আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুদন্ড-দেশে দেশে- কি ও কিভাবে?(ভয়ন্কর কিছু ছবি আছে দুর্বল চিত্তদের না ঢুকতে অনুরোধ করবো)

আমি কখনো যায়নি জলে,কখনো ভাসিনি নীলে,কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাঙচিলে মৃত্যুদন্ড-মৃত্যুদন্ড বিভিন্ন দেশে ভয়ন্কর সব অপরাধের শাস্তিস্বরুপ দেয়া হয় । দেশে দেশে এর পদ্ধতি ও ইতিহাস ভিন্ন। পৃথিবীর ৫৮ টি দেশে এখনও মৃত্যু দন্ড দেয়া হয় অথচ ৯৭ টি দেশ থেকে এটি বিলুপ্তপ্রায়। মৃত্যুদন্ডের ইতিহাস বহু পুরানো একসময়ে চকতি দিয়ে,সিদ্ধ করে ,পুড়িয়ে ,পাথর মেরে ক্রুশবিদ্ধ করে এমনকি হাতি দিয়ে পাড়িয়েও মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো। প্রাচীন চীনে দুই ধরনের মৃত্যুদন্ডের চল ছিলো একটি ছিলো রড দিয়ে খুচিয়ে মারা অপরটি ছিলো হাতের শিরা কেটে ফেলা।

৯০০ শতাব্দীতে কেটে কেটে মানুষকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হত। পরে ১৯০৫ সালে এ পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়। সে সময় যদি কোন মন্ত্রীর মৃত্যুদন্ড দেয়া হত তবে তাকে এভাবে না মেরে তাকে আত্মহত্যার জন্য বলা হত । সে সময়ে যার মৃত্যুদন্ড দেয়া হত তার পরিবারের উপরেও নেমে আসত অমানবিক অত্যাচার। বাবাকে গৃহবন্দি করা হত,মা বোন দাদা নাতি কে একঘরে করে দেয়া হত এমনকি তাদের যারা মারা গেছে তাদের কবর থেকে কফিন তুলে বিদ্ধস্ত করে উড়িয়ে দেয়া হত আর হাড়গোড় গুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হত।

আস্তে আস্তে মৃত্যুদন্ড একটু একটু করে কাল ক্রমে সহজ হয়ে আসে । ফাসিতে ঝুলানো,গলাকাটা বা গিলোটিনের মতো পদ্ধতি গুলো আসে। আস্তে আস্তে এসব আরও আধুনিক রুপ পায় যেমন ফাসির দড়িতে ঝুলিয়ে আগে পায়ের নীচের টুল সরিয়ে ফেলা হত আর এখন অনেক উপর থেকে ফাসিতে ঝুলিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় তাতে সাথে সাথে আসামীর মৃত্যু হয়। আসুন দেখে নেই এখনও কোন কোন দেশে কি কি ভাবে মৃত্যুদন্ড চালু আছে বা তাদের পদ্ধ তিটিই বা কি? ১। ফাসি(এশিয়া মহাদেশ,লাইবেরিয়া ও ওয়াশিংটন) ২।

গলা কেটে ফেলা(সৌদি আরব ,কাতার) ৩। গ্যাস চেম্বার (ক্যালিফোর্নিয়া ,মিসৌরী ও আ্যারিজোনা ) ৪। বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে(গুয়েতমালা,থাই ল্যান্ড ,চিন ,ভিয়েতনাম ও আমেরিকা) ৫। ফায়ারিং স্কোয়াড(চীন ,উত্তর কোরিয়া,ইন্দোনেশিয়া,কিউবা,ভিয়েতনাম) ৬। ইলেকট্রিক চেয়ার( আমেরিকা,চীন) ফাসি- ফাসি কার্যকরের আগে ফাসির মণ্চ ও পাটাতন বার বার পরীক্ষা করে দেখা হয়।

৩০ফুট লম্বা দড়িটি ভিজিয়ে শুকানো হয় যেন তাতে ভাজ বা প্যাচ না খায়। দড়িটি মোম তেল ও সাবান দিয়ে মসৃন করা হয়। আসামীর সাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং যখন তাকে পাটাতনের দাড় করানো হয় তখন কলেমা পড়িয়ে তার মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। উপর থেকে ফেলার গতি হয় অতি দ্রুত যেন তা গলায় ১২৬০ ফুট-পাউন্ড চাপ তৈরী করতে পারে। দড়ির নট টি থাকে আসামীর বাম কানের নীচে।

অতি দ্রুত পড়ার সময় মেরুদন্ডের হাড় ভেন্গে গিয়ে সাথে সাথে আসামীর মৃত্যু হয়। ইলেকট্রিক চেয়ার-এতে ওক কাঠের চায়ার ব্যাবহার করা হয় যাতে বিশেষ পদ্ধতিতে ইলেকট্রিক লাইন দেয়া থাকে। আসামীকে সে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বুক ফিতা দিয়ে বাধা হয় । একটা মেটালিক হেলমেট মাথায় পরানো হয় তাতে ইলেকট্রিক সংযোগ দেয়া হয়। প্রথমে ৮ সেকেন্ডের জন্য ২৩০০ ভোল্ট এরপর ২২ সেকেন্ডের জন্য ১০০০ ভোল্ট আবার পরবর্তীতে ২৩০০ ভোল্ট ৮ সেকেন্ডের জন্য দেয়া হয়।

বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগে -গ্যাস চেম্বার একটি আবদ্ধ ঘরের মতো যাতে একটি চেয়ার থাকে ও একটি সিলিন্ডার থাকে তাতে সায়ানাইডের বড়ি থাকে নীচে একটি পাত্রে সালফিউরিক এসিড থাকে এবার ও চেয়ারে বসিয়ে আসামীর হাত পা বেধে দেয়া হয় । বুকে ইসিজি মনিটর লাগানো থাকে যা বাহিরে থেকে দেখা যায়। এবার বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে তিনটি বিস্ফোরন ঘটানো হয় তাতে সিলিন্ডারের সায়ানাইড সালফিউরিক এসিডে পরে মুহুর্তেই বিষাক্ত গ্যাস তৈরী হু যা মানুষকে কিছুক্ষনের মধ্যে অচেতন করে ফেলে কিছুক্ষন পরে খিচুনী শুরু হয় এবং এক যন্ত্রনা দায়ক মৃত্যু ঘটে। আসামীর মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর সেই চেম্বারে এমোনিয়া গ্যাস পাম্প করা হয় ও একজোস্ট দিয়ে বিষাক্ত গ্যাস বের করে দেয়া হয়। প্রায় ৩০ মিনিট পর সেই চেম্বার খুলে মৃত দেহ বের করা হয়।

ফায়ারিং স্কোয়াড--আসামীকে একটি ঘরের মধ্যে একটি চেয়ারে বসানো হয় বা একটি পাটাতনে দাড়া করানো হয়। হাত পা মুখ বাধা অবস্হায় থাকে। তার থেকে ২০ ফুট দূরে একটা দেয়াল থাকে যাতে ফাকা জায়গা করা থাকে যেখান থেকে গুলি করা হয়। পর পর পাচ বার গুলি করা হয় । আসামীর মুখ এ সময় কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে ও জেলার সাদা কাপড় দিয়ে আসামীর হার্ট চিহ্নিত করে দেয় ও গানম্যানেরা একে তকে গুলি করে।

বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে- আসামীকে এ ক্ষেত্রে একটি রুমে আনা হয় ও একটি বিশেষ বেডে শোয়ানো হয়। ইসিজি লীড লাগিয়ে মনিটরের সাথে সংযোগ দেয়া হয়। দুই হাতে ক্যানোলা করে নরমাল স্যালাইন দেয়া হয় । থায়ো পেন্টাল সোডিয়াম দিয়ে প্রথমে আসামীকে অচেতন করা হয়। এরপর সারা দেহ অবশ করার জন্য প্যারালিজিং ড্রাগ প্যানকিউরিয়াম দেয়া হয় তার পর অবশেষে হার্ট বন্ধ করার জন্য দেয়া হয় পটাশিয়াম ক্লোরাইড ইনজেকশন।

মিটরে ইসিজি দেখে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ করা হচ্ছে কারন এতে যদি ভুল করে কোন নিরিহ ব্যাক্তির মৃত্যু হয় তবে ফেরানোর কোন উপায় থাকেনা একে আসলে বিচারের অবমাননা বলা হয়। বলা হয়ে থাকে ১৯৯২ থেকে২০০৪ পর্যন্ত ৩৯ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।