আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর খবর কলকাতার পত্রিকায় ছাপা হওয়া না হওয়া ও আহমদ শরীফের জিগির তত্ত্ব

যে মুখ নিয়ত পালায়......। । হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর খবর কলকাতার বড় পত্রিকাগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে নি তাই অনেকে হা হুতাশ করছেন। আনন্দবাজার পত্রিকা বক্স করে ঢাকার নিজস্ব সংবাদ দাতার বরাতে প্রকাশ করাতেও অনেকে বেশ ক্ষুব্ধ। কিন্তু আসলেই কি এখানে ক্ষুব্ধ ব্যতীত বা আহত হবার মত কিছু আছে? হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একজন বড় লেখক ধরা যায়।

বাংলা সাহিত্য মানে শুধু বাংলাদেশের সাহিত্য না, দুই বাংলারই সাহিত্য। কিন্তু কলকাতাবাসী পত্রিকা গুলোর তাদের সংকীর্ণ মন মানসিকতার কারণে হুমায়ুনের মৃত্যুর খবর উপেক্ষা করে গেলে আসলে মন খারাপ বা ব্যতীত হওয়ার মত কিছু নেই বাংলাদেশীদের। একটি পরাধীন জাতির মন মানসিকতা ছোট হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। যেমন আজকের কালের কন্ঠে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন, “আসলে আমাদের (পশ্চিমবঙ্গের পাঠক) পাঠকরা অনেক বেশি মৌলবাদী। কারণ বাংলাদেশের লেখকদের লেখায়, \'পানি\', \'চাচা\', \'ইমাম\', \'খালু\', \'খালা\' কিংবা \'নামাজ\' এই সব শব্দ উল্লেখ থাকে।

সেই লেখা পড়লে আমাদের পাঠকরা ভাবেন সেটি তাঁদের মধ্যে প্রবেশ করবে। তাই সেই ভয়ে আমাদের পাঠকরাও বাংলাদেশের লেখকদের বই পড়তে চান না। কিন্তু আমি মনে করি, হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখকের কারণেই পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে। তাঁরা কিন্তু আমাদের লেখার মধ্যে \'নিমন্ত্রণ\', \'পুজো\', \'তুলসী তলা\', \'মন্দির\' শব্দগুলো পড়েও কোনো সংকীর্ণতায় ভোগেন না। তাঁরা আমাদের পাঠক থেকে বেশি উদার।

" [১] সম্রেশের স্বীকারোক্তি কলকাতার পাঠকরা মৌলবাদি অথবা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে আবদ্ধ। আর মূল কথা হচ্ছে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ পরাধীন ছিল। পাকিস্তানি উর্দু ভাষী শাসকদের অধীনে। তখন শাসকদের চাপিয়ে দেয়া উর্দু ভাষা সংস্কৃতির মধ্যে নিজেদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখতে আমাদের আঞ্চলিক জাতীয়তা খুঁজতে কলকাতার উপর নির্ভর করতে হয়েছে।

ডক্টর আহমদ শরীফ এটাক বলেছেন জিগির তত্ত্ব। তিনি লিখেছেন “বাঙলাদেশে রবীন্দ্রনাথ হঠাৎ আবির্ভূত নন। ১৮৬১ তে তার জন্ম। ১৯৪১ এ মৃত্যু। পাকিস্তান তৈরীর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল ১৯৪০ সনে রবীন্দ্রনাথের সামনেই।

১৯৪৭ সনে প্রতিষ্ঠিত হল পাকিস্তান, তখন রবীন্দ্রসাহিত্য সামনে রেখেই রাম-রবীন্দ্রনাথের সঙ্গ পরিহার করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলাম আমরা। আবার ১৯০৫-১১ সনে বঙ্গভঙ্গ উপলক্ষে লিখিত রবীন্দ্রনাথের যে কবিতা প্রবন্ধ গান মুসলমানদের প্রভাবিত করে নি, ষাট সত্তর বছর পর তা প্রেরণার উৎস হয়ে দাড়াল কেন- সে রহস্য বিশ্লেষণ করলে ও রবীন্দ্র প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করা দুঃসাধ্য হবে। আসলে বিভাষী শোষনে ক্ষুব্ধ আমরা ভাষিক বা আঞ্চলিক জাতীয়তাবোধে অণুপ্রাণিত হয়েই নিজেদের মনের ও বাঞ্চার প্রতিচ্ছবি আবিষ্কার করেছি রবীন্দ্রবাণীতে। ” জিগির তত্ত্ব//কালিক ভাবনা/ডক্টর আহমদ শরীফ। তখন যে আমরা আঞ্চলিক জাতীয়তাবোধের জন্য কলকাতা জিগির তুলেছিলাম তার এখন কোন মূল্য নেই।

জিগির সময় সময়ে পরিবর্তীত হয়। আহমদ শরিফ একথাটাই বলেছেন, “যেমন একসময় বন্দে মাতরম মুসলমানদের কন্ঠেও ধ্বনিত হত। তারপরে রাজনৈতিক অভিসন্ধি বশে তা ঈমাণবিরুদ্ধ বলে পরিত্যক্ত হয়। ” অতএব কলকাতা কি করল না করল এখন তা আমাদের দেখার বিষয় হতে পারে না। ছফাও একটা স্বাক্ষাতকারে বলেছিলেন, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিশেবে কোলকাতা আর আমাদের কিছু দিতে পারবে না[২]।

আমাদের লেখকেরা যদি এখনো ভেবে থাকেন কলকাতার পত্রিকা লেখা প্রকাশ মানে জাতে উঠা তাহলে তা হবে ভুল। বরং ভবিষ্যতে কলকাতা কে বাংলাদেশ মুখী হতে হবে সাহিত্যের ক্ষেত্রে। কারণ বাঙালী জাতির একটা মাত্র স্বাধীন দেশ আছে, এবং সেটা বাংলাদেশ। সংযুক্তিঃ [১]পশ্চিমবঙ্গের কাগজে আমি মরলেও খবর হবে না: সুনীল [২]স্বাধীন দেশের নাগরিক হিশেবে কোলকাতা আর আমাদের কিছু দিতে পারবে না- ছফা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৯ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।