আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ুন আহমেদ, মৃত্যু পরবর্তি কবর সঙ্ক্রান্ত জটিলতা

একি আজব কারখানা........... নাটক দেখছি, হুমায়ুন স্যারের বর্তমান স্ত্রী শাওন vs পরিবার পরিজন। মাজখানে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতন আমরা আম পাঠকেরা, তার ভক্তরা। আরে, এই টানা হ্যাচড়াতে স্যারের আত্মা যে কষ্ট পাচ্ছে একি কেউ বুঝছেন না ? এইসব প্রহসনের মানে কি ? সহজ ও যৌক্তিক এক্ট আব্যাপারে প্রধানমন্ত্রির হস্তক্ষেপ কেন লাগবে ? আমরা কি তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেলেও এই রকম একশ ড্রামা পার হয়ে যেতে হবে ? প্রথমে মিডিয়া ড্রামা, তারপরে পারিবারিক ড্রামা, এখন পলিটিক্যাল ড্রামা। এর আগের পোস্টে বলেছিলাম হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু নিয়ে কর্পোরেট মিডিয়া কথন। ঘটনা এতদুর গড়াবে ভাবিনি।

তখনি বলেছিলাম, জিপি কিনবা এয়ারটেল বলে বসতে পারে- "আপ্নারা নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদ কে শ্রদ্ধা জানাতে চাইলে এস লিখে টাইপ করুন ৬৯৬৯ নাম্বারে। আপনার শ্রদ্ধা পৌছে যাবে স্যারের কবরে। এই সুযোগ সিমীত সময়ের জন্য। " এখন মনে হচ্ছে এই সুযোগ টা তারা নিতে পারে কবরের যায়গার সিলেকশনের জন্য। হায়রে মিডিয়া, হায়রে বানিজ্যিকিকরন।

কিছু কথা বলার ছিলো। ফিফারসাম্প্রতিক পোস্ট টা পড়লাম, যা বুঝলাম তার একটু ক্রিটিকাল এনালাইজিং করি। একান্তই ব্যাক্তিগত অভিমত, আপনাদের আলোচনাও সাদরে গৃহিত হবে। সাধারনত, যে কেউ হোক সে হুমায়ুন আহমেদের মতন এত বড় মাপের একজন লেখক কিংবা সাধারনরন একজন আম মানুষ, মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছাকে অবশ্যই প্রাধান্য দেয়া উচিত। কিন্ত মানুষ টা যখন সেলিব্রেটি তখন কিছু ড্রামা তো হতেই পারে।

আম রা অভ্যস্ত এইসব দেখে। এখন আর খারাপ লাগেনা। আসলে খারাপ লাগ্লেও ইগ্নোর করে যাই। যাই হোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি, হুমায়ুন আহমেদ নিজেই ব্যাপারটায় কিছুটা বিতর্কের সুযোগ করে দিয়েছেন। একর্ডিং টু কালের কন্ঠ- " হুমায়ূন আহমেদও একসময় নুহাশপল্লীতে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বলে জানা যায়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এর পরই একটি বার্তা সংস্থায় প্রকাশিত তাঁর এক সাক্ষাৎকারে অন্য মনোভাবের কথা জানা যায়। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'আমি চাইছিলাম, আমার মৃত্যুর পর কবরটা এখানে (নুহাশপল্লী) হোক। পরে দেখলাম, এটা কবরস্থান হয়ে যাবে। এটা কবরস্থান হওয়ার স্থান নয়।

এটা তখন গুলিস্তানে পরিণত হবে। এখানে দুনিয়ার লোক আসবে। একুশে ফেব্রুয়ারি ফুল দেওয়ার জন্য, ১৩ নভেম্বর ফুল দেওয়ার জন্য আসবে। এটা হয়ে যাবে একটা কবরস্থান। এটা কবরস্থান বানানো যাবে না।

" ব্যাপারটা অনেকাংশে এখানেই ক্লিয়ার হয়ে যায়। ফিফার উল্লেখিত শাওনের সম্পত্তির নিশ্চয়তা বা অন্যান্য এডভান্টেজ বাদ দিয়ে শাওনের আরেকটা যুক্তি হলো- “আমেরিকার পাসপোর্ট থাকলেও চিকিৎসাধীন হুমায়ূনের পাশে পরিবারের কেউ দাঁড়ায়নি। তারা পাশে দাঁড়াতে পারতো, কিন্তু দাঁড়ায়নি। আমার শাশুড়ি ছাড়া কেউ ফোনও করতো না। জীবিত অবস্থায় তারা তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি।

তার লাশ নিয়ে কেন টানাটানি। আমি জানি হুমায়ূন আহমেদ এখন কষ্ট পাচ্ছেন। ” “হুমায়ূন জীবিত থাকতে কেউ পরিবারিক মিটিংয়ের কথা বলেননি। কোথায় তার চিকিৎসা হবে, কোন হাসপাতালে করলে ভালো হবে সে বিষয়ে আলোচনা করতে আসেননি। জীবিত অবস্থায় যারা হুমায়ূন আহমেদের পাশে দাঁড়ায়নি, পারিবারিক মিটিং করেননি তাদের অধিকার নেই এখন মিটিং করার।

” এই কথাটা ফেলে দেয়া যায়না, যেখানে আমরা জানি শাওন কে বিয়ের পর মোটামুটি পরিবারের সবাই তাকে অনেক টা ত্যাজ্য করে। এখানে শাওন তার অধিকারের যায়গাটা কঠিন ভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সবেচেয়ে বড় কথা শাওন ছিলো তার সর্বশেষ অন্ধের লাঠি। কিন্ত এখানে আরো কিছু ফ্যাক্টস থেকে যায়, একজন মানুষের জীবন আসলে তার একার নয়। সকলের প্রত্যাশা এবং পরিবারের আশা , চাহিদা এখানে একটা বিরাট ভুমিকা রাখে।

একই ব্যাপার হুমায়ুন স্যারের বেলাতেও। শাওন তার সবচাইতে কাছের মানুষ ছিলো শেষ কটি দিন/বছর। কিন্ত তার আগের বিরাট একটা ফেজ যে পরিবারের প্রত্যাশা আর ইন্সপাইরেশনে তার জীবনে ছিলো তাকে কি অস্বীকার করা যায় ? আজকের হুমায়ুন আহমেদ নন্দিত লেখক হিসেবে গড়ে উঠার পিছনে তার পরিবার পরিজনের অবদান অনস্বীকার্য। বিষেশত তার মা এবং ভাই বোন দের এবং অবশ্যই প্রাক্তন স্ত্রী গুলতেকিন এর। হূমায়ূন আহমেদের সেই মা আয়েশা ফয়েজ নিজে যা চান, হুমায়ূনের ছোট ভাই আহসান হাবীব সাংবাদিকদের সেটাই বললেন, “কোনো সমস্যা না থাকলে আমরা আজই উনাকে দাফন করতে চাই।

আমাদের মায়ের ইচ্ছা, মিরপুর বা বনানীতে এটা হোক। ” অন্যদিকে বড় মেয়ে নোভা আহমেদ বলেছেন- "আমরা চাই এমন জায়গায় বাবার কবর হোক, যেখানে সবাই সব সময় যেতে পারবে। বাবা জীবিত থাকতে বারবার বলেছিলেন, নুহাশপল্লীকে যাতে কবরস্থান বানানো না হয়। আমরা চাই নুহাশপল্লী বাদে অন্য কোনো কবরস্থানে (সেটা মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান হতে পারে) বাবার কবর হোক, যাতে সবাই সেখানে গিয়ে দোয়া করতে পারে। ’ আমার দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা সমাধিস্থ হয়েছেন এই ঢাকায়।

রাজধানী ছাড়া এতো বড়ো মাপের একজন মানুষের জায়গা আর কোথাও কি হতে পারে? হুমায়ূনের তো একটি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি নেই যে, সুদূর টুঙ্গিপাড়া কিংবা রাঙ্গুনিয়ায় মাজার জিয়ারতে যাবে ভক্ত-অনুরাগীরা। " সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, একদিকে বর্তমান স্ত্রী শাওনের লিগাল অধিকারের ইচ্ছে, অন্যদিকে তার জীবনের শাওনবিহীন সময়ের পরিবার পরিজনের ইচ্ছে। একদিকে শাওন কে নিয়ে নানান কটুক্তি আর অন্যদিকে গুলতেকিন কে নিয়ে কল্পিত কথন। এই দুই এর দ্বান্দিকতায় কতটুকু শান্তি পাচ্ছে তার আত্মা ? তবে তার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে আমরা সমালোচনায় না আসি। তিনি কি করেছেন, কাকে বঞ্চিত করেছেন, কাকে কাছে টেনে নিয়েছেন সেটা তার মনেরর গভীরেই লুকানো থাক।

কেউ আবার এর মাঝ দিয়েই ফায়দা লুঠছে শাওন বা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট নিয়ে। এখন, এই সব উক্তি বিশ্লেষন করলে উভয় দিকেই লজিক এন্টি লজিক খুজে পাওয়া যায়। সবেশেষ কথা হচ্ছে- আমরা সবার দিকে না তাকিয়ে একটু সেই মানুষটার কথা ভাবি, যাকে নিয়ে এই টানা হ্যাচড়া। যেখানেই তার কবর হোক না কেন, তিনি কিন্ত ঠিক ই বেচে থাকবেন শত কোটি মানুষের হৃদয়ে। এখানে ইন্ডিভুজায়ালের ইচ্ছার চেয়েও বড় হয়ে যায় বাস্তবতা কি বলে।

সত্যি কি আমরা নূহাশ পল্লিকে গুলিস্থান রুপে দেখতে চাই, নাকি আর দশজন সাধারন মানুষের মতন শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগটুকু পেতে চাই। আমরা কি কোন মাজার চাই ,যেখানে টিকেরট কেটে যাতে হবে, নাকি এক্টুখানি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে চাই। আমার অভিজ্ঞতা বলে এর আগেও অনেক মানুষ কে ভিভিন্ন যায়গায় কবর দেয়া নিয়ে নানান নাটকের সৃষ্ট হয়েছে। আমি সেই সকল পাঠক দের কথা চিন্তা করে এই অপিনিয়ন দিতে পারি- যারা তার কথা নিজেদের মনের অন্তস্থলে রাখবে , তাদের জন্য ঢাকার বুদ্ধিজীবি কবরস্থান কিংবা বনানী,মিরপুর কবস্থান অথবা যে কোন সন্মানিত কিন্ত যে কারো জন্য এক্সেসেবল যায়গায় কবর দেয়া হোক। যাতে আমরা তার ভক্তরা তাকে নিজেদের ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে একগুচ্ছ ফুল দিতে গেলে যেন কোন রকম বাধা বা অবস্ট্রাগলের স্বীকার না হতে হয়।

এই টুকুই আমাদের চাওয়া, তার পাঠক হিসেবে। এ ব্যাপারে শাওন সহ তার পরিবার কি সিধান্তে উপনিত হবে জানিনা, তবে তা যেন অসঙ্খ্য ভক্তকূলের জন্য বিরক্তির ব্যাপার হয়ে না দাঁড়ায়। দেখা যাক প্রধান মন্ত্রী এ ব্যাপারে কি সিদ্ধান্তে আসেন, তবে আমার সহজ মাথায় ঢুকেনা , একজন মহান মানুষের জন্য বরাদ্ধ সাড়ে তিন হাত মাটিতেও কেন প্রধান্মন্ত্রির হাত দিতে হবে। নিশ্চই এটা আমারি অপরিপক্কতা, না হলে এমন প্রশ্ন আসেবে কেন মাথায়। স্যার যেখানেই আপনার কবর হোক, আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি সবসময় ই বরাদ্ধ থাকবে আপনার জন্য।

আপনি ভালো থাকবেন , সসময়, সব যায়গায়। কারন আপনার সাথে আছে অসঙ্খ্য মানুষের ভালোবাসা আর বিনম্র শ্রদ্ধা। আমার প্রথম পোস্ট হুমায়ুন স্যার কে নিয়ে। প্রসংগঃ হুমায়ুন আহমেদ, আমার অনুভূতি ও কর্পোরেট মিডিয়া কথন... ফিফার পোস্টঃ শাওনের অতি নাটকীয়তা, নূহাশ পল্লী আর বড় মেয়ের বড় যুক্তি ------------------------------------- কারো ভিন্ন মতামত থাকলেও জানাতে পারেন। আলোচনা সাদরে গৃহিত হবে।

-------------------------------------------------------- আপডেটঃ নূহাষপল্লিতেই স্যারের কবর। সূত্রঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ। তার মানে কি দাড়ালো ?[/sb  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।