আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজব দেশে বসবাস করছি,দুর্নীতি করবে সরকার, বহন করবে জনগণ!

আমরা সব কিছু বুঝি ঠিকই, কিন্তু করতে পারি না! এক আজব দেশে বসবাস করছি আমরা, যেখানে মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতি করেন আর তার দায়ভার বহন করতে হয় জনগণকে। এমন সব মন্ত্রী-এমপি নিয়ে এই দেশ চলছে, যাদের নিয়ে আমরা সাধারণ জনগণ লজ্জিত, কিন্তু তাদের কোনো লজ্জা নেই। তারা নির্দ্বিধায় দুর্নীতি করে যান এবং সেটা প্রকাশ পাওয়ার পর আবার সগৌরবে নিজ পদে বহাল থাকেন। এমনকি ওই চেহারা নিয়ে জাতির সামনে আবার বড় বড় কথাও বলেন। আর তাদের দলপতিও কেমন করে তাদের পক্ষে কথা বলেন, সেটাই আশ্চর্যের বিষয়।

‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’—এখন আসলে ছোটবেলার ওইসব প্রবাদ মনে পড়ে যাচ্ছে। তখন প্রবাদগুলোর মর্মার্থ এইভাবে বুঝতাম না। তারপরও মুখস্থ করে যেতাম। আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়বেন, আর তার মাশুল দিতে হবে আমাদের!!! আমরা কি আপনাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছি আমাদের শোষণ করার জন্য? সেবা না করেন, শোষণ তো করতে পারেন না। সে ম্যান্ডেট জনগণ আপনাদের দেয়নি।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এমপিদের দুর্নীতি তদন্ত করছেন না এবং সত্যও প্রকাশ করছেন না। তিনি নিজেই এমপিদের বিশুদ্ধতার সার্টিফিকেট দিয়ে দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন—দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ জনগণের অবস্থা যেখানে খুবই করুণ, সেখানে আপনি পদ্মা সেতু নির্মাণে নিজস্ব অর্থায়নের কথা বলে চাঁদা তুলে মানুষের জীবনকে আর কত দুর্বিষহ করে তুলবেন? ১০ জুলাই ঢাকায় শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনি বলেছেন, ‘স্বনির্ভর বালাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আর ভিক্ষা চাওয়া নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব। ’ আপনার কাছে আমার প্রশ্ন—নিজের পায়ে কুড়াল মেরে কীভাবে আপনি দাঁড়াবেন? দাতাগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আপনি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়বেন বলেছেন।

স্বাধীনতার এই পর্যন্ত বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্পের কোনটি আমরা দাতাগোষ্ঠী ছাড়া করতে পেরেছি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে অনুরোধ, আগে আপনার মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তারপর জনগণ তাদের ঘামের ঝরানো কষ্টের টাকা দিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। আমাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচিত হয়ে গেলে নিজেদের রাজা মনে করেন, যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে তারা! তবে তাদের ঊর্ধ্বে ভাবার একটাই কারণ—আমাদের দেশের মন্ত্রীরা দুর্নীতি করার পরও তাদের কোনো বিচার হয় না। এমনকি তাদের জবাবদিহিও করতে হয় না। আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের ব্যাপারে সবকিছুতেই একটু ভিন্নতা দেখা যায়।

আমরা সাধারণ জনগণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকি। অথচ আমাদের এমপিরা যখন যাতায়াত করেন, তখন সব দিকের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়, শুধু তারা যে পথ দিয়ে যাবেন সে পথ ছাড়া। তারপর আমাদের মন্ত্রীরা পতাকা উড়িয়ে সামনে-পেছনে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যান। বাহ! কী রাজার হালেই না বসবাস করছেন তারা! এমনকি রাস্তার পাশে সাধারণ জনগণ দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং ঢাকা শহরে যানজট থাকলেই বা তাদের কি! অথচ আমাদের সাধারণ জনগণের গন্তব্যে পৌঁছতে আধা ঘণ্টার পথ দুই ঘণ্টায় শেষ হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ভাবনা বাদ দিয়ে জনগণের কথা ভাবুন। কারণ এই জনগণই আপনার ক্ষমতার উত্স। যতই ফন্দি করুন জনগণকে বাদ দিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। আর তাই আগে আপনার মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির তদন্ত করুন এবং তা জনগণের সামনে প্রকাশ করুন। এরপর এমন দশটা পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য টাকা দিতে আমাদের সাধারণ জনগণের একটুও কষ্ট হবে না।

জনগণ সত্য জানতে চায়। তাদের সত্যটা জানতে দিন। ছোটবেলায় আমরা সমস্বরে গেয়েছি, ‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয় একদিন...’, কিন্তু এখন আর এই গানটা গাইতে ইচ্ছে করে না। যে দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, সে দেশের নাগরিক হয়ে কীভাবে আমরা জয় করব। সব ক্ষেত্রে পরাজয় যেন আমাদের ওপর জেঁকে বসেছে।

আমাদের আগামী প্রজন্ম কি পারবে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে? তারা কি পারবে বিশ্বের দরবারে আমাদের অবনমিত শিরকে তুলে ধরতে? আমরা আবার মাথা উঁচু করে সমস্বরে বলতে চাই, ‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয় একদিন। ’ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।