আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাতের ঢাকা

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক বইয়ে লিখেছেন- 'এক মেয়ে তার দেহের বিনিময়ে ভালবাসা চাইবে না টাকা নিবে তা একান্তই তার সিদ্ধান্ত'। রাত ১১ টার পর থেকে ঢাকার শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিশিকন্যা'রা জমায়েত হয়। ইচ্ছা করেই নিশিকন্যা বললাম- বেশ্যা বা পতিতা বলতে ইচ্ছা করে না। এদের সাথে থাকার জন্য ৫০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা খরচ হয়। আমি মনে করি প্রতিটা নিশি কন্যার একটা চোখের আলাদা ভাষা আছে।

তারা তো আর চিৎকার করে ডাকবে না- আজ রাতের জন্য আমাকে নাও, আমি অনেক আদর করে দিবো, তার জন্য আমাকে কিছু টাকা দিলেই হবে। মজার ব্যাপার হলো- এই নিশি কন্যারা সমস্ত পুরুষের চোখের ভাষা এক নিমিশেষই বুঝে ফেলে। ‘বড় হয়ে আমি একজন পতিতা হব’- এই বাসনা কি একজন মেয়েরও ছিল? এই সব নিশিকন্যাদের কেউ চাকরী দেয় না। অন্য কোনো উপায় না থাকায় তারা এই পথ বেছে নেয়। তাদের কষ্টের টাকার ভাগ- বেশ কয়েকজনকে দিতে হয়।

আমাদের সমাজ যাদেরকে পতিতা বলে। রবীন্দ্রনাথ তাদেরকে বারবনিতা বলেছেন,যাতে কথাটা শ্রুতি কটূ না লাগে। যারা নাইট ক্লাবে নেচে অর্থ উপার্যন করে তাদেরকে নর্তকি বা বাঈজি বলা হয়ে থাকে। অনেকে এই সব মেয়েদের খারাপ মেয়ে বলে থাকেন। আচ্ছা, এই মেয়ে গুলো যদি খারাপ হয়- তাহলে যে সমস্ত পুরুষ- তাদের কাছে যায় তারা কি ? রাতের আঁধার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকার লালবাতির নিচে শুরু হয় এক অন্যরকম জীবন।

এ যেন নগর জীবনের এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। রাত যত গভীর হয় ব্যস্ত ঢাকার কোলাহল থেমে নীরবতা বাড়তে থাকে। সভ্য মানুষের শহরকে গ্রাস করে নেয় নগ্নতা। রাজধানী ঢাকা ১২-১৮ বছর বয়সী প্রচুর কিশোরী মেয়ে ভাসমান পতিতা। নগরীর বিশেষ কিছু স্পট যেমন- ফার্মগেট, হাইকোর্ট, রমনা পার্ক, শিশুপার্ক প্রভৃতি স্থানে ওদের বিচরণ।

এছাড়াও বিভিন্ন সিনেমা হল, বিমানবন্দর, কমলাপুর রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল এবং ফেরিঘাটে ওদের সবার উপস্থিতি দৃশ্যমান। পাশাপাশি ধানম-ি, বনানী, গুলশান, বারিধারার মতো আবাসিক এলাকাতেও রাতের লালবাতির নিচে আলো-আঁধারীতে ওদের দেখা মেলে। একজন কিশোরী পতিতা প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জনের সঙ্গে মিলিত হয়। দেশে ১৫-২০ হাজারেরও বেশি কিশোরী পতিতা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে কিশোরী পতিতাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য তেমন কোন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেই।

রাজধানী ঢাকায় লালবাতির নিচে অপেক্ষমাণ এ কিশোরীদের অধিকার নিয়ে কারও যেন ভাবার সময় নেই। রাজধানী ঢাকার ৪৯ থানার প্রায় পৌনে ১শ স্পটে ৪ শতাধিক হোটেল ও ২ সহস্রাধিক বাসা-বাড়ী ও ফ্ল্যাটে চলছে জমজমাট দেহ ব্যবসা। ঢাকার নয়াবাজারের ইংলিশ রোডের পতিতা পল্লী তুলে দেয়ার পর রাজধানী জুড়ে বিস্তার লাভ করে পতিতাবৃত্তির এই ব্যবসা। দেশে প্রতিদিন ৭ জন করে এইডস রোগী সনাক্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বা সংস্থার মতে আমাদের দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার।

বারিধারা বনানী ও গুলশান এলাকার দেড় শতাধিক গেষ্ট হাউজে রাতের বেলায় চলে মদ জুয়া ও দেহ ব্যবসা। কাজ হাসিলের জন্য এখানে প্রায় দেয়া হয় ওম্মা ওম্মা নাইট, থার্সডে নাইট ও ককটেল পার্টি। এসব পার্টিতে দেশী-বিদেশী কলগার্লরা অংশ নিয়ে আগত ভিআইপি অতিথিদের মন রাঙিয়ে তুলে। নগরীর ৮৫ ভাগ আবাসিক হোটেলে প্রতিদিন সাড়ে ৭ হাজার খদ্দেরের সমাগম ঘটে। আর এদের যৌনানন্দ দেয়ার জন্য সাড়ে ৫ হাজার ললনা নিজেদেরকে বিলীয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

যৌন ব্যবসায় লিপ্ত থাকা হোটেলগুলোর মাসিক আয় ৬ কোটি টাকা। সামান্য যৌনানন্দের জন্য প্রত্যেক খদ্দরকে ব্যয় করতে হয় ২৫০ টাকা। খদ্দরের দেয়া ২৫০ টাকা তিন ভাগ হয়, হোটেল ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা, ষ্টাফ ফান্ডে জমা রাখা হয় ৫০ টাকা, পতিতা ও দালাল পায় যথাক্রমে ৮০ ও ২০ টাকা। দালাল বিহীন খদ্দর মিললে পতিতার ভাগ্যে জোটে আরো ২০ টাকা। ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণীরা দেহ দান করে।

তাদের ভোগ করতে ১৫ বছরের কিশোর হতে ৭০ বছরের বৃদ্ধ খদ্দর হিসেবে যাতায়াত করে। ঢাকার রাজপথে প্রতি রাতে প্রায় ৫ হাজার ভাসমান পতিতা শতাধিক স্পটে খদ্দর ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মক্ষিরাণীরা খদ্দর সংগ্রহ করে। মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর, পশ্চিমআগানগর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আদাবর, শেখেরটেক, লালবাগ, চকবাজার, কোতোয়ালী, ওয়ারী, সুত্রাপুর, ধানমন্ডী, জিগাতলা, কলাবাগান, শুক্রাবাদ, হাতিরপুল, এলিফ্যান্ট রোড, রায়ের বাজার, মিরপুরের টোলারবাগ, পাইকপাড়া, প্রথম ও দ্বিতীয় কলোনী, ফার্মগেট, তেজকুণী পাড়া, নাখাল পাড়া, মুনিপুরী পাড়া, গ্রীনরোড, ইন্দিরারোড, রাজাবাজার, মগবাজার, মালিবাগ, মানিকনগর, সিদ্ধেশ্বরী, ইস্কাটন, শান্তিনগর, কাকরাইল, বেইলি রোড, পরিবাগ, শান্তিবাগ, মতিঝিল, আরামবাগ, শহীদবাগ, কমলাপুর, গোপীবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাও, বাসাবো, কদমতলা, গোড়ান, শনিরআখড়া, ধলপুর, গোলাপবাগ, ধনিয়া, শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, ইব্রাহীমপুর, কচুক্ষেত, ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বারিধারা, বনানী, নিউডিএইচএস, উত্তরা, কামরাঙ্গীরচর, শহীদনগর, ইসলামবাগ ও হাজারীবাগ। উল্লেখিত স্পটগুলোর হোটেল, বাসাবাড়ী ও ফ্লাটে চলছে জমজমাট দেহব্যবসা।

গার্মেন্টস কর্মী, গ্রামের সহজ সরল মেয়ে, দরিদ্র ও অর্থ লোভী মেয়েদের টার্গেট করে দালালদের মাধ্যমে প্রতারণা করে তাদেরকে নিয়ে দেহব্যবসা চালানো হচ্ছে। নারী পতিতা হয় কেন?অর্থাভাবে বা দারিদ্র্যতাবশতঃ অনেক সময়ে মেয়েরা পতিতা বৃত্তি গ্রহণ করে। সংসারের অনাদর বা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পতিতা বৃত্তি গ্রহণ করে। স্বামীর অনাদর অত্যাচারও এ পথে যাবার মস্ত বড় একটি কারণ। অতিরিক্ত বিলাসের প্রতি আকর্ষণ।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য শিক্ষকদের শরনাপন্ন হন এবং তাদেরই পরামর্শে তাদের এ কাজে বাধ্য হয়। মিডিয়াতে জড়িয়ে পরা মেয়েরা এক সময় পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এই পেশায় আসে। বিভিন্ন অফিসে পারসোনাল সেক্রেটারী নামে র্করপোরেট পতিতা রাখা হয়। এরা সোসাইটি র্গাল হিসেবে পরিচিত। আগের দিনে রাজারা একাধিক স্ত্রীর পাশাপাশি রক্ষিতা রাখতো।

এছাড়া তাদের রংমহলে নিয়মিত বাইজির উপস্থিতি থাকতো। রক্ষিতা ও বাইজিদেরকে রাজারা ভোগ করলেও তারা কোন রাস্ট্রীয় মর্যাদা পেত না। কেননা তাদের কে জোর করে রক্ষিতা ও বাইজি বানিয়ে রাখা হতো। পৃথিবীর আদিমতম ব্যবসা হল পতিতাবৃত্তি। একসময় ধর্মের ছত্রছায়ায় এই পতিতা বৃত্তিকে বাধ্য করা হেতো।

View this link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০০৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।