আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শমী স্মরণে

আমরা শুধু আপন মানুষ খুঁজি, আপন মানুষদের খুঁজতে হয় না, তারা পাশেই থাকে !! লেখিকা: সুস্মিতা রানি সাহা প্রথম ব্যাচ কৃষি অনুষদ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পটাপট ক্যামেরার ফ্লাশ পরছে কোন স্মৃতির অংশ, একটি মূহুর্তও যেন বাদ না পরে, যে যেভাবে পোজ দিচ্ছে সেভাবেই উঠছে সব ছবি। কারণ, সৃষ্টির প্রতিটি মূহুর্তেই রয়েছে অমর হবার সম্ভাবনা। “আরে! ও সবার ছবি তুলছে, ওর ছবিটা কে তুলবে? ওর ছবিটা কেউ তুলে দাও”-বলে উঠল আমাদের মধ্যে একজন। শুনে হাসল শমী। হাজার হোক ও তো আর পেশাদার সাংবাদিক নয়, শখের বসে নতুন ক্যাম্পাস সাংবাদিক, আমাদেরই ছোট ভাই।

কাজেই স্মৃতির অংশ হিসেবে ওর ছবিওতো আমাদের সাথে থাকা চাই। এইতো কয়েক দিন আগে ওর লেখা প্রথম রিপোর্টটি ছাপা হল দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায়। এ নিয়ে তার উচ্ছাসের কমতি ছিলনা। সেদিন বিকালে বিরিয়ানি পার্টি হওয়ার কথা। চোখে মুখে নতুন স্বপ্ন আবার একটি রিপোর্ট করবে সে।

সুযোগ তৈরী হল ১২জুলাই কৃষি অনুষদ প্রথম ব্যাচের সমাপণী উপলক্ষ্যে র‌্যাগ উৎসবের আনন্দ শোভাযাত্রায়। “আমাদের আজকের দিনের সব স্মৃতি তোমার হাতে তোলে দিলাম, এই স্মৃতি ধরে রাখার দায়িত্ব তোমার” বলেছিলাম আমরা। শমী তার দায়িত্ব পালনে কার্পন্য করেনি এতটুকু সকলের স্মৃতি ধরতে গিয়ে সে নিজেই সকলের স্মৃতি হয়ে গেল। বিধাতা নাকি ভাল মানুষদের পৃথিবীতে পাঠাতে চাননা। তারা জোড় করে অল্প সময় নিয়ে চলে আসে।

বিধাতা আরও স্মরণ করিয়ে দিলেন এভাবেই সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। জীবিত অবস্থায় শেষবার দেখলাম পুকুর পাড়ের সিড়িতে বসে সবার গোসল করা দেখছে। চলে আসার সময় ওর মুখটার দিকে তাকিয়েই চলে এসেছিলাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল শমীকে কিছু একটা বলব। কি যেন আসলে বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বলা হয় নাই।

চোখ টিপ টিপ করা চেহারাটার এটাই শেষ দেখা। মানুষের মৃত্যুটা এমনিই হয়ত, কাউকে আগাম কোন খবর দেয় না, শেষ কথাটা বলারও সুযোগ দেয় না। অথচ ঐ মানুষটিকে ঘিরে কত স্বপ্ন থাকে, কতো না বলা কথা তাকে। মৃত্যু শুধু আফসোস রেখে যায়। শমীর মৃত্যুর খবর শুনে আমার প্রথম একদমই বিশ্বাস হয়নি।

ভাবলাম হাবাবোবা ছেলেটাকে নিয়ে সবাই বুঝি তামশা করছে। কিন্তু বিধাতার লীলা বোঝা বড় দায়। নিজ চোখে দেখার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দৌড়ে গেলাম। হাসপাতালের মর্গের ড্রয়ারে রাখা শমীর টাটকা লাশ। আমার জীবনে দেখা প্রথম লাশ।

কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ছেলেটা। শান্ত, স্মিতহাস্য মুখ। এটা কি করে সম্ভব ! মাত্র এক ঘন্টার ব্যাবধানে একটি জীবন বাক্সে বন্দী কোন রকম প্রতিবাদ ছাড়া। আমি বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করতে চাইও না। সাঁতার না জানা আমার কাছে এখন অপরাধের মতো লাগছে।

আমার কাছে পানির অপর নাম এখন থেকে মরন। আমাদের ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমেছে। শমী আমাদের হাসি দেখে গেছে, চেখের জল দেখেনি। শমী আমাদের খুশি দেখে গেছে, তাকে হারিয়ে আমরা কতটুকু শোকে মূহ্যমান তা দেখেনি। সারা জীবন ঐ হাসি মুখের শমী বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে, আমাদের অন্তরে।

 ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।