আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বব্যাংকের পায়ের তলায়ই থেকে গেলাম

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিবাজ। বিশ্বব্যাংকের কোন প্রয়োজন নেই। যে দোষ করিনি তা স্বীকার করব কেন? যারা ষড়যন্ত্র করে বিশ্বব্যাংককে চুক্তি বাতিল করতে ইন্ধন যুগিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। পদ্মাসেতুর জন্য স্কুলের ছাত্ররা টিফিনের টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি আছে। পদ্মাসেতুর জন্য সচিব সাহেবরা তাঁদের উৎসব ভাতা দান করবেন।

৩০ মাসের কিস্তিতে সরকারি কর্মচারীদের একমাসের বেতন পদ্মা সেতুর জন্য দান করা কবে। আমরা স্বাধীন জাতি, কারো সাহায্য নিবনা। নিজেরাই করব নিজেদের পদ্মা সেতু। নিজের পায়ে দাড়াবই। উপরে বিবৃত সংলাপগুলো বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পদ্মাসেতুর লোনচুক্তি বাতিল করার পর আমাদের মাননীয় সরকার প্রধান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের।

সংলাপগুলো পর্যালোচনা করলে যে কেউ আশান্বিত হতে পারেন যে এবার বাংলাদেশ থেকে বিশ্বব্যাংককে ঝেটিয়ে বিদায় করা হবে। বাংলাদেশ এবার নিজের পায়ে দাড়াবেই। কিন্তু না তেমন হয়নি। যে লাউ সেই কদুই রয়ে গেল। গত কয়েকদিনের সংবাদ বিশ্লেষণে এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে, আমাদের সরকার বিশ্বব্যাংকের সব দাবি মেনে নিচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের শর্তের কাছে মাথা নত করে বিদায় নিয়েছেন বিতর্কিত মন্ত্রী আবুল হোসেন, ছুটিতে পাঠানো হয়েছে সেতুবিভাগের প্রাক্তন সচিব মহোদয়কে, চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি সেতুর প্রকল্প পরিচালকের। এ প্রেক্ষিতে এখন যে কেউই প্রশ্ন করতে পারেন, যখন শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের শর্তগুলো মেনে নেওয়া হল তাহলে এতোদিন এতো বড় বড় কথা কেন, এতো জল ঘোলা করা কেন। বিশ্বব্যাংকের শর্তগুলো মেনে নেয়ায় মূলত দুটো বিষয় প্রতিষ্ঠিত হল। প্রথমত, সরকার মেনে নিল পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এটাও মানা হল যে, চুক্তি বাতিল করার পর সরকারের প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আমলা সাহেবরা যা বলে আসছিলেন তা নিতান্তই বাগাড়ম্বর এবং বাস্তবতা বিবর্জিত।

উল্লেখিত দুটো আচরণের প্রেক্ষিতেই সরকারের কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলা যায়। প্রথমত, সরকার যদি বুঝে থেকে থাকে যে পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতি বা দুর্নীতির প্রচেষ্টা হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংকের চাহিদা মোতাবেক সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের সরকারি দায়িত্ব হতে দুরে রাখা প্রয়োজন তাহলে এটা করার জন্য এতো দীর্ঘ সময়ের অপচয় কেন? কেন প্রাথমিক অবস্থায় অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকার সংশ্লিষ্টরা সবাই সাফাই গাইলেন? অভিযুক্তদের রক্ষার প্রচেষ্টা থেকে বিশ্বব্যাংকের সাথে দ্বন্দ্ব, পরবর্তীতে চুক্তি বাতিল এবং পুনরায় বিশ্বব্যাংককে মানানোর প্রচেষ্টায় যে সময়ের অপচয় হল, যে সরকারি ব্যয় হলো বা বাড়ল এর দায় সরকার কি বলে এড়াবেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করার পর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে দুর্নীতবাজ আখ্যা দিয়ে নিজেদের পয়সায় সেতু নির্মাণের প্রত্যয়ী ঘোষণা দিলেন। তার দলের নেতৃবৃন্দ তাকে খুশি করার প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে নামলেন। অর্থসংগ্রহের এক এক উপায় বাতলানো শুরু করলেন। আর এ বাগাড়ম্বরের প্রক্রিয়ায় পদ্মাসেতুর নামে অর্থ সংগ্রহের প্রতিযোগিতা শুরু হল।

সারাদেশে গণচাঁদাবাজির একটি ক্ষেত্র তৈরী হল। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, ব্যাংক, বীমা, স্কুল, কলেজে চাঁদাবাজির মহোৎসব শুরু হল। এরই মধ্যে চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত হলেন। কিন্তু এখন সরকারের গত কয়েক দিনের আচরণে মনে হচ্ছে সরকার আগে থেকেই জানত বা বুঝত যে, বিশ্বব্যাংকের সাহায্য ব্যতিত এমন চাঁদা সংগ্রহের মাধ্যমে পদ্মসেতুর নির্মাণ কাজ সম্ভব নয়। যদি সেটা তারা বুঝেই থাকে তাহলে অহেতুক বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে পুরো দেশে চাঁদাবাজির এ মহোৎসবের আয়োজন কেন? এর দায় কি সরকার এড়াতে পারে? খান আতাউর রহমান পরিচালিত বিখ্যাত নবাব সিরাউদ্দৌলা চলচ্চিত্রে গোলাম হোসেন নামে নবাবের এক ভৃত্য ছিলেন।

নবাব (আনোয়ার হোসেন) যখনই গোলাম হোসেনের কাছে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইতেন গোলাম হোসেন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলে ওঠত, এইতো জনাব! আপনার পায়ের তলায়ই আছি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নিজের পায়ে দাড় করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে তার সরকারের আচরণে এটা স্পষ্ট যে, নিজের পায়ে নয় বরং বিশ্বব্যাংকের পায়ের তলায়ই আমরা থেকে গেলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.