । কানাভুতের সাথে মামার পরিচয় করিয়ে দিলাম ।

উনি এখন কানাভুতের ভক্ত । তবে উনার ধারনা উনি আমার মত মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাই ভুতের সাথে কথা বলছেন । কানাভুত ওনাকেও একটা তাবিজ এনে দিয়েছে যাতে উনি বি,সি,এস ক্যাডার হতে পারেন । ১ বছর পর উনি বি,সি,এস ক্যাডার হয়ে ট্রেনিং শেষে আমাদের সাথে ও কানাভুতের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন । ওনার কথা হল, যদি কারো কোন সমস্যা না হয় তাহলে ভুত বিশ্বাসটা বিশেষত খারাপ না ।

ভুতের উপর বিশ্বাস যদি কারো পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করে তোলে তাহলে সেই ভুতের সাথে কথাও বলা যেতে পারে । আমি ক্লাস সিক্সে উঠেছি আমার রোল নং এখন ১ ; পড়ালেখায় ব্যস্ত আমি এখন আর ভুতের সাথে কথা বলার সময় পাই না । কানাভুতের দায়িত্ব শেষ, তাই হয়ত সে চলে গেছে অচেনা কোন দেশে । হয়ত ছোট বেলার সেই ভুত আর ফিরে আসবে না কিন্তু ভুতের বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাঝে যে দূরত্ব তা আরও কমিয়ে দিয়ে গেছে, যা আজও বর্তমান । http://www.bhooterblog.com থেকে সংগৃহিত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।