আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন আমি আস্তিক? কেন আমি পরকাল বিশ্বাসী? (প্রথম পর্ব)

আমার শোবার ঘরে প্রথম ভোরে আকাশ ঢোকে বাতাস ঘোরে, ছাদভাঙা তাই একটি নাটাই, আর একটি ঘুড়ি... আমার ভাঙা মেঝেয় শুয়েই আমি ঘুড়ির সাথে উড়ি আমি কোন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে যাবো না। আমি নিজের ধর্মবিশ্বাস নিয়েও কিছু বলবো না। এই লেখাটিতে আমি শুধু আলোচনা করতে যাচ্ছি আমি ঈশ্বরে কেন বিশ্বাস করি আর কেনই বা বিশ্বাস করি পরকাল বলতে অবশ্যই কিছু আছে। এই বিশ্বাস একান্তই আমার। যুক্তিতর্ক উৎসাহিত করলেও তালগাছবাদ নিরুৎসাহিত করছি।

এটা স্রেফ আমার বিশ্বাস থেকে লেখা, একান্তই নিজের বিশ্বাস। স্টিফেন হকিং এর কোন একটা বইয়ে পড়েছিলাম, “দার্শনিকদের কর্মক্ষেত্র বলতে বর্তমানে অবশিষ্ট আছে সমাজ এবং সঙ্গীতশাস্ত্র। এরিস্টটলের উত্তরসূরীদের কি নিদারুণ অধঃপতন!” হ্যাঁ, তিনি নাস্তিক। আপাত যুক্তিবাদী সমালোচনায় তাঁকে আমার বেশ গঠনমূলক মনে হয়। আমার এই লেখায় যেমন বিজ্ঞান আসবে তেমনি দর্শনও আসবে।

বিজ্ঞানের ছাত্র বলে আমি কখনও দর্শনকে উড়িয়ে দেইনি। আর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত বিজ্ঞানে আমার কোন অবিশ্বাস নেই। বিজ্ঞান/দর্শন/ইথিকস/অর্থনীতি আমার দৃষ্টিতে একে অন্যের পরিপূরক। তো স্রেফ বিজ্ঞানে অপ্রমাণিত বিধায় কোন কিছু অগ্রহনযোগ্য এই নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। একটা উদাহরণ দেই বোঝার সুবিধার্থে- বিজ্ঞানের একটি শাখা গবেষনা।

বিজ্ঞান চাইলেই কিন্তু যেকোন কিছু নিয়ে গবেষনা করতে পারে না। যেমন আপনাদের জানা কথা নিউরোসায়েন্স বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা অপেক্ষা অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এর কারন হিসেবে বলা হয় জীবন্ত মস্তিস্কের উপর গবেষনায় বিজ্ঞানের বাধ্যবাধকতা। জীবন্ত কোষে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার বিদ্যুৎ প্রবাহ কোষের ক্ষতি করতে পারে। এই ইথিকসের কারনে বিজ্ঞান এখানে অনেকটাই অসহায়।

আবার কিছুক্ষেত্রে বিজ্ঞান গবেষনা যেখানে আটকে যায় তা হল অর্থসংস্থান। এখানে অর্থনীতির কাছে অসহায় বিজ্ঞান। বিজ্ঞান চাইলেই একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাহলে ঈশ্বরের অস্তিত্বের মত বিষয়ে কিভাবে বিজ্ঞান অন্য সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে একক সিদ্ধান্ত নিতে যায়, প্রশ্ন রইলো। দর্শনসহ জ্ঞানের প্রধানকিছু শাখাকে অভিযুক্ত করা হয় সঙ্কীর্ণতার অভিযোগে।

বিজ্ঞানী নিউটন প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকায় ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত সূত্রের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। এখন আমি যদি বলি এই সূত্রটির ধারণাকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে এপ্লাই না করে শুধুমাত্র পদার্থবিজ্ঞানে সীমাবদ্ধ রেখে বরং বিজ্ঞানই সঙ্কীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছে? প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কথাই ধরি- মানব জীবনই যদি শেষ কথা হবে তবে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ হত্যা সত্ত্বেও তিনি একদম স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবেন, এটা কেন হবে? সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি- হওয়া কি উচিত? আমরা কি ধরে নিতে পারি না তার জন্য হয়তো পরের কোন জীবনে এই জীবনের তার কর্মের প্রতিফল তিনি ভোগ করবেন? এ নিয়ে একটা ছোট মজার কথা বলি- পদার্থবিজ্ঞানে ইন্টারেস্টেড অনেকেই হয়তো জানেন ব্ল্যাকহোলে যখন কোনকিছু হারিয়ে যায় একটি তত্ত্বানুসারে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও ঠিক সে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। এখন ধরুন আপনি কোন ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি এলেন। এর ইভেন্ট হরিজোনে প্রবেশ করা মাত্রই আপনি চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে এর ভেতরে হারিয়ে যাবেন। আপনি যদি উল্লম্ব হয়ে নামেন কোন ব্ল্যাকহোলে সেক্ষেত্রে আপনার পা ইভেন্ট হরিজোনে আগে নামবে।

যা নুডলসের মত সরু হয়ে মিশে যাবে এর ঘটনাদিগন্তের ভেতরে। বিজ্ঞানীরা বলছেন আপনার হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই- কারণ আপনার ভর যদি হয় ষাট কেজি তাহলে ঠিক ষাট কেজি ভরের সমান শক্তি মহাবিশ্বের অন্য কোথাও নির্গত হবে। তবে দুঃখের বিষয় সেখানে আপনার ভরটি থাকলেও প্রাণ থাকবে। তাহলে আপনার ভরের একটি সংস্থান হলেও প্রাণের গন্তব্য কোথায় হবে? মৃত্যুই কি শেষ গন্তব্য? মৃত্যুর ঠিক আগ এবং পরমূহুর্তে একজন মানুষের দেহের ওজন নিন। একদম অপরিবর্তিত একটি দেহে ঠিক কিসের অভাবে প্রাণস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল? মস্তিস্ক এবং হৃৎপিন্ড তার কাজ বন্ধ করে দিল? তাহলে মৃত্যুর পরে এই সত্তার গন্তব্য কই? এক জীবনই কি শেষ? বায়োসেন্ট্রিজম তত্ত্ব কিন্তু এর বিরোধিতা করছে।

এবং এই তত্ত্ব অনুসারে এই জীবন এখানেই শেষ নয়। বিশ্ববিখ্যাত “সায়েন্স” জার্নালে প্রকাশিত এই তত্ত্বটির সারকথা পাবেন এখানে- Do You Only Live Once? Experiments Suggest Life Not One-Time Deal আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন। জিরো টু ইনফিনিটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত অনুবাদের একটি অংশ এখানে তুলে দিলাম। কিন্তু আমি সাজেস্ট করব ইংরেজিতে লেখা উপরের মূল প্রবন্ধটি পড়তে। ” এখন যদি প্রশ্ন করা হয় আমাদের মহাবিশ্বে যখন একটা বস্তুর জন্ম হচ্ছে তখন প্যারালাল মহাবিশ্বে সেই বস্তুটির কী ঘটছে।

ধরে নিলাম তার সেখানে তার প্রতি-বস্তুর জন্ম হচ্ছে। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু অন্যমাত্রার অন্য মহাবিশ্বগুলোতে কী ঘটছে? এখানেই কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলছে, যদি আমাদের চারমাত্রিক জগতের জন্ম বা মৃত্যুর কথা হিসাব করি তবে তবে অন্যমাত্রার অন্য মহাবিশ্বগুলোতে একই হিসাব খাটবে না। ধরা যাক, আমাদের মহাবিশ্ব (একই সাথে প্যারালাল মহবিশ্বে) কেউ মৃ্ত্যুবরণ করছে তাহলে আমাদের মহাগতের জন্য এই মৃত্যু নির্দিষ্ট ঘটনা। তাহলে অন্য আরেকটি মহাবিশ্বগুলোর জন্য এই মৃত্যু কোয়ান্টামের ভাষায় নির্দিষ্ট নয়।

তখন এরটা হিসেব করতে গেলে অসীম কোনো মানে চলে যাবে। তেমনি অন্য আরেকটি মহাবিশ্বে যদি ওই বস্তুটার মৃত্যুঘটে তবে আমাদের মহাবিশ্বের এই মৃত্যুর হিসাব আসবে অসীম। অর্থাৎ জীবিতও আসতে পারে। এই বিষয় নিয়েই তৈরি হয়েছে নতুন তত্ত্ব। এর নাম ‘বায়োসেন্ট্রিজম’ (biocentrism) তত্ত্ব।

সহজ হিসাব যেহেতু মহাবিশ্বের সংখ্যা অসীম সুতরাং জীবন-মৃত্যুর সংখ্যাও অসীম। কোথাও হয়ত সে মৃত। অন্য অসংখ্য মহাবিশ্বে তার জীবিত অবস্থা বিদ্যমান। ‘আমি কে?’—শুধু এই অনুভূতিই মস্তিষ্কে ২০-ওয়াট শক্তি সঞ্চালন করতে পারে। এই শক্তি কি মৃত্যুর সময় বিলুপ্ত হয়ে যায়? মোটেই নয়! নতুন এই তত্ত্ব বলছে, এই শক্তি এক মহবিশ্ব থেকে আরেক মহাবিশ্বে সঞ্চালন হয়।

আর এই তত্ত্বের সবচেয়ে বড় ভিত্তি শক্তির নিত্যতা সূত্র। এই সুত্র মতে সূত্রের অবিনশ্বর। তাহলে মস্তিষ্কের ওই শক্তি ঝর্না মৃত্যুর পরে কোথায় যায়?” লক্ষ্য করবেন আমি কখনোই বায়োসেন্ট্রিজম তত্ত্বকে পরকাল বলে চালিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছি না। অনেকগুলো সম্ভাবনার ভেতর একটি আমার পরকাল সংক্রান্ত চিন্তা। একটা প্রশ্ন আমি প্রায়ই নিজেকে করি- আমাদের ব্রেইন তিনটি মাত্রা সনাক্ত করতে সক্ষম, সময় সহ ধরলে চারটি।

বিগব্যাং থিওরিতে এর বাইরেও অন্তত আরও ছয়টি মাত্রা আছে বলে ধরা হয়। তাহলে আমাদের ব্রেইনের সীমাবদ্ধতার কারনে স্রষ্টাকেই অস্বীকার করে বসা কি নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা- ধরণের হয়ে যায় না? ঈশ্বরসংক্রান্ত আমার সব জিজ্ঞাসাই কেন জানি শেষ হয় এটি কি উচিত অথবা অনুচিত এই প্রশ্ন দিয়ে। সম্ভবত মাত্র চার মাত্রা সনাক্তে সক্ষম মানব মস্তিস্কের জন্য সত্যানুসন্ধানে এ প্রশ্নটিই সবচেয়ে বড় ভরসা। (চলবে) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।