আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাল রাত নেমেছিল অমাবস্যার অন্ধকার নিয়ে ,সাথে ছিল শ্রাবনের মেঘ......।

গতকাল রাতের আকাশে কোন চাঁদ ছিল না তাই জোস্না থাকা সম্ভব ছিল না। ছিল নিকষ কালো অমাবস্যার অন্ধকার সাথে শ্রাবনের মেঘ। এমন রাতে সংবাদটি শুনে বিশ্বাস হচ্ছিল না, কিভাবে সম্ভব ?এত তাড়াতাড়ি, এরকম একজন মানুষ, এভাবে অন্ধকারে চলে যাবেন কেন? অথচ এই মানুষটিই আমাদের চাঁদ,জোছনা, পূর্নিমা এসবের সৌন্দর্য দেখতে শিখিয়েছেন। জোছনা নিয়ে তার কি ব্যাকুলতা- আমার ভাংগা ঘরের ভাংগা চালা ভাংগা বেরার ফাঁকে... অবাক জোছনা ঢুইকা পরে ;হাত বাড়া্ইয়া ডাকে'. তাহলে কি সৃস্টিকর্তা ও শুনতে পাননি তার সেই আকুল চাওয়া- 'ও কারিগর, দয়ার সাগর, ওগো দয়াময় চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়' 'চাননী পসর রাইত' আসতে এখন ও বেশ দেরি, হয়ত আসবে নিয়ম মত কিন্তু যিনি এই প্রবল জোছনার মধ্যে হাহাকারের সন্ধান করেতেন তিনি আর জোছনা নিয়ে লিখবেন না। আর কোন নাটকে , কোন গল্পে দেখা যাবে না কাউকে কবরের মধ্যে শুয়ে জোছনা দেখতে।

আমাদের এই প্রজন্মের অনেকের কাছেই একুশের বইমেলা মানেই হুমায়ন আহমেদের নতুন উপণ্যাস, হিমুর নতুন কোন বই পড়া। আজকে ফেসবুকের এই দিনেও তিনি আমাদেরকে কাগজের বইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হতে দেননি। হিমু ,মিসির আলি, কিংবা শুভ্র/মাজেদা খালা অথবা কুটু মিয়া। কি অবলীলায়, সহজ সরল ভাবে উপস্থাপন করেছেন আমাদের কাছে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, আবেগ ,কটুচিন্তা সব উপাদানই ছিল তার উপন্যাসের সরলভাবে।

তিনি বলতে পেরেছেন- 'যমুনার জল দেখতে কালো, স্নান করিতে লাগে ভালো......। .....যৌবন মিশিয়া গেলো জলে। ' তার এই সরলতা, সহজবোধ্যতাই আমাদেরকে এতটা গভীরভাবে টানতো। আমি জানিনা আর কোন লেখক আমাদের কে এভাবে টানতে পারবে কিনা। এটা অব্যশই আমাদের বাংলা সাহিত্যের জন্য অপুরনীয় ক্ষতি।

আমি এখনও কল্পনা করতে পারিনা ঈদের সন্ধ্যায় হুমায়ন আহমেদের ণাটক দেখবো না কখনো। আমি ভাবতে পারিনা আমর কোন মির্জা সাহেব, বাকের ভাই, মফিজ পাগলা, ক্ংকা ভাইয়া, তিথলী ভাইয়া,কিংবা জোছনা পাগল বড় চাচা জন্ম নেবে না কোন নাটকে, উপন্যাসে টিভি পর্দায়। আর কোন বাকের ভাইকে নিয়ে মিছিল হবে না ঢাকার রাস্তায়। আমরা আর পাবনা, শ্রাবন মেঘের দিনের মত ছবি/গান- 'এক যে ছিল সোনার কন্যা মেঘ বরন কেশ , ভাটি অন্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ.....' কিংবা, 'সোয়া চান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি.....?' কি অবাক কান্ড আজ তিনি নিজেই ঘুমিয়ে গেলেন আর কখনও উঠবেনা কারো ডাকে। আর কেউ কি পারবে 'শংখনীল কারাগার' , আগুনের পরশমনি,দারুচিনি দ্বীপের মত মৌলিক ছবি উপহার দিতে? জুম বৃষ্টি, গাছ, নদী ,গ্রাম, প্রকৃতিকে আমাদের আর কে চেনাবে ? আমরা কদম ফুল, কাদা মাটি এসব নিয়ে কি কখনও ভাবতে পারবো আমরা ? কেউ কি আমাদের মনে করিয়ে দিতে পারবে এসব? সর্বশেষ তিনি ভাংতে চেয়েছিলেন আমদের ইতিহাসের 'দে্য়াল', বলতে চেয়েছিলেন ৭৫ এর স্বরুপ, হয়ত সফল হতেন।

কিন্তু এখন কি হবে আমরা এ বিষয়ে অনিশ্চিত। আজ শিশু মৃতুহার হ্রাস, গ্রামীন স্বাস্থ্য সচেতনতা , নিরাপদ মাতৃত্ব বা প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আমাদের যে অর্জন তাতে হুমায়ন আহমেদেরও অবদান রয়েছে, কেননা তার রচনা ও পরিচালনায় 'সবুজ ছায়া', এই মেঘ এই রৌদ্র , 'জোছনার ফুল' বা 'গাড়ি চলে না ' নাটকে তিনি নির্মল বিনোদনের সাথে অবলীলায় বলে গেছেন সব কঠীন কঠিন বার্তা যা মানুষ সহজে গ্রহন করতে পেরেছিল এবং সমাজে একটি নিরব অথচ খুব গুরুত্বপুরন সচেতনতা তৈরী হয়েছিল। যেটা হয়ত গতানুগতিক ধারায় বহু বছর লাগতো। তাই এমন একজন মানুষকে হারানো শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের নয় বরং আমাদের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক ক্ষতি। আমি আর কিছু মনে করতে পারছিনা, চিন্তা করতে পারছিনা ..।

শুধু ভাবছি হয়তো আবারও আকাশ ভেঙে জোছনা আসবে, জুম বৃষ্টি নামবে , কিন্তু সেই মানুষটি আর থাকবে না আমাদের সাথে। সেই জোছনায়,বৃষ্টিতে, কদম ফুলের গন্ধে আমাদের হুমায়ূন আহমেদকে খুজে নিতে হবে। তিনি আমাদের ভাবনায়, চেতনায় এবং নিসর্গের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে বহুকাল ধরে বর্তমান থাকবেন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।