আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

০৭- ০৭- ০৭ইং তারিখটা নাকি লাকি সেভেন ডে ছিল...

ভালবাসি ঘুরে- বেড়াতে, তাই বার বার ফিরে যাই প্রকৃতির কাছে... মানুষ মানেই এক অদ্ভুত প্রজাতি। আর আমরা কয়েক বন্ধু মনে হয় আরো অদ্ভূত...সাধারনত সবাই যা স্বেচ্ছায় করে না বা মনে রাখে না সেটা আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে মনে রেখে নিয়ম মত করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় সবসময় আঠার মতো সাথে লেগে থাকা জিগরী দোস্ত সোহেল আমাকে আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে ০৭/ ০৭/ ০৭ ইং তারিখে সকালে বলল, "দোস্ত আজকে তো লাকি সেভেন ডে ( তারিখের সবগুলো অঙ্ক ০৭ হওয়ায়) ....চল্ আমরা আজকের দিনটাকে মনে রাখার জন্য কিছু একটা করি। " মাথায় এমনিতেই সবসময় থাকে কি করি, কি করি ভাব...এই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে পারি!! তো বেশ কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে আমরা দুজন ওয়ারিদের (বর্তমান এয়ারটেল) সীম কিনে দিনটাকে স্মরনীয় করার সিদ্ধান্ত নেই। যদিও আমাদের দুজনের কারোই মোবাইল ছিল না তবুও যেই ভাবা সেই কাজ, মানে পাগলামী যাকে বলে আর কি...তো বাসা থেকে বের হয়ে একটু ঘোরাফেরা করে দোকানে যাই।

আর ওদিক থেকে সোহেল ক্লাস পালিয়ে আমার সাথে যোগ দেয়। খুশি মনে সীম কিনে ফেরার পথে হঠাৎ দেখা হয় জেদ্দার সাথে। একদম ছোটবেলার বন্ধু যাকে বলে ন্যাংটা কালের ফ্রেন্ড। জন্মের পর থেকেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব কারন আমরা পাশাপাশি ফ্ল্যাটেই আমাদের শৈশব পার করেছি। কতদিন যে আমাদের সাথে খেলতে গিয়ে বাসায় দেরীতে ফেরার জন্য ও ওর আম্মুর হাতে বেদম মার খেত...যদিও আমরা বেচেঁ যেতাম আমাদের আম্মুদের হাত থেকে, প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে তিনজন একসাথে ভাত না খেলে আমাদের চলতই না...যার সাথেই যে ঝগড়া করতাম অপরজনের কাছে তার সমাধান আমাদের করতেই হত...সন্ধ্যার পর যার যার আম্মুর হাত ধরে রাস্তায় হাঁটা, ঈদের চাঁদ দেখে খুশিতে আত্মহারা আমাদের একসাথে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করা....কত স্মৃতি....এক কথায়, দু কথায় বলে শেষ করা যাবে না......এরপর আব্বুর ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ায় ওর সাথে আমার বেশ দুরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়।

তখন তো আর বর্তমানের মতো মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার ছিল না। এরপর বলতে গেলে আমাদের হারিয়েই যাওয়া.... যাই হোক ওর সাথে বহুদিন পর দেখা হওয়ায় অনেক কথা বলতে বলতে আমরা তিনজন হাটতে থাকি। এরই মধ্যে হঠাৎ আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে। আমরা কোথাও দাঁড়াই না। মজা করে ভিজতে থাকি।

কতদিন পর যে এত আনন্দ নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তা মনে নেই। এরপর জেদ্দা বিদায় নিয়ে চলে যায় আর আমি ও সোহেল বাসায় ফিরি। লাকি সেভেন ডে- টাকে বেশ ভালভাবেই উপভোগ করি আমরা। এরপর জেদ্দার সাথে অনেক দিন দেখা হয় না। মাস কয়েক পরে এক ঈদের দিন সন্ধ্যায় আরেক ফ্রেন্ড পিয়াস ফোন করে বলে "জেদ্দা আর নেই।

ও নাকি না ফেরার দেশে চলে গেছে.....। " শুনে বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার। কেন জানি পা- টাকে স্থির রাখতে পারছিলাম না। পরে শুনেছি শখ করে নাকি গ্রামের বাড়িতে ঈদের দিন সকালে কাজিনদের সাথে গোসল করতে পুকুরে নেমেছিল। সাঁতার জানত না ও।

সবাই যখন মজা করছে এরই এক ফাকে কখন যেন পানিতে নেমে ডুবে যায়। সবাই যখন খেয়াল করল ওর কথা, ততক্ষনে ও চলে গেছে বহুদুর। যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না। ওর মারা যাওয়ার তারিখটা আমার মনে নেই। মনে রাখার চেষ্টাও করি নি আমি কখনও।

কিন্তু ওই যে লাকি সেভেন ডে......। জুলাই মাসের সাত তারিখ এলেই কেন জানি মনে হয় ও এখন কোথায় আছে, কেমন আছে....। একই বয়সের তো আমরা। এই বয়সেই ও কতটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলল। লাকি সেভেন(!) ডে- টা যে এভাবে স্মরনীয় হয়ে থাকবে এটা কখনই প্রত্যাশা করি নি আমি...যেখানেই থাকো বন্ধু, আল্লাহ যেন তোমায় সুখে রাখেন, ভালো রাখেন.... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।