আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকবর দ্য গ্রেটঃ মুঘল সম্রাট ও তাঁদের সাম্রাজ্য- পর্ব ৩

ঃঃঃঃ চল বহুদূরে...নির্জনে আড়ালে লুকোই...ঃঃঃ মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট মোগল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক আব্দুল-ফথ জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর পিতা ২য় মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের পলাতক জীবনে ২৩ নভেম্বর ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশের অমরকোট নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর মাত্র ১৪ বছর বয়সে সম্রাট হুমায়ুনের বিশ্বস্ত সেনাপতি বৈরাম খাঁ তত্বাবধানে ১৫৫৬ সালে আকবর সিংহাসনে বসেন পরবর্তীতে ১৫৬০ সালের দিকে তাঁর আঠারো বছর বয়সে বৈরাম খাঁ বিদ্রোহী হলে তাকে পরাজিত করে আকবর নিজের হাতে রাজ্য শাসনের ভার গ্রহণ করেন এবং বৈরাম খাঁকে মক্কায় হজ পালনের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে সম্রাট আকবর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আছেন। আকবর দ্য গ্রেট আকবর দ্য গ্রেট পেন্সিল স্কেচ আকবর যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। হুমায়ুন মৃত্যুর আগে কেবল পাঞ্জাব, আগ্রা ও দিল্লি উদ্ধার করে গিয়েছিলেন, কিন্তু সাম্রাজ্য সুসংহত করে যেতে পারেননি।

অভিভাবক বৈরাম খাঁর সহযোগিতায় আকবর সব বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন। সব বিশৃঙ্খলা দমন করে আকবর রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। গুজরাট, বাংলা, বিহার, কাশ্মীর ও কাবুল জয় করার পর তিনি দাক্ষিণাত্য আক্রমণ করেন। তার রাজ্য উত্তরে হিমালয়, পশ্চিমে কান্দাহার, দক্ষিণে বেরার এবং পূর্বে বঙ্গদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সম্রাট আকবরের রাজধানী আকবরের শাসনামলেই ঐতিহাসিক ২য় পানিপথের যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

আফগান নেতা আদিল শাহের সেনাপতি হিমু ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি আক্রমণ করলে সেনাপতি বৈরাম খাঁর নেতৃত্বে মোগল সৈন্যরা পানিপথ প্রান্তরে হিমুকে পরাজিত ও নিহত করেন। ইতিহাসে এ যুদ্ধ দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ নামে পরিচিত। সম্রাট আকবর তাঁর শাসনামলে বেশিরভাগ সময়ে তাকে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকতে হয়েছে। আকবর একজন সুশাসকও ছিলেন। রাজ্য শাসনের জন্য আকবর আমলাতন্ত্র চালু করেন এবং প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্বশাসন দান করেন।

আকবরের আমলাতন্ত্র বিশ্বের সবথেকে ফলপ্রসু আমলাতন্ত্রের মধ্যে অন্যতম। তিনি প্রত্যেক অঞ্চলে সামরিক শাসক নিয়োগ দেন। প্রত্যেক শাসক তার প্রদেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিল। ক্ষমতার অপব্যবহারের শাস্তি ছিল একমাত্র মৃত্যুদন্ড। তিনি তার সাম্রাজ্যকে ১৫টি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করেন।

তিনি জায়গীর প্রথা বিলোপ করেন এবং সব জমি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে পরিণত করেন। শাসন ব্যবস্থায় ও সামাজিক ক্ষেত্রে আকবর অনেক সংস্কার সাধন করে গেছেন। তিনি যুদ্ধবন্দিদের দাস-প্রথা বিলোপ করেন। ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুদের ওপর থেকে জিজিয়া কর তুলে নেন। আকবর সতীদাহ প্রথার বিরোধী ছিলেন।

'ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো নারীকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা যাবে না' এ মর্মে তিনি এক আদেশ জারি করে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি বাল্যবিয়ে বন্ধ ও বিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষপাতী ছিলেন। আকবরের নবরত্ন সভা গঠন করেছিলেন। সভাসদদের মধ্যে নবরত্ন হিসেবে যারা ইতিহাসখ্যাত হয়ে আছেন তারা হলেন রাজা টোডরমল, তানসেন, বীরবল, আবুল ফজল। সম্রাট আকবরের আমলে ব্যবহৃত মুদ্রা আকবর তার নিজস্ব ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দীন-ই-ইলাহি নামক ধর্ম চালু করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু এ ধর্মমত বিশেষ কেউ গ্রহণ করেননি। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্যই তিনি এ ধর্মমত প্রচার করেন। রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে আকবর হিন্দুদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। রাজস্ব সচিব রাজা টোডরমল এবং সেনাপতি রাজা মানসিংহ তাদের অন্যতম। সম্রাট আকবর সাহিত্য ও শিল্পের অনুরাগী ছিলেন।

বিখ্যাত পণ্ডিত আবুল ফজল এবং সঙ্গীতজ্ঞ মিঞা তানসেন তার সভাসদ ছিলেন। তার রাজত্বকালেই বিখ্যাত হিন্দি কবি তুলসীদাস হিন্দি ভাষায় রামায়ণ রচনা করেছিলেন। তার সভাসদ ও বন্ধু আবুল ফজল রচিত ‘আকবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরী’ আকবরের জীবন ও শাসন সম্পর্কে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত। সাম্রাজ্যের রাজপুতদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার স্বার্থে আকবর বিভিন্ন রাজবংশের রাজকন্যাদের বিয়ে করেন। শোনা যায় তিনি ৩০ টির মত বিয়ে করেছেন, তবে তার স্ত্রীদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হলেন মরিয়ম-উয-জামানী ওরফে যোঁধা বাঈ।

যোঁধা বাঈ ছিলেন রাজাস্থানের রাজপুত ঘারানার রাজা ভারমালের একমাত্র কন্যা। তাঁর ৬ ছেলে আর ৬ মেয়ে ছিল এবং পরবর্তী সম্রাট জাহাঙ্গীর অন্যতম। সম্রাট আকবর এবং যোধা বাঈ সম্রাট আকবর প্রায় ৫০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। ৩রা অক্টোবর ১৬০৫ সম্রাট আকবর আমাশয় রোগে শয্যাশায়ী হন। তিনি আর সুস্থ হয়ে ওঠেন নি।

৬৩ বছর বয়সে ২৭শে অক্টোবর ১৬০৫ সালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। আগ্রার অদূরে সেকেন্দ্রা নামক স্থানে আকবরের সমাধি রয়েছে। আগ্রার অদূরে সেকেন্দ্রা নামক স্থানে এই মহান সম্রাটকে সমাহতি করা হয়। সম্রাট আকবরের সমাধি সম্রাট আকবরের সমাধিসৌধ প্রথম পর্বঃ Click This Link দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Akbar ও অন্যান্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.