আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৬৬

রবীন্দ্রনাথের গানের লিরিক ও সুরের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে মানুষের মৌলিক অনুভূতির যোগসূত্র। ঠিক মত প্রচার প্রসার হলে রবীন্দ্রনাথের গান গুলো হতে পারে পৃথিবীর সঙ্গীত। রবীন্দ্রনাথের লেখা নিয়ে বলার মত জ্ঞান গভীরতা ব্যাক্তিগত ভাবে আমার নাই। তবে খোলা চোখে তার লেখার মধ্যে সুদূর ভবিষ্যত নিয়ে ইংঙ্গিত গুলো চোখে পড়ার মত। যেমন...""আজি হতে শতবর্ষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/ কৌতূহলভরে--আজি হতে শতবর্ষ পরে "।

যদিও রবীন্দ্রনাথের সময়ে কল্পবিজ্ঞান লেখার চর্চা তেমন হত না। হলে হয়ত রবীন্দ্রনাথের কোন সাইয়েন্স ফিকশন পেয়ে যেতাম। তার পরেও তার কবিতার দর্শন আর বর্তমানে প্রচলিত কল্পবিজ্ঞানের দর্শনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নাই। সুনীল চন্দ্র সরকারকে একটি চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথের লেখা কিছু অদ্ভুত তথ্য আছে..."....আমাদের বাইরে বিশ্বপ্রকৃতির একটি চিরন্তনী ধারা আছে, সে আপন সূর্য-চন্দ্র আলো-আধাঁর নিয়ে সর্বজনের সর্বকালের। জ্যোতিষ্ক-লোকের ছায়া দোলে তার ঝর্ণার ছন্দে।

জীবনে কোন বিপুল প্রেমের আনন্দে এমন একটা পরম মুহূর্তে আসতে পারে যখন আমার চৈত্যন্যের নিবিড়তা আপনাকে অসীমের মধ্যে উপলব্ধি করে-তখন বিশ্বের নিত্য উৎসবের সঙ্গে মানবচিত্তের উৎসব মিলিত হয়ে যায়, তখন বিশ্বের বানী তারই বানী হয়ে উঠে......। ব্যক্তিজীবনে রবীন্দ্রনাথের ভাল মন্দ দিক তার সাহিত্যপ্রতিভার ব্যাপারে অপ্রাসঙ্গিক তাই ব্যক্তিজীবনে রবীন্দ্রনাথের মন্দ দিক নিয়ে কেউ লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে সে সাহত্যিক রবীন্দ্রনাথকে ছোট করছে বলে দাবী করলে সেটা অযৌক্তিক হবে। কর্ম বা আচরণের ন্যায় অন্যায় বা দোষগুণ বিচারের জন্য আইনগত বা ঘোষিত কোন সার্বজনীন মানদণ্ড নেই সেই ব্যাপারে যে কোন ব্যক্তিগত মত বা অনুভূতি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ তো একজন শিল্পী মাত্র। এবং একজন উদার ও সার্বজনীন শিল্পী।

তাঁর ভক্তরা যদি তাঁকে ত্রুটিমুক্ত কোন মহামানব মনেও করে তাতেও খুব বিরাট কোন ক্ষতি বা ঝুঁকি নেই সাধারণ মানুষের। ঠাকুরবাড়ির সব ছেলেকেই ছোট বেলায় পালোয়ানের কাছে কুস্তি শিখতে হতো৷ এতে গায়ে বেশ মাটি মাখামাখি হতো৷ রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘‘সকাল বেলায় রোজ এত করে মাটি ঘেঁটে আসা ভালো লাগত না মায়ের, তাঁর ভয় হত ছেলের গায়ের রঙ মেটে হয়ে যায় পাছে৷ তার ফল হয়েছিল, ছুটির দিনে তিনি লেগে যেতেন শোধন করতে৷ শোধনক্রিয়ার সামগ্রী হিসেবে থাকতো ‘বাদাম-বাটা, সর, কমলালেবুর খোসা, আরো কতো কী...৷'' "আমার মন মানে না – দিন রজনী। আমি কী কথা স্মরিয়া এ তনু ভরিয়া পুলক রাখিতে নারি। ওগো কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি – ওগো সজনি। ।

" কেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের মা? কিন্তু স্বর্ণপ্রসবিনী সারদা দেবীর বিখ্যাত পুত্রদের রচনাতে তাঁর সম্পর্কে কোন কথা বা বিবরণ নেই বললেই চলে৷ রবীন্দ্রনাথের লেখাতে মায়ের কথা কতটুকু পাওয়া যায়?মাত্র ছ'বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়৷ সর্বশেষ সন্তান রবীন্দ্রনাথের জন্মের সময় তাঁর বয়স ৩৪-এর মত৷ রবীন্দ্রনাথ কী ইতিহাসে উপেক্ষিতা সেই মায়ের কথা মনে রেখেছিলেন?রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি'-তে তাঁর শিশুজীবনের এক পর্বকে ‘ভৃত্যরাজক তন্ত্র' আখ্যা দিয়েছেন৷ সারাদিন ভৃত্যরাজক তন্ত্রের মধ্যে থাকলেও এক পর্যায়ে রাত্রে শোবার সময়ে মায়ের ঘরে তাঁর আশ্রয় মিলতো৷ বিভিন্ন স্মৃতিকথার সূত্রে জানা যায়, মায়ের ঘরে রবীন্দ্রনাথ স্বতন্ত্র শয্যায় শুতেন৷ মা কোনও দিন গল্প শুনিয়ে বা ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে তাঁকে ঘুম পাড়াতেন কি না এমন তথ্য কোথাও পাওয়া যায় না৷ মাতৃস্নেহ না পেলেও মায়ের স্বাভাবিক সস্নেহ প্রশ্রয় থেকে রবীন্দ্রনাথ বঞ্চিত হননি৷ যাত্রাপালা দেখার ইচ্ছে নিয়ে অসময়ে ঘুমিয়ে পড়া রবীন্দ্রনাথকে ঠিক সময়ে জাগিয়ে দিয়েছেন সারদা দেবী৷ মাস্টার এসেছেন পড়াতে, রবীন্দ্রনাথ পড়া ফাঁকি দিতে চান৷ বানিয়ে মাকে বলতেন পেট কামড়ানির কথা৷ তারপর, রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘‘শুনে মা মনে মনে হাসতেন, একটুও ভাবনা করতেন বলে মনে হয়নি৷ তবু চাকরকে ডেকে বলে দিতেন, ‘আচ্ছা যা মাষ্টারকে জানিয়ে দে, আজ আর পড়াতে হবে না৷''রবীন্দ্রনাথের মা রবীন্দ্রনাথের রচনার মধ্যে না থাকলেও খানিকটা ছিলেন তাঁর স্মৃতির মধ্যে৷ ‘জীবনস্মৃতি'তে লিখেছেন, ‘‘মনে পড়ে বাড়ি-ভিতরের পাঁচিল-ঘেরা ছাদ৷ মা বসেছেন সন্ধেবেলায় মাদুর পেতে, তাঁর সঙ্গিনীরা চারদিকে ঘিরে গল্প করছে৷....এই সভায় আমি মাঝে মাঝে টাটকা পুঁথিপড়া বিদ্যের আমদানি করেছি....ঋজুপাঠ দ্বিতীয়ভাগ থেকে স্বয়ং বাল্মিকী রামায়ণের টুকরো আউড়ে দিয়েছি অনুস্বার-বিসর্গ-সুদ্ধ৷ মা জানতেন না তাঁর ছেলের উচ্চারণ কত খাঁটি, তবু তার বিদ্যের পাল্লা....তাঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে৷'' ১৯০৮ সালে শান্তিনিকেতন মন্দিরে প্রদত্ত এক উপদেশে৷ রবীন্দ্রনাথ সেখানে তাঁর দেখা এক স্বপ্নের উল্লেখ করেছেন, ‘‘...আমার একটি স্বপ্নের কথা বলি৷ আমি নিতান্ত বালককালে মাতৃহীন৷ আমার বড়ো বয়সের জীবনে মার অধিষ্ঠান ছিল না৷ কাল রাত্রে স্বপ্ন দেখলুম, আমি যেন বাল্যকালেই রয়ে গেছি৷ গঙ্গার ধারের বাগান বাড়িতে মা একটি ঘরে বসে রয়েছেন৷ মা আছেন তো আছেন৷ তাঁর আর্বিভাব তো সকল সময়ে চেতনাকে অধিকার করে থাকে না৷ আমিও মাতার প্রতি মন না দিয়ে তাঁর ঘরের পাশ দিয়ে চলে গেলুম৷ বারান্দায় গিয়ে এক মুহূর্তে আমার কী হল জানি নে৷ আমার মনে এই কথাটা জেগে উঠল যে, মা আছেন৷ তখনই তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁর পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলুম৷ তিনি আমার হাত ধরে আমাকে বললেন, ‘তুমি এসেছ!' এইখানে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল৷ ''। ( চলবে....) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।