আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাকপাখীর গল্প :বাসর রাতে যদি কাকপাখী বলে “আমার ভয় করছে আম্মুকে নিয়ে আসি”

ভাবনার জালে বন্ধী,তুমি-আমি আমি শালা ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ইজি বাইক খুঁজতে বিজি, আর তিনি এসির হাওয়া খাচ্ছেন। তিনি বলা ঠিক না। কাকপাখীটাকে আমি বরাবরই খুউব ভালোবাসি। তবে এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ইজি বাইকে খুঁজতে একদম ভাল্লাগছে না। এদিকে কাকপাখীটার নাকি আবার অসুখ করেছে।

কিসের যে এত অসুখ করে খোদায় জানে। যদি যুক্তির হিসাব করি তবে কাকের কাজ হলো সকালে বেলা উঠেই ডাকাডাকি, নগরীর ডাষ্টবিন পরিস্কারের দায়িত্বও তার উপরে অর্পিত। কিন্তু সে কাজ করছে একটা এসি অফিসে। স্বাভাবিকভাবেই অসুখতো হবেই। কথায় আছে না কুকুরের…….না থাক।

কাকপাখীটা শুনলে আমার বেহাল দশা করে দিবে। এই শালার এই বাহনের নাম ইজি বাইক কে দিছে? যে শালায় দিছে তারে থাবড়ানো দরকার। ইজি বাইক পাওয়া এত কঠিন আগে বুঝিনি। তখনই কাকপাখীর ফোন “ওই আমার ইজি বাইক পাইছো? -ইজি বাইক আজকে গাছে ধরেনি, হকাররাও বেচতেছে না। কি করি? -কি কইলা তুমি, আমার সাথে ফাইজলামি কর? -না কাক পাখী তোমার সাথে ফাইজলামি করবো কেন? -আমারে কাক ডাকবা না।

নোংরা একটা প্রাণী। সারাদিন ডাষ্টবিনে পইড়া থাকে আর কাকা করে। নিশিরে ক্যামনে বলি তার কন্ঠস্বর কাকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সকাল বেলা যখন নিশি ফোন করে ঘুমের ঘোরে ফোন রিসিভ করলেই মনে হয় বারান্দার পাশের গাছের কাকটা কা কা করে ডাকছে। যার অর্থ হলো “এতক্ষন ঘুমাচ্ছো কেন? ইজি বাইক আনতে হবে।

এইরে ইজিবাইকের কথাতো ভুলেই গিয়েছিলাম। -আচ্ছা কাক সোনা,কোকিল সোনা শোন সোনা আমি ইজি বাইক সোনা খুজি, তুমি ততক্ষন অপেক্ষা কর সোনা। -এভাবে সোনা সোনা বলবে না তুমি ইজি বাইকরেও পিছনেও সোনা লাগিয়েছ। যাও খুজ। আমার জন্য একটা সুন্দর সুইট দেখে ইজি বাইক নিয়ে আসবা কিন্তু।

-অবশ্যই আনবো। সামনের দিকটা গোলাপি কালারের দেখে আনবো। ড্রাইভারকেও হ্যান্ডসাম হইতে হবে। খট করে কেটে গেল ফোন। ইয়াহু একটা ইজি বাইক পেয়ে গেছি।

“মামা যাইবেন? মিরপুর দশ -হ যামু ৩০০ ট্যাকা দিবেন -মামা আপনাকে মিরপুরের কথা কইছি শেরপুর না। -আমি শেরপুরের কথা শুনি নাই মিরপুর ৫ মিনিট প্যাচাল পেড়ে শেষে ২০ টাকা কমিয়েছি। তাতে কি কাক পাখীর জন্যতো আরও কত টাকা খসিয়েছি তাতে কি আসে যায়। এই বৃষ্টির ঘনঘটায় ইজি বাইকে যদি একটা চুমু খাওয়া যায়,তাহলে সব টাকা উসুল হয়ে যাবে। নিশি আমার চুমু খাওয়ার গোপন ইচ্ছাটা কেমন করে জানি বুঝে যায়।

ভেবেছিলাম এই ঝড়বাদলের দিনে সবুজ সিএনজির দরজায় কালো পর্দা লাগিয়ে চুমু খেতে খেতে ফার্মগেইট থেকে মিরপুর যাবো। কিন্তু সে খুজে ইজি বাইক। যার চারপাশ হাহাকারের মত খোলা। কাক পাখীটাকে দারুন দেখাচ্ছে। কালো একটি জামাতে পরিপূর্ণ কাক মনে হচ্ছে।

জোরে বললাম “এই বৃষ্টিতে ভিজো না, অসুখ করবে” -তুমি না আমার এত কেয়ার কর,ভাবতেই অনেক ভালো লাগে। মনে মনে বললাম আরে ভিজো তোমার নামেতো একটা বাগধারাও আছে “কাক ভেজা”। তুমি ভিজো তাতে আপত্তি নাই কিন্তু একটা চুমু যদি দিতে। মনে মনেই বলে ক্ষান্ত থাকি। মুখে ফুটে বলতে পারি না।

-এ্যাই চলনা দুজন বৃষ্টিতে ভিজি -তুমি পাগল বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় গেলে আস্ত রাখবে না। কাকের এই কথা শুনে আর সামনে আগাতে পারিনা। শালার এক পিচ্চি কপাল নিয়ে জন্মাইছি। চুমু খাইতে চাইলে চোখ রাঙ্গানী, ভিজতে চাইলে বাসায় মারবে। বাসর রাতে যদি কাকপাখী বলে “আমার ভয় করছে আম্মুকে নিয়ে আসি”।

ভাবতেই বৃষ্টির পানির উপর ঘামের পানি কিভাবে যেন বের হয়ে গেল। -আচ্ছা বিয়ের পর কিন্তু একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো। -অবশ্যই ভিজবো, বৃষ্টি না থাকলে বাথরুমের শাওয়ারে ভিজবো -ঢাকা শহরের বেশীরভাগ বাড়ীতে ঠিকমত পানি থাকে না। টয়লেটের পানিও ঠিকমত থাকে না। -তুমি না একদম রোমান্টিক না।

বুঝতে পারছো একই বাথরুমে তুমি আমি শাওয়ারের নিচে টপটপ পানিতে ভিজে এককার। রাগ চেপে গেল। শালার কাক কয় কিরে?এত জায়গা থেকে ভিজবে বাথরুমে। আমার বাথরুমে এমনিতেই ছিটকিনি নাই। গোসল করার সময় গান গাইতে হয়।

তার জন্য কি আমি একটা বাথরুম বানাবো নাকি? শাহাজাহান মমতাজের জন্য তাজমহল বানিয়েছেন, আমি বানাবো বাথরুম। ছি। তবুও রাগ চেপে বললাম “দারুন মজা হবে,মাঝে মাঝে শাওয়ারের হুইল ঘুরিয়ে বৃষ্টির ধারা বাড়িয়ে কমিয়ে দিবো। সাথে রবীন্দ্র সংগীত চলবে “আজি ঝরো ঝরো মুখরও শাওয়ারওরেও জলে…জানিনা জানিনা কখনযে পানি যায় চলে” রাগে কটমট করে নিশি মানে আমার প্রিয় কালো কাক পাখী আমার দিকে তাকিয়ে একটা ক্ষেপাটে লুক দিলো। চুমু খাওয়ার শেষ আশাটুকুও ভেস্তে গেল।

একসাথে ভেজাতো দূরে থাক,এখন রোদ উঠলে এক রোদে দাড়াবেও না। -তুমি কি আমারে ফাইজলামি করার জন্য ঠিক কইরা নিছো -ওমা সোনা একি শব্দ ইউজ করছো, তুমি না সোনা কত মিষ্টি করে কথা বলতে। প্লিজ সোনা….. বলে কাকের মুখে যেই না হাত দিয়ে ওমনিই ঠাস করে ওর একটা হাত আমার ডান গাল ছুঁয়ে দিলো। বুঝলাম না ঠাস করে শব্দটা কেন হলো। হাত দিলেই কি ঠাস হতে হবে।

ইজি বাইক ড্রাইভারের দিকে তাকালাম। ব্যাটা একটা বিশ্রী হাসি দিলো। এটাই ভুল। জগত সবকিছুতেই ভুল বুঝে। ওতো এমনেই হাত দিয়েছে কেবল কই থেকে জানি “ঠাস” শব্দটা উৎপাদন হয়েছে।

-এ্যাই মামা থামান। আমি নামবো। -কিন্তু মিরপুরতো এখনও আসেনি। তোমার বাসাতো মিরপুর। -তোর সাথে আমি মিরপুর যামু না।

এখানে আমার বন্ধু নিলয় থাকে তার সাথে যামু। তুই বৃষ্টিতে ভিজে মর। কিছুই বলার পেলাম না। ড্রাইভার মামার হাসিটা আরও প্রসারিত হল। শালার হাতি গর্তে পড়লে চামচিকাও হাসে আর গল্পকার চড় খাইলে ইজি বাইক ড্রাইভারও হাসে।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।