আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বাস-অবিশ্বাস!

মানুষ মরেনা কখনো বিশ্বাস এমনই একটা বিষয় যার অভাব একটা মানুষের মনকে নরকের জ্বালাতনে জ্বালাতে পারে সারাক্ষন। যেমন,স্বামী-স্ত্রী দুজনের বিশ্বাসে যখন কোন ঘাটতি থাকে না, তখন তারা দিব্যি সারাদিন স্ব স্ব অবস্থানে নিজস্ব কাজ করে যায়, কোনই সমস্যা হয়না। কিন্তু যখনই বিশ্বাস ভঙ্গ হয়ে যায় তখন পাশে বসে হেসে হেসে মোবাইলে কথা বললেও মনে হয় কি না কি হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় বিভিন্ন গাড়ির ড্রাইভারদের দেখবেন অযথাই হর্ন দিচ্ছে; এমন একজন ড্রাইভারকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, সামনে কেউ নাই তা -ও হর্ন দিচ্ছেন কেন? উত্তরে বলল, সামনে নাই পাশে যে আছে সে কখন হঠাৎ সামনে চলে আসে তার বিশ্বাস আছে? তখন বুঝতে পারলাম, আসলে সামনের গাড়ির দোষ না, দোষ হচ্ছে বিশ্বাস, যা আমার গাড়ির ড্রাইভারের নেই। ঠিক তেমনই বিশ্বাসহীনতায় ভুগছে আমাদের রাজনীতিবিদরা।

অবশ্য তাদের যে চরিত্র এতদিনে প্রকাশ পেয়েছে তাতে তারা নিজেরাই নিজেদের বিশ্বাস করে কি না আমার সন্দেহ আছে! কিন্তু তারপরও যে কোন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে যারা দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আরোহন করে থাকে, তাদের কর্মকান্ডে নুন্যতম বিশ্বাস দেশের মানুষজন করে, যে কারনে ঘুরে ঘুরে তারাই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। কিন্তু জনগণের বিশ্বাস থাকলেও তারা নিজেরা একে অপরকে এক ফোটাও বিশ্বাস করে না। একদল চায় নির্দলীয়, আরকদল সর্বদলীয়। কারন কি তারা নির্দলীয় বা সর্বদলীয় ধরনের সরকারকে বিশ্বাস করে বলে? জী না! তারা নির্দলীয়-সর্বদলীয় দেরকেও বিশ্বাস করেনা, তারা তাদের ক্ষমতায়নে সুযোগ্য হবে কোনটি সেটির হিসাব করে, বিশ্বাস করে নয়। অথচ এই বিশ্বাস হওয়ার কথা ছিল আমাদের মত সর্বাধিক মুসলিম জনমানুষের দেশের দলগুলোর চরিত্রের একটি অলংকার।

কিন্তু তা হয়নি। কারন, আসলে আমরা মুসলমানিত্বের সেই গুনটুকু কোনভাবেই অর্জন করতে পারিনি। আমরা শুধু কথায় কথায় ৯০% মুসলমানের দেশ বলে নিজেদের জাহির করতে পছন্দ করি। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে মুসলমানিত্ব, যার পুর্ব শর্ত পরহেজগারি -তা ধারন ও লালন করতে অসমর্থ হয়েছি। সমাজে যেই মুরুব্বীরা ধর্মানুরাগী বলে পরিচীত, তারা আসলে এভাবে পরিচীত হতেই পছন্দ করেন।

খুব কম সংখ্যক মানুষ খুজে পাওয়া যাবে যারা এই পরিচয় ছাড়া নিজেদের ধর্ম-কর্ম করে যাওয়ায় মনোনিবেশ করে আছেন। ঠিক এভাবে গড়ে উঠেছে এই সমাজ এবং সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্র। তাই পরহেজগার মুসলমানের সংখ্যা খুব কমই রয়ে গেছে। বেশির ভাগই লেবাসধারী। এই মুসলমানদের নিয়ে একটি মুসলিম রাষ্ট্র দেখার স্বপ্ন যারা দেখেছেন, তারা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বোকামী করছেন আমি বলব।

আবার এই রাষ্ট্র তৈরি করার উপায়ও ছিল সম্পুর্ণরূপে হটকারি। সরকারকে তথা আওয়ামি লীগের মত একটি আত্নবিশ্বাসের স্বল্পতা সম্বলিত (অন্তত পক্ষে বর্তমান সময়ের জন্য) একটি দলকে চিপায় ফেলে অনেকটা ব্ল্যাকমেইল করে তার মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্র গঠন! কতই নির্বুদ্ধিতাপুর্ণ হটকারিতা! আমি কিন্তু বলছি যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং স্বপ্ন দেখে রাস্তায়ও নেমেছিলেন তাদের কথা! হেফাজতিদের কথা নয়! তারাযে কি ছিল এবং কি করতে চেয়েছিল তা ইতিমধ্যেই জাতীর কাছে প্রমান হয়ে গেছে। যাহোক, স্বপ্ন দেখা এই মানুষগুলোও শেষ পর্যন্ত কিন্তু বিশ্বাস রাখতে পারেনি, আর তাই তারা আর নেমে আসেনি রাস্তায়, মধ্যরাতের অভিযানের সময়। কারন, সেই বিশ্বাসের দুর্বলতা! সুতরাং এরকম বিশ্বাসের দুর্বলতা সম্বলিত মুসলমানদের দিয়ে মুসলমানি রাষ্ট্র কায়েমের যে কথা বলা হয় তা সবই ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য পুরণের জন্যই বলা হয়। ধর্মানুভুতি সম্পন্ন স্বল্প ঈমানী মানুষজনকে বলব এ ধরনের আহবানে সাড়া দেয়ার চিন্তা না করে, কিভাবে নিজের বিশ্বাসকে জোরালো করা যায় তার দিকে মনোনিবেশ করতে।

সেটাই হবে সর্বোত্তম পন্থা! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।