আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য । রোধ করতে না পারলে স্বাস্থ্যখাতে চরম বিপর্যায় এড়ানো যাবে না ।

গ্রীষ্মের মৌসুমি ফল কার না প্রিয়। কিন্তু জানি কি? কি বিষ আছে এর সাথে। বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ফরমালিন মিশ্রিত। স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক কার্বাইড, ফরমালিনসহ নানা রাসায়নিক দ্রব্য ফলে প্রয়োগ করা হয় ফল পাকাতে ও পচনরোধ করতে। সবাই এটা দেখছে কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কিছুই বলছেন না।

আম, আপেল, আঙুরসহ বিভিন্ন ফল ফরমালিন ও কার্বাইড দিয়ে মাসের পর মাস রেখে বাজারজাত করছে একশ্রেণীর অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী। মানবদেহে ক্যানসারবাহী এই বিষাক্ত কেমিক্যাল। সামান্য বেশি লাভের জন্য এই ব্যবসায়ীরা আইন-কানুন, নৈতিকতা কোনোকিছুরই তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণঘাতী এই অপকর্ম। শুধু ফলমূলই নয় মাছ, মাংস, শাকসবজি, দুধ, সব পচনশীল খাদ্যদ্রব্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যেন এসব এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

এতে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী লাভবান হলেও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত ফলমূলসহ খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার ফলে দেশে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি বাড়ছে বলে জানান বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। তাঁরা বলেন, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও দীর্ঘমেয়াদে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক যকৃৎ বা লিভারকে সম্পূর্ণ অকেজো করে দিতে পারে। কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গেও এর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। তাই শুধু ফল নয়, সব ধরনের খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভেজাল মেশানো রোধ করা সুস্থ ও সক্ষম জাতি গঠনের জন্যও অপরিহার্য।

কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল কিংবা খাবার খেলে ব্লাড ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সারসহ দেহের যে কোনো স্থানে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। সরকার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তব্যক্তিরাও জানে এই বিষ মেশানোর কাজ। কিন্তু কারো সেদিকে নজর নেই। যারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তারাও এই বিষ খাচ্ছেন। তারপরও নেয়া হচ্ছে না কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে লেখালেখি হলে কালেভদ্রে অভিযান চলে। কিন্তু অভিযানে ধারাবহিকতা না থাকায় এবং এ সংক্রান্ত আইন দুর্বল হওয়ায় বিষমেশানো ফল বিক্রেতা চক্র এই সব কুকর্ম করে যাচ্ছেন। দেশের একটি বড় অংকের মানুষ ক্যান্সার, লিভার, কিডনি নষ্টের মতো ভয়াবহ স্বাস্থ্য দুর্যোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি খাদ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত একটি বুলেটিনে ফরমালিন মেশানো ফল খেয়ে মানবদেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার এ ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। বুলেটিনে শুধু ফল নয় কাঁচা শাকসবব্জীতে ফরমালিন মেশানোর কথা বলা হয়েছে।

এক কথায় এখন রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত ছাড়া কোনো ফল বা তরিতরকারি বাজারে নেই। ২০১০ সালের ১১ মে ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর অধীনে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রাসায়নিকযুক্ত ফল বিক্রি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আদালত কয়েক দফা নির্দেশনা দেন। সকল ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেয়ার নির্দেশও দেন আদালত। আদালতের এই আদেশ জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যুগান্তকারী নিঃসন্দেহে।

জানা যায়, বাগান থেকে পাড়ার পর আমে ৫ বারেরও বেশি রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। আম পাকার পর তা যেন পচে না যায় ও রং ভালো হয় এজন্য নিয়মিত স্প্রে করা হচ্ছে ফরমালিন। রাতে আমের দোকান বন্ধ করার আগে ফরমালিন স্প্রে করে রাখা হচ্ছে। ফলে ভোরে ওই আমের রাসায়নিক পরীক্ষা করা হলেও ফরমালিনের উপস্থিতি ধরা পড়ছে না। তাছাড়া ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশানো আম উচ্চ তাপমাত্রায় রাখা হলে ক্যালসিয়াম সায়ানাইড তৈরি হতে পারে।

এ বিষাক্ত আম খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নভাবে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এ প্রবণতা যে বন্ধ হয়নি তার প্রমাণ আমরা এখনো দেখছি। আদালতের আদেশে বর্ণিত পন্থায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থা গ্রহণের বন্দোবস্ত না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীদের দমানো যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ফলমূল ও খাদ্যপণ্যে রাসায়নিক প্রয়োগ রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সমন্বিত ও আন্তরিক উদ্যোগ দরকার। দরকার রাসায়নিক মেশানো খাদ্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধিও।

এছাড়া মৌসুমি ফলভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন উৎসাহিত করাও প্রয়োজন। এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান বাড়লে ব্যবসায়ীদের খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য রাসায়নিক দিয়ে দীর্ঘদিন ফল সংরক্ষণের প্রবণতা কমতো। এ বিষয়ে বিএসটিআইকে আরও তৎপর হতে হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।