আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

WWF রেসলিং , স্মৃতিকথা আর শরীর গঠনের নিয়মকানুন। কিস্তি-২

নুতন পুরাতন সব লেখাতেই আপনার মন্তব্য প্রত্যাশিত। প্রথমেই ক্ষমা প্রার্থী। প্রথম পর্ব দেবার পর নানা কারনে আর আগাতে পারিনি। অনেক ইমেইল এসে জমা হয়েছে দিনের পর দিন ইনবক্সে। কথা না বাড়িয়ে কাজের কথা শুরু করি।

১। পেশীর স্ফীতি আসলে কি? একগুচ্ছ মাসল-ফাইবার বা সুতো একত্রিত হয়ে তৈরী করে মাসল বা পেশী। যেমন আমাদের বাইসেপ্স মাসলে আনুমানিক চারলক্ষ ফাইবার আছে। হতে পারে এর থেকে কম বা বেশী। প্রশ্ন হলো এই বাইসেপ্স যখন নিয়মিত ওয়ার্ক আউট করার পর ফুলে ফেঁপে স্ফীত হয়ে উঠে তখন আসলে মাসলের ভেতরের পরিবর্তনটা কোথায় হয়।

এই অতিরিক্ত ভলিউমটা কিভাবে আসে? এই অতিরিক্ত ভলিয়ুম আসে প্রতিটি ফাইবারের ইন্ডিভিজুয়্যাল ক্রস সেকশান বৃদ্ধির ফলে। ক্রস সেকশান বৃদ্ধি মানে পেশীর প্রতিটি সুতো ওয়ার্ক আউটের ফলে মোটা হয়ে উঠে,ফলশ্রুতিতে তাদের সমষ্ঠিগত সম্মিলনের ফলে সৃষ্ট পেশীর আয়তন বৃদ্ধি পায়। পেশীকে পাকানো রশির মতো ভাবলে বোঝাটা সহজ হয় । পাকানো রশির প্রতিটা সুতা মোটা হয়ে উঠা মানে পাকানো রশি মোটা হয়ে উঠা। পরীক্ষায় দেখা গেছে মাসল সৃষ্টিকারী সুতোর সংখ্যা এখানে খুব একটা প্রভাব ফেলেনা।

নাসিরের বাইসেপ্স জলিলের দুইগুন মানে নাসিরের বাইসেপ্সে জলিলের থেকে দুইগুন মাসল ফাইবার বা সুতো আছে, ব্যাপারটা এরকম না মোটেই। হয়ত কমবেশী দুজনেরই বাইসেপ্সে সমান সংখ্যক ফাইবার আছে, কিংবা নাসিরের কিছু কম আছে, কিন্তু নাসিরের বাইসেপ্সের অতিরিক্ত যে ভলিউম সেটা প্রধানত এসেছে তার মাসল ফাইবারের অতিরিক্ত ক্রসসেকশনাল এরিয়া থেকে। সোজা কথায় নাসিরের বাইসেপ্স গঠন কারী ফাইবার বা সুতো গুলো জলিলের থেকে মোটা। তাহলে মাসল বিল্ডআপ,সে যে কোন জায়গার মাসলই হো্‌ক, মানেই হচ্ছে সেই মাসল গঠনকারী ফাইবার গুলোর ক্রসসেকশানাল এরিয়া বাড়ানো। ২।

ওকে। তাহলে মাসল ফাইবারের ক্রসসেকশন বাড়ানো যায় কিভাবে? সেই মাসলকে অনবরত খাটিয়ে? না। যদি তাই হতো তাহলে প্রতিটা রিকশাচালকের পায়ের মাসল গুলো হয়ে উঠতো শিল্পী এস এম সুলতানের হাতে আঁকা । যারা ১০০ বা ৪০০ মিটারের সোনাজয়ী তাদের পায়ের মাসলগুলো খেয়াল করেছেন। সেগুলি বলিষ্ঠ ঠিকই কিন্তু খুব স্ফীত না।

কারন তাদের মূলত দরকার ইন্সট্যন্ট পাওয়ার, দ্রুত এক্সিলারেশন মানে স্থির অবস্থা থেকে খুব দ্রুত স্পীড তোলার ক্ষমতা, ভাইটাল ক্যাপাসিটি, দীর্ঘক্ষন শরীরকে টেনে নেবার বা দৌড়ানোর সক্ষমতা। স্ফীত মাসলের সঙ্গে এগুলির কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই। বরং স্ফীত বা ভারী মাসল এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই তাদের ট্রেনিং এর কসরত আলাদা। তাহলে মাসল স্ফীত করার তরিকাটা কি? আগেই বলেছি, স্ফীত পেশী মানে মোটা সুতোয় বানানো পেশী।

আসলে সুতো মোটা করার মাজেজাটা হচ্ছে শরীর বা সিস্টেমকে পিরিওডিক্যালি সিগন্যাল দেয়া। কি সিগ্ন্যাল দেয়া? এই বলে সিগ্ন্যাল দেয়া যে, এই বিশেষ পেশীর ফাইবারের যে ক্রসসেকশান, সেটা এখন তার বর্তমান কাজের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। ইদানিং হর হামেশাই অনেক বড় বড় প্রেশার এই ফাইবার গুলোকে নিতে হচ্ছে। যে পরিমান চাপ বা স্ট্রেস স্ট্রেইন এখন নিতে হচ্ছে তার জন্য ফাইবার গুলো যথেষ্ট পরিমান মোটা কর, নইলে বিপদ। মানে সোজা কথায় দড়ি মোটা কর নাহলে এটা আর লোড নিতে পারছেনা, মাঝে মাঝে ফাইবার ছিঁড়ে যাচ্ছে।

এই সিগ্ন্যাল যদি আপনি আপনার সিস্টেমে পিরিওডিক্যালি পৌঁছে দিতে পারেন, আর সে সঙ্গে বুঝিয়ে দিতে পারেন যে কি পরিমান লোড নেয়ার মত সক্ষম সুতো তাকে তৈরী করতে হবে তাহলেই ৬০% কাজ শেষ। তো এই সিগন্যাল দেয়ার যে পদ্ধতি বা খেলা, বডি বিল্ডিং এর ভাষায় এর নাম ওয়ার্ক আউট। ৩। ওয়ার্ক আউটের বহুল ব্যবহৃত দুটি শব্দ। সেট অ্যান্ড রেপ।

ধরেন আপনি আপনার থাইয়ের বিশেষ কিছু মাসল বিল্ডাপ করতে মনস্থ করলেন। আপনার ট্রেইনার বলল যে এই মাসলের জন্য এই ওয়েটলিফট পদ্ধতি হবে ৫ সেট ৬ রেপ ( রিপিটেশন)। মানে হচ্ছে আপনাকে এই এক্সারসাইজটা ৫ বার ( সেট) করতে হবে প্রতিবারে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে। আর প্রতি সেটে এইটার রিপিটেশন হবে ৬। আরো সোজা করে বলি।

আপনি ধরেন ঘাড়ে ২০ কেজি ওজন নিয়ে উঠা বসা করার নির্দেশ পেলেন পায়ের বিশেষ কিছু মাসলের জন্য। ইন্সট্রাক্টর বলল সপ্তাহে ৩ দিন, ৫ সেট ৬ রেপ। চলতে থাকুক ৪ সপ্তাহ। মানে আপনাকে সপ্তাহে তিন দিন এই এক্সারসাইজটা করতে হবে। যেদিন করবেন মাঝে যথেষ্ট পরিমান বিশ্রাম নিয়ে মোট ৫ বার।

আর প্রতি বারে একনাগাড়ে ৬ বার করে উঠবোস। চলবে ৪ সপ্তাহ, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত। ৪। আচ্ছা এই যে শুনি সপ্তাহে মাত্র তিনচার বার তাও আবার কয়েকবার করে, এ দিয়ে কি আসলেই মাসল স্ফীত হয়? এক্কেবারে অনেকের মনের কথা। আমাদের বাই ডিফল্ট ধারনা।

এগুলোকে আমি বলি সমাজের রেডিমেড চিন্তা। প্রচলিত ধারনা যে আচ্ছা মতো কষে শরীরকে যথেষ্ট পরিমান কষ্ট দিয়ে সপ্তাহে ৭ থেকে ১০ বার যদি এক্সারসাইজ না করি, সকাল বিকাল যদি আধকেজি ভিজানো ছোলা খেয়ে ১০ কিলোমিটার দৌড় না দিই, দিনে যদি ৫ খানা ডিম না খায় তবে কিসের আবার স্বাস্থ্য। যতো কষ্ট তত লাভ। একেবারেই ভুল ধারনা। একশন মার্কা ইংলিশ মুভিতে দেখানো বস্তা পচা সব বুঝ।

এরকম বুঝ যদি থেকে থাকে, ধুয়ে মুঝে পরিস্কার করে ফেলার সময় এখনই। আগেই বলেছি পেশী স্ফীত করার প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে শরীরকে বা সিস্টেমকে সঠিক সিগ্ন্যাল দেয়া, এটাই কাজের প্রায় ৬০ থেকে ৭০%। এবার দেখবো এফিশিয়েন্টলি সিগন্যাল দেয়া মানে সঠিক ভাবে ওয়ার্ক আউট করার পদ্ধতি কি। সামনে পর্বে এটা নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা আছে। যেন তেন ভাবে এই পর্বে শেষ করতে চাইনা।

অনেক কিছু বলার আছে, কিছু সতর্কতা মানার আছে, অনেক মিথ ভাঙ্গার আছে। এই বিষয়ে একটা স্বচ্ছ ধারনা পাঠকের মনে যেন তৈরী করতে পারি সেটার একটা তাড়না আমি বোধ করছি। সময় লাগলে লাগুক, কিন্ত কনসেপ্ট হতে হবে পরিস্কার । কথা দিচ্ছি তাড়াতাড়িই ফিরে আসব। তবে একটা কথা স্মোকিং বাদ, নো ড্রাগস।

আর না পারলে এই পোস্টে আশার দরকার নাই। জীবন একটাই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।