আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই কাপ চা ও এক প্লেট বিস্কুট

কাঙাল জানিয়া বাবা দিও দরিশন, অধম জানিয়া বাবা দিও দরিশন..... ১৯৭৮ কিংবা ৭৯ইং হবে আমার বয়স হবে ৮ অথবা ৯ বছর। আমার বাবার সাধারন কেরাণীক এর চাকুরী । তার আয়ের উপর নির্ভর করত হতো ১৮-১৯ জন মানুষ। তখন চাকুরির বাজারে একটা ভালোমানের চাকুরি পাওয়া বেশ কঠিন ছিল। তখন চা এর সাখে বাসায় ভালো কিছু পাওয়া বেশ দুস্কর ছিল।

মুড়ি ,চালের ভাজা গুড়ো করে অথবা আটার রুটি। এমতাবস্থায় আমার বাবার একটা ভালো চাকুরির সুযোগ তৈরী হলো। কিন্তু তার বড় কর্তা তাকে খুব পছন্দ করতেন। তাকে উক্ত পদে বা ভালো একটা স্থানে রাখার ইচ্ছে ছিল। এই রকম পরিস্থিতিতে বাবার বড় কর্তা বাবাকে স্বপরিবারে তার বাসায় নিমন্ত্রন করলেন।

আমরা দুই ভাই তাদের সাথে সঙ্গী হলাম। যথসম্ভব তখনকার সময়ের ভালো ফ্যাশনের কাপড় পড়ে নিমন্ত্রনে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তো সমস্যা , আমাকে ভালো মতো বাবা মা দুজনই বুঝালেন হামীম চটফট , বা উল্টাপাল্টা কিছু না করতে। যাতে আমি নিরব থাকি । কিছু না করি।

যথারীতি আপ্যায়ন পর্বে চা এলো , কিন্তু মাত্র দুই কাপ। আমার নিজেকে বেশ অপমানিত মনে হলো। আমিতো খুব শক্ত হয়ে গেলাম। আমাকে বাবার বড় কর্তার স্ত্রী আমাকে বিস্কুট নিতে বললেন। আমি একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে দেখলাম খুব স্বাদ লাগলো।

আমি সবগুলো বিস্কুট পকেটে পুরে নেয়ার মনস্ত করলাম এবং ঢুকাতে শুরু করলাম। মা আমার হাত ঝাপটে শক্ত করে ধরেও নিবৃত করতে পারলেন না। বাবার বড় কর্তার স্ত্রী অবশ্য আমার পকেটে পুরে নেয়াকে সমর্থন দিয়ে আরো লাগবে কিনা জানতে চাইলেন। অবশ্য এই কাজের জন্য আমাকে মা পরে অনেক বকাবকী করেছিলেন। এই জন্য আমার পরবর্তী সময়ে অনেক লজ্জা লাগতো এবং নিজের উপর অপরাধ বোধ তৈরী হয়েছিল।

যে কোন কারনে হোক , অথবা এই চা বিস্কুট এ্রর কারনেই হোক আমার বাবা এই বড়কর্তার ছাড়পত্র পেয়েছিলেন। বি:দ্র: এরপর আমার বাসায় কোন মেহমান আসলে আমার মা কিন্তু চা বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করতে ভূলেন না। অবশ্যই কোন মেহমান আসলে তাকে অনন্ত পক্ষে চা বিস্কুট খেয়ে যেতে হবেই। ( আমার এই লেখা পড়ে কোন পাঠক আমাকে ভূল বুঝবেন না । আমার মনের কষ্টগুলো ব্লগে অকপটে লিখে নিজেকে হালকা করে নেয়ার সুয়োগ টা গ্রহনকরি।

) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।